ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিপুল লোকসানের সম্ভাবনা মাথায় নিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট। আগামীকাল ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট উদ্বোধন করা হবে। তবে নিয়মিত শিডিউল ফ্লাইট শুরু হবে জুন মাসে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনাগাঁওয়ে ঢাকা-টরন্টো ফ্লাইট চালু নিয়ে ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশন, বিমান মন্ত্রণালয় ও বিমান এক মিট দ্য প্রেসের আয়োজন করে।
ফ্লাইট শুরু হলেও আদৌ এই রুটটি লাভজনক হবে কি না- রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থাটির পরিচালক (করপোরেট প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং) এয়ার কমোডর (অব.) মাহবুব জাহান খানের কাছে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি মাইক ঠেলে দেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর কাছে। বিমান প্রতিমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, শুরুতে কিছুটা লোকসান হলেও আস্তে আস্তে লাভজনক হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল ছিলেন না। এ কারণে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন বিমানের পরিচালক মাহবুব জাহান খান।
জানা গেছে, সরাসরি ফ্লাইট হওয়ায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে এয়ারক্রাফটে অতিরিক্ত জ্বালানি তেল নিতে হবে। এ কারণে ২৯৮ আসনের এয়ারক্রাফটে মাত্র ১৩০ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। আর ফিরতি পথে নেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১২০ জন।
মিট দ্য প্রেসে বিমানের পরিচালক জানান, পরীক্ষামূলক প্রথম ফ্লাইটে মাত্র ৩৬ জন যাবেন সাধারণ যাত্রী। বাকিদের অধিকাংশই বিমান, সিভিল এভিয়েশন ও বিমান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। সরকারি আদেশ অনুযায়ী, তাদের অধিকাংশই যাচ্ছেন জিএসএ (জেনারেল সেলস এজেন্ট) নিয়োগ ও অফিস ঠিক করতে।
এই পরীক্ষামূলক ফ্লাইট আসলে কোনো প্লেজার ট্রিপ (প্রমোদ ভ্রমণ) হচ্ছে কি না কিংবা সংশ্লিষ্টরা অকারণে যাচ্ছেন কি না- এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিমান প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটি কোনো প্লেজার ট্রিপ নয়। এটি পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট। তিনি বলেন, কানাডায় বিমানের অফিস ঠিক হয়েছে ১ মাস আগে। জিএসএ ঠিক করতে অন্য আরেকটি টিম আগেই কানাডা গেছে। জিএসএ নিয়োগের কোনো বিষয়ে এই ফ্লাইটের কেউ টরন্টো যাচ্ছে না।
প্রস্তুতি ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে কেন ফ্লাইট চালু করা হলো- এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতিই ছিল। তবে কানাডা জানিয়েছে যাত্রীদের বোর্ডিং ইন্টিগ্রেট করতে গেলে ১২ সপ্তাহ সময় লাগবে। তারপরও আমরা তাদের অনুরোধ করি যাতে ২৬ মার্চ বিশেষ দিন তারা আমাদের এই অনুমতি দেয়। তারা আমাদের অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি আমরা জুনে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করব।
এ সময় পরীক্ষামূলক এই ফ্লাইটের ‘অতিরিক্ত খরচ’ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। প্রশ্নের উত্তরে বিমানের পরিচালক মাহবুব জাহান খান বলেন, এই পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে যারা যাচ্ছেন তাদের আসা-যাওয়া ও থাকার খরচ ৪ কোটি টাকার মতো। এতে ৩৬ জন সাধারণ যাত্রী যাচ্ছেন। টরন্টো থেকে ঢাকা ফেরার জন্য ১৯ জন যাত্রী টিকিট কিনেছে।
পরীক্ষামূলক ফ্লাইটের গতিপথ ও ধারণক্ষমতা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে রাশিয়ায় যুদ্ধের কারণে ফ্লাইট অন্য দেশের ওপর দিয়ে যাবে। ফলে অতিরিক্ত ২ ঘণ্টা বেশি লাগবে। তেল বেশি লাগবে। সেজন্য প্রাথমিকভাবে আমরা ঢাকা থেকে টরন্টো যাওয়ার সময় সর্বোচ্চ ১৩০ জনকে নিয়ে এবং ঢাকায় ফেরার সময় সর্বোচ্চ ১২০ জন যাত্রী নিয়ে আসব। পরবর্তীতে রাশিয়ার আকাশপথ খুলে গেলে যাত্রীর ধারণক্ষমতা বাড়ানো হবে।
ফ্লাইট ঘোষণার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস।
ফ্লাইট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কানাডার মতো একটি দেশে ফ্লাইট চালুর বিষয়টি অত্যন্ত প্রেসটিজিয়াস। এছাড়াও প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল এই ফ্লাইট। আমি আশা করি, এই ফ্লাইটের মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে। আমি এই ফ্লাইটের সাফল্য কামনা করছি।
তিনি বলেন, আমরা ২-৩ বছর ধরে টরন্টো রুটে ফ্লাইট চালুর কার্যক্রম ও আনুষ্ঠানিকতা চালিয়ে যাচ্ছি। গৌরব ও অহংকারের মার্চ মাসে স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে আমরা ফ্লাইটটি উদ্বোধন করছি। ২৬ মার্চ রাতে টরন্টোর উদ্দেশে কমার্শিয়াল পরীক্ষামূলক ফ্লাইট যাবে, জুন মাস থেকে নিয়মিত চলবে ফ্লাইট।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস বলেন, ঢাকা থেকে কানাডাকে সংযুক্ত করার এই ফ্লাইটটি একটি ঐতিহাসিক ফ্লাইট। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে যে কয়টি দেশ প্রথমদিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তার মধ্যে কানাডা অন্যতম। আমি আশা করছি, এই ফ্লাইট চালুর মাধ্যমে দুদেশের বন্ধুত্ব আরও মজবুত হবে।
উদ্বোধনী ফ্লাইটটি আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের ফ্লাইট বিজি-৩০৫ কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে। ২৭ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে টরন্টোতে অবতরণ করবে। টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট বিজি-৩০৬ আগামী ২৯ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে এবং ৩০ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকায় অবতরণ করবে।
বিমান জানায়, অত্যাধুনিক মডেলের বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে টরন্টো ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এই উড়োজাহাজে আসন সংখ্যা ২৯৮টি।
বিমান জানায়, পরীক্ষামূলক এই ফ্লাইটে টরন্টো যাবেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, তার পরিবার, মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুজন সংসদ সদস্য, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও মন্ত্রণালয়ের ৩৫ কর্মকর্তা এবং ৩৬ জন সাধারণ যাত্রী।
ঢাকা-টরন্টো রুটে ভাড়া ধরা হয়েছে (ওয়ানওয়ে) ৭৫ হাজার ৮৩০ টাকা, আর রিটার্নসহ ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এর আগে, ২০২০ সালে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের মার্চে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে এই রুটে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করার। বিমানের ঢাকা থেকে টরন্টো রুটের ফ্লাইটটি প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আগ্রহ ও আবেগের।
উল্লেখ্য, যাত্রীদের কানাডার ভ্রমণ নির্দেশনা অনুসরণ করে ফ্লাইট ছাড়ার আগে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ সনদ সঙ্গে রাখতে হবে।