ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নিজের গড়া কলেজে পড়া ইসলামী পোষাক পরা মুখঢাকা ছাত্রীদের দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
ওই ছাত্রীদের দেখে তিনি জানতে চেয়েছেন, পাশে কি কোনো মাদরাসা আছে?
গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল নগরের কাউনিয়ায় নীলু-মনু ট্রাস্ট ও পাবলিক লাইব্রেরিতে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনমিয়কালে তিনি এ কথা বলেন।
রাশেদ খান মনন বলেন, আমি যখন রাস্তা দিয়ে আসছিলাম, তখন দেখি সারি সারি মেয়েরা যাচ্ছে। কিন্তু তাদের চেহারা জামা-কাপড় দেখতে পাচ্ছি না, সব আবৃত, হাতে মুজা। তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, পাশে মাদরাসা কোনো আছে নাকি? কিন্তু আমাকে উত্তর দেওয়া হলো, এরা সবাই আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজের মেয়ে।
তিনি বলেন, এই আবুল কালাম কলেজ আমার হাত দিয়ে তৈরি করেছি, সেই আবুল কালাম কলেজের মেয়েদের এই চেহারা! আমি তো কোনো বাঙালি মেয়ে দেখলাম না। আমি আগরপুর কলেজে গিয়ে একটা মেয়েরও চোখের ঠুলি ছাড়া কিছু দেখি নাই। বাঙালি শাড়ি পরা মেয়ে দেখলাম না। আমি এখানে (বরিশাল) রাস্তায় তাকিয়ে দেখি কতজন নারী শাড়ি পরে বের হয়। শুধু দেখলাম যারা কর্মজীবী নারী, আর আমাদের মা-বোনেরা যারা পুরোনো দিনের তারা শাড়ি পরছেন। তাহলে বাংলাদেশ কোথায় এখন?
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, আজ আমি বাংলাদেশকে চিনি না। আমি আমার ধর্ম পালন করি, তারপরও তো নাস্তিক বলে পরিচিত আমি।
নিজের বাসায় আসা এক অতিথি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের সময় যে বাড়িতে থেকে যুদ্ধ করেছিল, সেই বাড়ির মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে আমার স্ত্রী একটি শাড়ি উপহার দিয়েছিল। শাড়িটি দেওয়ার সময় তাকে বললেন, ভাবি এই শাড়িটা নিয়ে যান। ভাবি বললেন, আমি শাড়ি পরি না, ইসলামি ড্রেস পরি। আমি বললাম, ইসলামি ড্রেস কোনটা? ড্রেসটা দেখিয়ে বলল এই যে। আমি বললাম, এটা তো ইসলামি নয়, সউদী নয়তো মধ্যপ্রাচ্যের ড্রেস। তবে সেসব দেশের ড্রেসও এরকম না। তবে আমরা সেই কালচার নিয়ে চলে এসেছি বাংলাদেশে? তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান আমলে আমাদের মেয়েরা যারা সালোয়ার-কামিজ না পরে শাড়ি পরে যেত, সেই মেয়েরা আজ এই জায়গাতে চলে গেছে। আজ জনসংখ্যার অর্ধেক দেখে বুঝতে পারছি দেশ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে?
রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাভাই, শায়েখ আব্দুর রহমান যখন জঙ্গি হিসেবে প্রকাশ পেল, তখন ১৯টা আন্ডার গ্রাউন্ড জঙ্গি সংগঠন প্রকাশ পেয়েছিল। যদিও এখন কয়টা জানি না। তবে নতুন নতুন নাম তো শুনছি। আর এতে আমাদের ইয়াং ছেলেরা আকৃষ্ট হচ্ছে। আগে ধারণা করতাম মাদরাসার ছেলেপেলে গেছে, এখন তা না দেখি ইংরেজিতে পড়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা মুসলমান, কোনো সন্দেহ নেই। নামাজ-কালাম, রোজা-ঈদ, হজ্জ-জাকাত সব হবে। কিন্তু ভারতে যেমন হিন্দুত্ববাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশে আবার তার বিপরীতে ইসলামি মৌলবাদ দাঁড়াবে এটা হবে না।
অধ্যাপক নজরুল হক নিলুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন প্রফেসর আবদুল মোতালেব হাওলাদার, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক এমপি শেখ মো. টিপু সুলতান, অধ্যাপিকা টুনু রানী কর্মর্কার, মোজাম্মেল হক, গণফোরামের সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট হিরণ কুমার দাস মিঠু, মুকুল দাস, আমিনুল ইসলাম খোকন, সীমা রানী শীল, শামিল শারুখ তমাল প্রমূখ।