DMCA.com Protection Status
title="৭

ভারতে মহানবী(স.)অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষোভকারী মুসলিমদের ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এক নেত্রীর চরম কটূক্তির প্রতিবাদে  বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হচ্ছে মুসলমান বিক্ষোভকারীদের ঘরবাড়ি।

উত্তর প্রদেশে রাজ্যের প্রয়াগরাজ, সাহারানপুর ও কানপুর জেলায় গত কয়েক দিনে বেশ কিছু বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এগুলো অবৈধভাবে নির্মিত। তবে স্থানীয় লোকজন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, মুসলিমদের টার্গেট করেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। 

গতকাল রোববার (১২ জুন) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

খবরে বলা হয়েছে, ঘরবাড়ি ভাঙার সবশেষ ঘটনা ঘটেছে রোববার। প্রয়াগরাজ জেলা শহরের (পূর্ব নাম এলাহাবাদ) করেলি এলাকায় ওয়েলফেয়ার পার্টির একজন নেতা জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি ভেঙে দেয়া হয়। এর আগে শুক্র ও শনিবার সাহারানপুর ও কানপুরেও কয়েকজন মুসলিমের বাড়ি ভেঙে দেয়া হয় বুলডোজার দিয়ে।

এর আগে এপ্রিলে দিল্লিতে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষের পর বেশ কিছু মুসলিম বাড়ি ভেঙে দেয়া হয়। তার আগে মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে অন্তত ৪৫টি মুসলিম বাড়িঘর একইভাবে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়।

ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই এক টুইটবার্তায় জানায়, প্রয়াগরাজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে বলে একটি নোটিশ দেয়। রোববার বেলা ১১টার মধ্যে তাকে বাড়িটি খালি করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাড়িটি অবৈধভাবে নির্মিত। এরপর রোববারই বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভেঙে দেয়।

শনিবার কানপুর শহরে মোহাম্মদ ইশতিয়াক নামে এক ব্যক্তির নতুন তৈরি করা বাড়িটি ভেঙে দেয়া হয়। বলা হয়, তিনি কানপুরের সহিংসতার প্রধান অভিযুক্ত জাফর হায়াত হাশমির ঘনিষ্ঠজন। পুলিশের একজন কর্মকর্তা আনন্দ প্রকাশ তিওয়ারি বলেন, নিয়মনীতি অনুসরণ করেই ভবনটি ভেঙে দেয়া হয়েছে এবং ভূমিদস্যুদের অবৈধভাবে নির্মিত বাড়িঘরের বিরুদ্ধে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

এ ছাড়া সাহারানপুর শহরেও গত শুক্রবারের বিক্ষোভের পর মোট ৬৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন মোজাম্মেল ও আবদুল বাকিরের বাড়িও ভেঙে দিয়েছে সাহারানপুরের পৌর কর্তৃপক্ষ। পুলিশ বলছে, এসব বাড়ি অবৈধভাবে নির্মিত।

এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরী এলাকায় হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ হয়। একটি হিন্দু মিছিল ওই এলাকার মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সহিংসতা শুরু হয়, যাতে আহত হন নয়জন।

এর মধ্যে সাতজনই ছিল পুলিশ। এ ঘটনার জন্য হিন্দু ও মুসলমান দুপক্ষই একে অপরকে দায়ী করে। এরপরই সেখানে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের ভাষায় ’অবৈধ বাড়িঘর’ ভাঙার কর্মসূচি শুরু করে।

ওই এলাকার পৌর কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে ভারতের শাসক হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি। তাদের ভাষ্যমতে, ওই এলাকায় অবৈধ ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলার জন্যই এ অভিযান। কিন্তু সেখানকার মুসলমানরা বলছেন, বিশেষভাবে তাদের বাড়িঘর লক্ষ্য করেই ভাঙচুরের এ অভিযান চালানো হয়েছে।

জাহাঙ্গীরপুরীর বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে তাদের কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। এ অভিযান থামানোর জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করার পরও এক ঘণ্টা ধরে উচ্ছেদ অভিযান চলে।

মে মাসে দিল্লির শাহীনবাগ এলাকায়, যেখানে ২০১৯-২০ সালে নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা হয়, সেখানেও ‘অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের জন্য’ বুলডোজার পাঠানো হয়েছিল। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে বুলডোজার ফিরে যায়।

দিল্লি ও উত্তর প্রদেশে যা ঘটছে, তার সঙ্গে মধ্যপ্রদেশে এপ্রিল মাসে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলির অনেক মিল রয়েছে। মধ্যপ্রদেশেও ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি।

সেখানকার খারগোন নামের একটি ছোট শহরে হিন্দুদের রামনবমী উৎসবের সময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়েছিল। মুসলিম এলাকার মধ্য দিয়ে একটি হিন্দু মিছিল যাওয়ার সময় তৈরি হওয়া সংঘর্ষ থেকেই সেই দাঙ্গার সূচনা। খারগোন শহরের বাসিন্দা মুসলমানরা বলেন, ওই ঘটনার পর তাদের ঘর-বাড়ী ভাঙ্গার পায়তারা চলছে। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!