ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ অভিযোগ করেছেন, বহিরাগত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা লাঠিসোটা, চাপাতি, হকিস্টিক এবং বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পাহারা দিচ্ছে। তারা পুরো বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, শহরের ওই অংশে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। তারা গুণ্ডাবাহিনীর মতো মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
‘স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাদের কাছে অভিযোগ করে জানিয়েছে, তারা সেখানে মোটেও নিরাপদ অনুভব করছে না।’ ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার জন্য উপাচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বুধবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় শুক্রবার বিসিএস পরীক্ষা থাকায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীদেরকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার স্বার্থে পূর্ব ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল স্থগিত করার ঘোষণা দেন ছাত্রদল সভাপতি। একইসঙ্গে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়) বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে জানিয়ে তা সফলে নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
‘ঢাবির উপাচার্যকে কোনো দলের অনুগত হয়ে কাজ না করার’ আহ্বান জানিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, ‘স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে ব্যর্থ হলে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দায়ী থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’
ছাত্রলীগের হামলা-মামলায় ভয় করে না ছাত্রদল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যের পরিবেশ দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। তবে সেটা এখন সব সীমা অতিক্রম করেছে। যে কোনো মূল্যে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়।’
কাজী রওনকুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রদল মনে করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার মুখের ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে, বাংলাদেশ পেয়েছে একটি স্বাধীন পতাকা এবং স্বাধীন মাতৃভূমি। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন সংগঠনের মুক্ত চিন্তা ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের জায়গা। কিন্তু যখন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে, বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মার খাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা মার খাচ্ছে। তখন দেশের সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্রসংগঠন হিসেবে এর পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার দায় আমাদের ওপরও বর্তায়।আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের কাছে আবারো বিনীত অনুরোধ করব, আপনি পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবক। আপনার অভিভাবকসুলভ আচরণের মাধ্যেমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব। সব ছাত্রছাত্রীদের কোনো সংগঠনের পরিচয়ে মূল্যায়ন না করে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী হিসেবে মূল্যায়ন করুন। তাহলে আপনি হতে পারবেন ক্যাম্পাসের সত্যিকারের একজন অভিভাবক। আর তা আপনার কর্তব্যও বটে।’
‘শুধুমাত্র ছাত্রদল নয়; সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন এবং সব ছাত্রছাত্রীরা আপনাকে একজন নির্দলীয় অভিভাবকের ভূমিকায় দেখতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি, আপনার দৃঢ় ভূমিকা এই ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে অনন্য ভূমিকা রাখবে। অন্যথায় আপনি ও আপনার কর্মকাণ্ড জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
বুধবার কেন্দ্রীয় সংসদের পরামর্শে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ক্যাম্পাসে তাদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থেকেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এবং ক্যাম্পাসে ছাত্রদল স্বাভাবিক কার্যক্রম নিত্যদিনের মতো পরিচালনা করতে চায়। এজন্য আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত সব ছাত্রসংগঠনের সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা আপনাদের সহযোগিতামূলক আচরণ প্রত্যাশা করছি এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে আমাদের আদর্শিক রাজনীতি পরিচালনা করার সুযোগ পাব বলে আশা রাখছি। আমরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করে গণমানুষের পাশে দাঁড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা না হলে উদ্ভূত পরিস্থির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়ী থাকবে।’
সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আসুন- আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাসমুক্ত করি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আকতার হোসেন, সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগরের নেতারা।