DMCA.com Protection Status
title="৭

ডিএমপি ডিসি শরিফুলের বিরুদ্ধে নারী আসামীকে ফাঁদে ফেলে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলার এক নারী আসামিকে ফাঁদে ফেলে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)  উপকমিশনার (ডিসি)মুহাম্মদ শরীফুল ইসলামের  বিরুদ্ধে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার ও আদালতে করা অভিযোগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেছেন, মামলা থেকে অব্যাহতি ও বিয়ের কথা বলে গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ছয়টি রিসোর্ট ও রেস্ট হাউজে তার সঙ্গে একান্তে সময় কাটিয়েছেন ডিসি শরিফুল। একপর্যায়ে ওই নারী লন্ডন যেতে চাইলে, প্লেন থেকে পুলিশ দিয়ে নামিয়ে আনার ভয় দেখান তিনি। রাজধানীর কলাবাগানের ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর ডিসির স্ত্রী তাকে বেদম প্রহার করেন।

অভিযুক্ত এই ডিসি হলেন মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম। তিনি ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

গত ২৪ মার্চ ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম)-পশ্চিম বিভাগের ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিসি শরীফুল গনমাধ্যমকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য নয়।’ মামলার আবেদন ও ডিবির যুগ্ম কমিশনারের কাছে অভিযোগের বিষয়টিও তার জানা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৩ ডিসেম্বর ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানায় দুই নারীসহ চারজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন গোলাম মারুফ মজুমদার ওরফে নিঝুম মজুমদার নামে এক ব্যক্তি। মামলার এক নম্বর আসামি ওই নারী। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান ডিএমপির গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। মামলাটির তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন ডিসি শরীফুল ইসলাম।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মার্চ ওই ডিসি তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাকে বেদম প্রহার করেন ডিসির স্ত্রী। এ ঘটনায় ওইদিন তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে গেলেও থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ নেয়নি। এরপর ২৩ মার্চ মামলার এক নম্বর আসামি ওই নারী ডিবির যুগ্ম কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এর সঙ্গে মেডিকেল রিপোর্ট সংযুক্ত করে বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

ওই নারী অভিযোগ করে জানান, মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে ডিসি শরীফুল ইসলাম তাকে কয়েকবার অফিসে ডাকেন। এক সময় তিনি তার পারিবারিক ঝামেলা প্রসঙ্গে আলাপ করেন এবং শারীরিকভাবে স্ত্রীর নিগ্রহের শিকার হওয়ার কথা জানান। ডিসি তাকে জানান, এ সম্পর্ক থেকে তিনি বেরিয়ে আসতে চান। এসব শুনে ডিসি শরীফুলের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন তিনি। একপর্যায়ে ডিসি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং আগামী জুন মাসে বিয়ে করার আশ্বাস দেন।

ডিবির যুগ্ম কমিশনারকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে ওই নারী জানান, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে ডিসি শরীফুলের স্ত্রী জানতে পারেন।

তদন্ত কর্মকর্তা শরীফুলের বাসায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী ওই নারী গত ৩০ মার্চ ঢাকার নারী ও শিশু নিযাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এ ডিসি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ৯(১) ও ৯(ক) ধারায় দায়ের করা আর্জিতে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা এবং তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেন ওই নারী। আর্জিতে বলা হয়, ‘বাদিনীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলা রয়েছে। এর এক নম্বর আসামি তিনি। ডিসি শরীফুল ইসলাম মামলার দুই নম্বর আসামিকে দিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বাদিনীকে। মামলার তদন্তের একপর্যায়ে ডিসি শরীফুল তাকে জানান, তিনি (ডিসি) পারিবারিকভাবে অসুখী এবং ডিভোর্সের দিকে যাচ্ছেন। ডিসি শরীফুল বাদিনীকে বিভিন্ন প্রলোভন ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। ডিসির স্ত্রী-সন্তান রয়েছে উল্লেখ করে বাদিনী ডিসিকে এড়িয়ে চলতে গেলে আত্মহত্যা করতে চান তিনি। এ সময় ডিসি তার স্ত্রী কর্তৃক শরীরে অত্যাচারের বিভিন্ন চিহ্ন দেখান বাদিনীকে। এরপরও বাদিনী ডিসির প্রস্তাবে রাজি না হলে তদন্তাধীন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জেলের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।’

আর্জিতে বলা হয়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সিলেটের একটি রিসোর্ট, ২ মার্চ বিকেলে সাভারের আমিনবাজারে একটি খামারবাড়ি, ১৬ মার্চ রাতে সাভারের একটি রেস্ট হাউজ, ১৮ মার্চ দুপুরে শ্রীমঙ্গলের একটি রিসোর্ট, ২১ মার্চ গাজীপুরের আমতলী বাজারের একটি রিসোর্টে ওই নারীকে নিয়ে যান ডিসি। সেসব স্থানে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক করেন ডিসি শরীফুল। যেহেতু ওই নারী মামলার আসামি সেহেতু মামলা তদন্তকারী ডিসির প্রস্তাবে রাজি হতে বাধ্য হন। এছাড়া ডিসি শরীফুল বিশ্বাস অর্জনের জন্য ওই নারীকে নিজ অফিসে ডেকে এনে অন্যান্য কর্মীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন এবং একটি স্বর্ণের আংটি পরিয়ে দেন।

আর্জিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গাজীপুরে একটি রেস্টুরেন্টে সময় কাটিয়ে গত ২১ মার্চ রাত ৩টার দিকে ডিসি শরীফুল ও ভুক্তভোগী নারী ঢাকায় ফেরেন। এ বিষয়টি শরীফুলের স্ত্রী জানতে পারেন। তবে ডিসি শরীফুল গাজীপুর যাওয়ার বিষয়টি স্ত্রীর কাছে অস্বীকার করেন। পরে ২২ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে ওই নারীকে ডিসি শরীফুল ফোন করে তার কলাবাগানের ডলফিন গলির বাসায় ডাকেন। বাসায় ডাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে তিনি বলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়ে যাব’। এ কথা বিশ্বাস করে কলাবাগানের ওই বাসায় গেলে ডিসির স্ত্রী ও তার তিন সহযোগী মিলে বেদম প্রহার করে তাকে। সেখান থেকে বের হয়ে থানায় গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

আদালত শুনানির পর ভুক্তভোগী নারীর আর্জি খারিজ করে দেয়। তবে এখন পর্যন্ত আদেশের কপি পাননি বলে দেশ রূপান্তরকে জানান তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রশান্ত কুমার।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!