র্যাবের নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪ ল-ফার্মের সঙ্গে আলোচনা চলছেঃশাহরিয়ার আলম
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪ ল-ফার্মের সঙ্গে আলোচনা চলছেঃশাহরিয়ার আলম
সংবাদটি পড়েছেন:312,254
ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মিডনাইট হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি স্বনামধন্য ল-ফার্মের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি।
গত বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৭তম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা যায়। কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং মো. হাবিবে মিল্লাত অংশ নেন।
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কিছু উন্নয়ন সহযোগী আইন প্রণেতারা বাংলাদেশের কাছে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের হয়রানি ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য না পাওয়ায় যথাসময়ে চিঠির জবাব দেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেফতার, মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয় নিরবচ্ছিন্নভাবে তদারকি করার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে, যোগ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোই লবিস্ট হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দূতাবাসে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সেই দেশের আইন প্রণেতাদের সম্পর্কটা তেমন ঘনিষ্ঠ না হওয়ায় অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত লবিস্ট ফার্মগুলো বেশি প্রভাব বিস্তার করে না। পক্ষান্তরে সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার প্রশ্ন রয়েছে বিধায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদেশে অবস্থিত প্রবাসী বাঙালিদের কাজে লাগানোর পাশাপাশি লবিস্টদের বিষয়টিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে তিনি কমিটিকে জানান। ইতালি ও ফ্রান্সে পাসপোর্ট নবায়ন প্রসঙ্গে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ওই দুটি দেশ থেকে যারা পাসপোর্ট নবায়ন করতে আসেন তারা অনেকেই বয়স, বাবা-মায়ের নাম পরিবর্তনের জন্য এসে থাকেন। কিন্তু মিশনগুলো থেকে ওই পরিবর্তিত তথ্যগুলো ঢাকায় পাসপোর্ট অফিসে পাঠালে পূর্বের পাসপোর্টের সঙ্গে মিল না থাকার কারণে তা নবায়ন করা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হচ্ছে এ ধরনের পরিবর্তন করা হলে বিদেশে বাংলাদেশের পাসপার্টের গ্রহণযোগ্য নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হবে। এখানে মিশনগুলোর কোনো ধরনের গাফিলতি না থাকলেও দায়িত্বগুলো তাদের ওপরেই গিয়ে পড়ে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ইতোপূর্বে তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কিছুটা অনীহা থাকলেও বর্তমানে এটা অনেকাংশে কেটে গেছে। আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তার অধীনস্ত দপ্তরের প্রধানদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েছে সে ব্যাপারে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশের পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা তথ্য দিতে সম্মতিপত্র দিয়েছে বলে তিনি জানান। র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ হবে বলেও তিনি মনে করেন। তবে যথা সময়ে তথ্যগুলো পেলে এবং সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশ/সংস্থাগুলোর কাছে উপস্থাপন করতে পারলে বাংলাদেশকে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না বলে তিনি মনে করেন। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিগুলো ক্রমাগতভাবে প্রচুর অর্থ ব্যয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অসত্য তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছেন। এ ধরনের অপপ্রচার মোকাবিলায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশে অবস্থিত মিশনগুলো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে সরকারের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি আমেরিকাতে বৈধ হলেও দেশের বাস্তবতায় এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তার পরেও দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি এ ব্যাপারে কমিটির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কমিটির সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও তারা এই হাতিয়ারটি ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশের ওপর বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করে তাদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে। র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকেও তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা বলে মনে করেন। তাই সঠিক তথ্য সরবরাহপূর্বক কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন। স্থায়ী কমিটির সভাপতি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয় ওয়াসিংটনস্থ দূতাবাস পূর্ব থেকে অবহিত না হওয়ার বিষয়টিকে বড় ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে মালয়েশিয়া এবং লেবানন দূতাবাস সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।