DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

বাংলাদেশের গুম-খুন-নির্যাতন এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত : মির্জা ফখরুল

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন ২০২১এ বাংলাদেশের গুম-খুন-নির্যাতনের বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে আসছি যে ঘটনাগুলো বাংলাদেশে ঘটছে সেগুলোর ওপরে আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক বিশ্ব সেগুলোর ওপরে অনেক আগে থেকে কাজ করছে। নট দ্যাট যে এখন করছে। প্রত্যেক বছর যুক্তরাষ্ট্র এই মানধিকার রিপোর্ট বের করে, প্রত্যেকটা দেশের ওপর বের করে।

সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন, বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি, গুম, খুন-এটা তারা বলেই আসছে। বিশেষ করে সম্প্রতি র‌্যাবসহ ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তারা(যুক্তরাষ্ট্র) সেনশন দিয়েছে। সেই সেনশন কি প্রমাণ করে? এগুলোতে প্রমানিত হচ্ছে যে, এটা শুধু আমাদের কথা নয়, এটা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সত্য যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তারা একটা সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদী সরকার, গণতন্ত্রের আশে-পাশে তারা নেই, গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। বাংলাদেশের সংবিধানের যে বিষয়টা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সেটাকেই তারা ধবংস করে ফেলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়বে কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন হবে কী হবে না হবে না- সেটা তো নির্ভর করবে যে, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে কি হবে না।নির্বাচনের পরিবেশ এখানে যদি তৈরি হয় তাহলে সেখানে নিশ্চিত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং সেই আন্দোলনেও এটার পজেটিভ প্রভাব পড়বে।

শুক্রবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্তসমূহ এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব তুলে ধরেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১২ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর কর্তৃক প্রকাশিত ‘২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর ভুমিকা, বিচার ব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ সম্পর্কে যে বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে স্থায়ী কমিটি সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিচার বর্হিভুত হত্যাকান্ড, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের ফলে হত্যাকান্ড, প্রতিবাদকারী ব্যক্তিদের পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের গ্রেফতার, বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার, বিশেষ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া ও কারাগারে প্রেরণকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে রিপোর্টে উল্লেখ করায় প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হয়েছে বলে স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে।”

‘ডা. জোবায়েদার আপিল খারিজে উদ্বেগ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনী প্রখ্যাত চিকিতসক ডা. জোবাইদা রহমানের লিভ টু আপিল আবেদন খারিজ হওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। ডা. জোবাইদা একজন অরাজনৈতিক চিকিতসক। তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় জড়ানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসামূলক। মামলাটিতে কোনো ভিত্তি না থাকলেও শুধুমাত্র জিয়া পরিবারকে হয়রানি ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং যে আদেশ প্রদান করা হয়েছে তা ফরমায়েসী বলে প্রতীয়মান হয়।”

‘‘বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে এই ফ্যাসিবাদী সরকার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মূল করার হীন উদ্দেশ্যেই এসব হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিচার বিভাগ সংবিধানের প্রদত্ত স্বাধীনতা রক্ষা না করে দলীয় সংকীর্ণ উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য বেআইনি, জবর দখলকারী অনির্বাচিত আওয়ামী সরকারকে অনৈতিকভাবে সহযোগিতা করছে বলে জনমনে ধারনা সৃষ্টি হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সভায় এই ধরনের হীন অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে স্বাধীনভাবে সংবিধানের মূল চরিত্র অক্ষুন্ন রেখে বিচারিক কর্ম সম্পাদনের আহবান জানানো হয়।”

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি গবেষণায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশসমূহের চেয়ে বেশি দামে টিকা ক্রয় ও অর্থ ব্যয়ে চরম অস্বচ্ছতার কারণে ২৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়মের তথ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির উদ্বেগের কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদদে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। অবিলম্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দুর্নীতির বিষয়গুলো নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানানো হয়েছে স্থায়ী কমিটির সভা থেকে।”

রিজার্ভ চুরির ঘটনা ধামাচাপা’

বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে খারিজ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ চুরির বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই একেবারে দায়সারা মামলা দায়ের এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই মার্কিন আদালতের এখতিয়ার বর্হিভূত মামলা দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে যে সকল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করায় প্রমাণিত যে সরকারের কোনো মহল এই অপরাধে সঙ্গে জড়িত। অবিলম্বে সঠিক তথ্য জনগনের সামনে উন্মোচন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয় স্থায়ী কমিটি।”

আগামী ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস এবং ৩ মে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম দিবস পালন বিএনপি পালন করবে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!