ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশে অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে বিএনপির বড় বড় ব্যবসায়ীরা জড়িত’-মিডনাইট হাসিনা সরকারের একজন মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি যদি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনই করতে পারে, তবে ওনারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় আছেন কেন?অবিলম্বে ক্ষমতা বিএনপির হাতে ছেড়ে দিক।’
রোববার ঠাকুরগাঁও শহরের তাতীঁপাড়া নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিব একথা বলেন।
গত বুধবার তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঠাকুরগাঁওয়ে দলীয় সভায় অংশ নিয়ে বলেছিলেন, দেশের বড় ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ বিএনপি সমর্থক। তারা বিএনপির ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পণ্য মজুদ করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করেন। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেও হুশিয়ারি দেন মন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করে তার বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল আজ ঠাকুরগাঁও তার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ঠাকুরগাঁওয়ে এসে আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী বলেছেন- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে নাকি বিএনপি জড়িত। আমি তো কোনো দিন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না, শিক্ষকতা করেছি। তাহলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন করে হবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) জামানায় বিএনপি যদি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে- তাহলে ওনারা সরকারে কেন আছে? ক্ষমতা বিএনপির হাতে ছেড়ে দিক। এ ধরণের কথা বলার অর্থ হলো তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ। এ কারণে হাস্যকর বক্তৃতা করছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা।’
বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না দেশের জনগণ- এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যেভাবে বাড়ছে- এতে সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ অবস্থায় নিম্ন আয়ের শুধু নয়, মধ্যবিত্তরাও অসহায় হয়ে পড়েছেন। এসবের জন্য সরকারের উদাসীনতা ও চরম ব্যর্থতা দায়ী।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘অবৈধ এই সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে, তামাশাও শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছে না মানুষ। তাই তারা উদ্ভট কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।’
ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার যেহেতু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাদের চরম ব্যর্থতার কারণে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার টিকে আছে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। কাজেই তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে অন্যায়ভাবে। বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলার সমস্ত বাহিনীগুলোকে দলীয় বাহিনীতে রূপান্তর করছে এই সরকার।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে এমন বাজেভাবে ব্যবহার করছে। ফলে আজ যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা হলো- আজকে ভিন্নমত যারা পোষণ করছে, জনগণের পক্ষে কথা বলছে, তাদেরকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। নিজেদের প্রয়োজনে সরকার বিভিন্ন আইন তৈরি করেছে। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে যেন কথা বলতে না পারেন, লিখতে না পারেন- সেজন্য বেশ কিছু আইন বানিয়েছে সরকার। ৬শর মতো সংবাদকর্মীকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ২শর মতো সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘এবার সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত কথাবার্তাকেও নিয়ন্ত্রণ করছে বর্বর সরকার। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে সরকার সাধারণ মানুষের মানবাধিকারসহ বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সংবিধানকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে, জনসাধারণের অধিকারকে বঞ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার, যেটা অতীতে করেছিল।’
রাশিয়ার আগ্রাসন প্রসঙ্গে তিনি নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করাই মানবাধিকার লঙ্ঘন করার সামিল। এই যুদ্ধ বন্ধ করতে জাতিসংঘের ইফেক্টিভ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে এই সরকার কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। সরকার সব সময় নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলছে।’
এ সময় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গারা প্রায় ৫ বছর ধরে শরণার্থী হিসেবে থাকলেও তাদের প্রত্যাবর্তনে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি ব্যর্থ সরকার। এমনকি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটা নিন্দাও জানায়নি।’
মতবিনিময়কালে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, মুক্তিযোদ্ধা নূর করিম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান পয়গাম আলীসহ বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।