ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেক বেড়েছে এবং দেশের ৫ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এখন পশ্চিমা বিশ্বের নাগরিকদের সমান।
বৃহস্পতিবার সকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মিডনাইট হাসিনা সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী এমন মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন,দেশের ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে ৩ কোটি মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে। আমি কখনো বলিনি, ১৭ কোটি মানুষের খুব পয়সা বেশি হয়েছে। এ দেশের সার্বিক অবস্থায় বাস্তবতা হলো, ২০ শতাংশ মানুষ লো ইনকাম গ্রুপ। সেটাকে মাথায় রাখতে হবে। ১৭ কোটির মধ্যে ৩ কোটি বাদ দিলে ১৪ কোটি থাকে। এর মধ্যে ৫ কোটি মানুষের বায়িং ক্যাপাসিটি অলমোস্ট ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের মতো। সবকিছুই তো এভারেজ করা হবে; আমাদের যেমন ৩ কোটি মানুষকে অ্যাডজাস্ট করা দরকার দরিদ্র শ্রেণির, সেটাই আমরা করছি। পাশাপাশি ৩ কোটির জায়গায় হয়তো ৫ কোটি বেনিফিটটা পাচ্ছে।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে সেটা ঠিক, আপনারাও জানেন কোন শ্রেণির-কত জনের। আর ৩ কোটি দরিদ্রসীমার নিচে রয়েছে, তাদের জন্য আমরা দেখবো। চালের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা ও সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন টিপু মুনশী। ক্রেতারা মোটা চাল কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় চাল ব্যবসায়ীরা চালের চেহারা বদলে সরু বানিয়ে ফেলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, খোলা চাল প্যাকেটজাত করার পরে দামটা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সেটা একই চাল। সেটা যদি বাজার না পেতো তাহলে তারা (ব্যবসায়ী) তো এ ব্যবসায় যেত না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমার প্রশ্ন ছিল কারা কিনছে এই জিনিসটা। আজকে প্যাকেটজাত খাবার কেনার টেনডেনসি একটা মহলে বেড়েছে। গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ মানুষ মোটা চালটা কিনতে চায় না। তারা ঘুরে ফিরে চিকন চাল খাচ্ছে, সেটা ঘুরে ফিরে মোটা চালেরই এক নতুন পরিবর্তিত রূপ কিন্তু তারপরও তারা সেটাই কিনতে চাচ্ছে। আমি যেটা দেখতে চাইছি ক্রেতামহল কিনছে কেন? তাদেরও সচেতন হওয়া উচিত। বিক্রি হলে ব্যবসায়ীরা নেবেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজি খাদ্য মন্ত্রণালয় দেখবে, এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক আমাদের চালের মজুত আছে। সেটা আমাদের খাদ্যমন্ত্রী-কৃষিমন্ত্রীও বলেছেন।
বাজার থেকে চাল কিনে প্যাকেটজাত করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথা ভাবছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হয়নি। সবগুলো আইনি পথে যাওয়া উচিত, আমরা পারি কিনা। এমনও কথা এসেছিল, অনেকগুলো বড় গ্রুপ অনেক আইটেম বিক্রি করে, এমনকি মুড়িও তারা বিক্রি করে। হাজার হাজার মানুষ মুড়ি বিক্রি করে বাঁচে। এখন বড় গ্রুপগুলো যদি মুড়ি বিক্রি করতে শুরু করে তাহলে সাধারণ মানুষ যারা মুড়ি বিক্রি করে তাদের ভাগ্য কী হবে- এসব নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। ভোজ্য তেলের দামের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুখবর যেটা পামঅয়েলের দাম কমেছে এবং সয়াবিনের দামও কমের দিকে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামী ৬-৭ দিনের মধ্যে যে সভা হবে সেটা বিশ্লেষণ করে দেখে নতুন দাম আসবে। বাড়ার সম্ভাবনা নেই, আমার ধারণা নতুন প্রাইস অনুসারে দামটা কমবে। পামঅয়েলে যথেষ্ট প্রভাব পড়বে, সয়াবিনও অন্তত বাড়বে না সে রকমই আমরা আশা করছি। বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমি যদি কৃষক হই তাহলে আমাকে ধান বিক্রি করে তেল কিনতে হবে, ডাল কিনতে হবে। আমদানিনির্ভর জিনিসের যখন দাম বাড়ে ক্রেতাদের যখন বেশি দামে কিনতে হয় তখন তাদের যদি কোনো পণ্য থাকে সেটা তারা বেশি দামে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই হবে। চাল যদি কম দামে বিক্রি করে তাকে তেল-ডাল-নুন কিনতে হবে। সেখানেও তো একটা ব্যালেন্স দরকার। আমরা চেষ্টা করছি, দাম কম রাখার। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সহায়তা দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যে ১ কোটি পরিবারকে দিচ্ছি খাবার সেখানেও আমাদের বিশাল পরিমাণে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরা আগামী ১৫ই জুন থেকে আবার দিতে শুরু করবো এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ততদিন পর্যন্ত দেয়া হবে যতদিন মানুষের অর্থনৈতিক চাপ না যায়। একটা কথা সবারই মনে রাখা দরকার, বিশ্ববাজারের প্রভাব আমাদের ওপর পড়তে বাধ্য। জ্বালানি তেলের দাম যখন বাড়ে তখন তার প্রভাব পড়ে সব জায়গায়। চট্টগ্রাম থেকে যে ট্রাক ঢাকায় আসবে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তার খরচ বেড়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করছি, সব কিছু যেন সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়।