DMCA.com Protection Status
title="৭

হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনে ফের সক্রিয় হচ্ছে ২০দলীয় জোট।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আগামী দিনের মিডনাইট হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলন ও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের সক্রিয় হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন পর একমঞ্চে দেখা গেছে জোট নেতাদের। ইতোমধ্যে জোটের শরিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠিকভাবে বৈঠক করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এতে শরিকদের ক্ষোভ অনেকটাই কমে আসছে। ঈদুলফিতরের পর ডাকা হতে পারে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক।

সেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় সরকারের রূপরেখাসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন এবং জাতীয় সরকার কীভাবে গঠন করা হবে, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।

বিএনপি ও জোটের কয়েক নেতা  বলেন, জামায়াতকে কেন্দ্র করে জোট ও বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই সমাধান হয়েছে। আপাতত জামায়াত জোটেই থাকবে। যদি তারা স্বেচ্ছায় চলে যায় সেক্ষেত্রে তাদের আটকাবেও না। জামায়াতকে জোটে রেখেই বৃহত্তর ঐক্যে কৌশলী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডান-বামসহ সরকারবিরোধী সব দল নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য হলেও শুরুতেই একসঙ্গে কর্মসূচি দেওয়া হবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ নানা ইস্যুতে যুগপৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে। পরে সবাই একমঞ্চ থেকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করবে। জামায়াত থাকলে বামসহ কয়েকটি দল একমঞ্চে আসবে না। সেক্ষেত্রে সব দল একমঞ্চে উঠলেও সেখানে থাকবে না জামায়াত। একই দাবিতে তারা যুগপৎ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে। সূত্র জানায়, জামায়াতের কারণে জোটের শরিক বা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যাতে দূরত্ব সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক বিএনপির হাইকমান্ড।

জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। বৃহত্তর ঐক্য মানে ২০ দল বা অন্য শরিকদের এড়িয়ে চলা নয়। আমরা সবাইকে নিয়েই এগোতে চাই।

তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটে কোনো বিভেদ বা অনৈক্য নেই। করোনাসহ নানা কারণে শরিকদের মধ্যে যোগাযোগ কম ছিল। ইফতারকে কেন্দ্র করে আমরা সবাই একসঙ্গে বসছি। জোটের ঐক্য কীভাবে আরও সুদৃঢ় করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছি। আশা করি ঈদের পর জোটের বৈঠক ডাকা হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ  বলেন, জোট থেকে জামায়াতকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, এটা আপনাদের পত্রিকার ভাষা। বাস্তবে ২০ দল অনেক ঐক্যবদ্ধ। আমরা জোটে আছি এবং থাকব।

তিনি বলেন, আন্দোলনের লক্ষ্যে জোটকে সম্প্রসারিত বা বৃহত্তর ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা মনে করি, এটা হওয়া উচিত।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোট অনেকটাই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। জোটের রাজনীতি বাদ দিয়ে ‘একলা চলো নীতিতে’ হাঁটতে থাকে বিএনপি। শরিকরাও যার যার মতো করে চলতে থাকে। ফলে দিনদিন বাড়ে দূরত্ব। ২০২০ সালের ৫ জুলাই সবশেষ জোটের বৈঠক হয়। করোনার কারণে ওই বৈঠকটি হয়েছিল ভার্চুয়ালি। তাছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনকে কেন্দ্র করে এলডিপিসহ জোটের কয়েকটি শরিক দলের সঙ্গে বিএনপির প্রকাশ্য বিরোধ সৃষ্টি হয়। জাতীয় মুক্তিমঞ্চ নামে আলাদা একটি প্ল্যাটফরম দাঁড় করান লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ। সেই মঞ্চে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ জোটের কয়েকটি শরিক অংশ নেয়। এ নিয়ে বিএনপি ও অলির মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ সৃষ্টি হয়।

জানা যায়, জোটে যথাযথ মূল্যায়ন না করার কারণেই ক্ষুব্ধ হন অলি। বিষয়টি বিএনপির হাইকমান্ডও বুঝতে পারে। অবশেষে অলির সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অলি আহমদের সঙ্গে তার বাসায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তিন ঘণ্টার ওই বৈঠকে অতীতের ক্ষোভ, বঞ্চনাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর সব ভুলে সামনে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন অলি আহমদ।

এলডিপি ছাড়াও জোটের সব শরিক দলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ক্ষোভ, বঞ্চনা, জামায়াতকে রাখা-না-রাখার পাশাপাশি বৃহত্তর ঐক্যসহ ভবিষ্যতের করণীয় নিয়ে তাদের মতামত নেওয়া হয়েছে। বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে প্রায় প্রতিটি শরিক দলই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তবে জোটকে যাতে অবমূল্যায়ন করা না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ২০ দলীয় জোটকে রেখেই বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে জোটের অন্যতম শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ  বলেন, এ সরকারকে হটাতে আন্দোলন করতেই হবে। বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে আমি থাকব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তবে জোটের অন্য দলের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, তা জানি না। তিনি আরও বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন জোটগতভাবে না হয়ে যুগপৎ হতে পারে। যার যার অবস্থান থেকে তারা রাজপথে থাকবে।

জানা যায়, অনানুষ্ঠানিক আলোচনার পাশাপাশি বিএনপির হাইকমান্ডের কয়েকটি সিদ্ধান্তকেও ইতিবাচকভাবে দেখছেন শরিকরা। বিশেষ করে নির্বাচনে জয়ী হলে যারা একসঙ্গে রাজপথে থাকবে, তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণায় শরিকদের মধ্যে স্বস্তি দেখা গেছে। দীর্ঘদিন রাজপথে একসঙ্গে আন্দোলন করছেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সবারই কিছু চাওয়া-পাওয়ার বিষয় থাকে। এ নিয়ে ছোট প্রায় সবার মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা কাজ করে। সরকার গঠনের পর সবাইকে মূল্যায়নের ঘোষণায় শরিকদের মধ্যে সেই অনিশ্চয়তা থাকবে না। বরং কিছুটা পাওয়ার আশায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। তাছাড়া আগাম এমন ঘোষণা দেওয়ায় জোটের যেসব শরিক জাতীয় সরকারের দাবিতে সোচ্চার ছিল, তারাও সেখান থেকে পিছু হটতে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক এনপিপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ  বলেন, নানা কারণে জোটের শরিকদের মধ্যে দূরত্ব ছিল। জোটকে ঐক্যবদ্ধ করতে বিএনপি কাজ শুরু করেছে। শরিকদের এখন ভুল বোঝাবুঝি বা অনৈক্য নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে বিদায় করতে ঐক্যের বিকল্প নেই। বিএনপি বৃহত্তর ঐক্যের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইতিবাচক। তবে অন্য দলকে টানতে গিয়ে জোটের মধ্যে যাতে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

জোটের শরিক এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম  বলেন, শরিকদের কেউ কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়াকে বাদ দিয়ে জনগণের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা সে লক্ষ্যে কাজ করছেন। আশা করি, সামনের দিনে জোট আরও বেশি সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!