DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

পাকিস্তানে কোনো আমদানিকৃত সরকার মেনে নেবো নাঃ ইমরান খান

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ পাকিস্তানে  কোনো আমদানিককৃত সরকারকে মেনে না নিয়ে জনগণের কাতারে ফিরে যাওয়ার অঙ্গীকার করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ২২ কোটি মানুষের নেতাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার হুমকি একটি জাতির জন্য অবমাননাকর।

তিনি আগামীকাল বাদ এশা সারা দেশের মানুষকে পথে নেমে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার সম্ভাব্য শেষ ভাষণে বলেছেন, দেশে নাওয়াজ শরীফ-আসিফ জারদারির শাসনামলে দেশে ৪শ’রও বেশি ড্রোন হামলায় লাখ লাখ মানুষকে যারা হত্যা করেছে, শুধুমাত্র ডলারের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়ার কারণে তারা এর প্রতিবাদ করেনি। তিনি এর বিরুদ্ধে এবং ইরাক যুদ্ধের বিরুদ্ধে ২০ বছর আগে লন্ডনে প্রতিবাদে যোগ দেয়ার কারণে পশ্চিমাদের বিরাগভাজন হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।


বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরির রায়কে বাদ দিয়ে আজ শনিবার বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবে ভোট দেয়ার নির্দেশ দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। এ সিদ্ধান্তের পরে গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন এবং জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইতোমধ্যে,ইমরান খানেের বিদায় নিশ্চিত ধরে নিয়ে সম্ভাব্য নতুন ফেডারেল সরকার গঠনের আলোচনা শেষ করেছে বিরোধী জোট। নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ।
মন্ত্রিসভার বৈঠক করার সিদ্ধান্তটি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পরে এসেছে যা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করার জন্য ডেপুটি স্পিকারের রায় এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রেসিডেন্ট পরবর্তীতে জাতীয় পরিষদ (এনএ) ভেঙে দিয়েছিলেন।

পাঁচ বিচারক সর্বসম্মতিক্রমে এর বিপক্ষে ৫-০ ভোট দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করেছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ দিনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় দেন। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপরও ভোটাভুটি হবে। এ জন্য আজ শনিবার দিন ধার্য করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত আরো বলেছেন, অনাস্থা প্রস্তাবের সুরাহা না করা অবধি পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতবি করা যাবে না। এর আগে গত ৩ এপ্রিল ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে খারিজ করে দেন জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী ইমরানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এ প্রক্রিয়াকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের দিনই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ দেন। পার্লামেন্ট পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেন, ‘পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই প্রধানমন্ত্রীর। এ সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হলো।’
এদিকে, অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের বিদায় নিশ্চিত ধরে নিয়ে সম্ভাব্য নতুন ফেডারেল সরকার গঠনের আলোচনা শেষ করেছে বিরোধী জোট। নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। বিরোধী জোটের সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় সরকারের মতো নতুন ফেডারেল সরকার গঠন করা হবে। এতে আনুপাতিক হারে শরিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এর মেয়াদ ছয় মাস অথবা এক বছর রাখার বিষয়টি বর্তমানে বিবেচনায় রয়েছে। এই মেয়াদের মধ্যে নির্বাচনী সংস্কার ও জবাবদিহি-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলো পাস হতে পারে। সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণে নির্বাচন কমিশনকে যৌক্তিক সময় দেয়া হবে। জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ শপথ নেয়ার পর সম্ভাব্য সরকারের অগ্রাধিকারগুলো ঘোষণা করবেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। যুদ্ধ নয়, শান্তির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সব দেশের সঙ্গে সমানভাবে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন আনবে সম্ভাব্য নতুন সরকার। নিপীড়নের উদ্দেশ্যে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর কার্যক্রম বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, নতুন প্রেসিডেন্ট এবং চারটি প্রদেশে নতুন গভর্নর নিয়োগে সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেয়া হবে। ইমরা সরকারের সব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা ও পরিবর্তন করা হতে পারে।
গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে ভারতের শক্তিশালী রাজনৈতিক ভিত্তির কথা উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত পাকিস্তানের একটি ক্ষমতাসীন সরকারকে ফেলে দেয়ার যারা হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানের নেতারা তার প্রতিবাদও করেনি। অথচ ভারতের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস কারো নেই।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হতাশা প্রকাশ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব পেশের আগেই বলা হল যে, অনাস্থা প্রস্তাবে যদি ইমরান খান টিকে যায় তাহলে পাকিস্তান ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং যদি অনাস্থা ভোটে হেরে যায় তাহলে পাকিস্তানকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট বিষয়টি আমলেই নিলেন না। তাদের অন্তত দেখা উচিত ছিল এতে কী আছে, এটা ২২ কোটি মানুষের মান-সম্মানের জন্য ইতিবাচক কী না।
হর্স ট্রেডিংয়ের কথা উল্লেখ করে তাহরিকে ইনসাফ প্রধান বলেন, সারা জাতি দেখেছে কিভাবে এমপি বেচাকেনা হয়েছে। আমরা যেভাবে ছাগল-ভেড়া কেনাবেচা হতে দেখি তেমনি জাতীয় পরিষদ সদস্যদেরও বিক্রি হতে দেখেছি। তিনি গণমাধ্যমের প্রতি আফসোসের সুরে বলেন, যখন উপহারে দেয়া রিজার্ভ সিটের এমপিরা বিক্রি হয়ে আমার দল ছেড়ে গেছেন তখন মিডিয়া বাহ্বা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমণ করেছি, কিন্তু এত নিকৃষ্ট বিষয় কোথাও দেখিনি।
তিনি বলেন, আমি সারা জীবন লড়াই করেছি। এটাতে আমি অভ্যস্ত। কোনো আমদানিকৃত সরকারকে মেনে নেব না। তিনি বলেন, দেশের ৬০ ভাগ নাগরিকের বয়স ৩০ এর নিচে। এসব যুবককে দেশের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, তারা প্রকাশ্যে নেতা বেচাকেনা দেখছে, তাদের কাছে নেতাদের কী সম্মান থাকবে।
তিনি বলেন, ২২ কোটি জনগণের নেতাকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া হয়েছে। এর জন্যই কি আমরা স্বাধীন হয়েছিলাম। তাহলে আমরা কেন ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করি।
তিনি নিজের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা অপরাধ আমাদেরকে সন্ত্রাস দমনের অংশীদার বানিয়ে আমাদের জনগণকে ড্রোন হামলা করে মেরেছে। মাদরাসায়, বিয়েশাদীতে ড্রোন হামলা চালিয়ে আমাদের ভাইবোনদের হত্যা করেছে, অথচ ডলার খেয়ে আমাদের নেতারা কেউ প্রতিবাদ করেননি। আমি প্রথম প্রতিবাদ করি। আমি ইরাক যুদ্ধের প্রতিবাদ করি।
যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কী ধরনের পাকিস্তান তারা চায়। আবারও ভারতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে আরএসএস-এর শাসন চলে, কাশ্মীরি জনগণকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্যাতন করছে, এর বাইরে তাদের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। সেখানকার নেতারা এতটাই সংগঠিত যে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা সাহস কারো নেই।
জনগণের কথা উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, দেশের মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেমন পররাষ্ট্রনীতি তারা চান। পশ্চিমাদের প্রয়োজন বশংবদ সরকার। তাদের দেশের প্রতি কোনো ভালবাসা নেই, তারা টাকার কাঙাল। দেশের সেনাবাহিনী, কোনো রাজনৈতিক দল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে।
তার কোনো আত্মীয়-স্বজন রাজনীতিতে নেই উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ থেকে ২২ বছর আগে একা রাজনীতিতে নেমেছিলাম। জনগণ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল, তারাই আমাকে তাদের নেতা বানিয়েছে। তিনি আসন্ন সরকারকে মেনে না নেয়ার অঙ্গীকার করে জনগণকে সাথে নিয়ে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একটা সমস্যা দেখা দেওয়ায় আমি জনগণের ম্যান্ডেট নেয়ার জন্য সংসদ বাতিল করে ভোটের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু ব্যাকডোর দিয়ে ক্ষমতায় যেতে অভ্যস্তরা জনগণকে ভয় পায় বলেই এসব নাটক করে চলেছে। তাদের মমালাগুলো পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। এখন ক্ষমতা দখল করে তারা সেসব মামলা থেকে নিজেদের মুক্ত করে নেবে। তারা কখনও নিউট্র্যল আম্পায়ার দিয়ে খেলেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ম্যাচ ফিক্সিং করেই তারা খেলতে নামতে অভ্যস্ত।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সভাপতিত্বে পিটিআই-এর রাজনৈতিক কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং ‘হুমকি চিঠি’তে কথিত বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে আনা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সদস্যরা সিক্রেট অ্যাক্ট ও বিচারিক আদেশের আলোকে এ বিষয়ে পরামর্শ দেন। কমিটি ‘হুমকি চিঠি’ পাবলিক করার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, যেহেতু জনগণের চাপ আছে, তাই ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ডন অনলাইন ও জিও নিউজ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!