ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য এলাকা ছাড়ার প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনারের কিছুই করার নেই সিইসির এমন বক্তব্য ভালো লক্ষণ নয় বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেছেন, এমন কথা নির্বাচন কমিশনের নতজানু হওয়া, অসহায়ত্ব প্রকাশ করা, যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন কমিশন যদি অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তাহলে আমরা সাধারন নাগরিকরা যাবো কোথায়?
নির্বাচন কমিশন আমাদের শেষ ভরসাস্থল। দেশের স্বার্থে তাদের ওই পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। একটি রাষ্ট্রে নাগরিকের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ নেই। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন এবং অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানে এ সংবাদ সম্মেলন করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একজন সংসদ সদস্যের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্বের বিষয়ে আপনারা কি মনে করছেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা কিছু জানি না। নির্বাচন কমিশনারের এমন বক্তব্য ভালো লক্ষণ নয়, নির্বাচন কমিশন অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। নির্বাচন কমিশন যখন অসহায়ত্ব প্রকাশ করে যে, তারা তাদের আইনকানুন বিধি বিধান প্রয়োগ করতে পারছে না। তখন আমরা কিভাবে আশাবাদী হতে পারি- আমরাও অসহায়ত্ব প্রকাশ না করে পারি না। অথচ ২০১৬ সালের নির্বাচনি আচরণবিধি- এখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর নির্বাচনি প্রচারণার ও সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ। তারা সংশ্লিষ্ট জায়গায় নির্বাচনের সময় নির্বাচনি প্রচারণাসহ অন্যান্য কাজে অংশগ্রহণ করিতে পারিবে না। তবে শর্ত থাকে যে, উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গ যদি সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভোটার হয়ে থাকে তাহলে শুধুমাত্র তিনি নিজ ভোট প্রদানের জন্য কেন্দ্রে যেতে পারবেন।
বদিউল আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনের বস্তুত অবাধ ক্ষমতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করা। আমাদের উচ্চ আদালতে রায়ও আছে-নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে তারা বিধি-বিধানের সাথে সংযোজন করতে পারেন। তাদের হাত অনেক লম্বা তাদের অনেক ক্ষমতা রয়েছে কেউ কেউ বলে থাকেন। তারা দিনকে রাত রাতকে দিন করা ছাড়া সবকিছুই করতে পারেন। যদিও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের সবকিছু নির্ধারিত হয়ে যাবে না। তারপরও কিন্তু এই নির্বাচন কমিশন একটা পূর্বাভাস দিবে যে, আমাদের ভবিষ্যতে কি হবে। নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা এখন তো শুধুমাত্র একজন সংসদ সদস্য নির্বাচন কমিশনের কথা মানছেন না, এরপর জাতীয় নির্বাচনের সময় যদি পুরো প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি দল, বিরোধী দল এবং অন্যান্যরা যদি নির্বাচন কমিশনের আদেশ অমান্য করার চেষ্টা করে আমরা কোথায় যাব? এই নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তাদের দায়বদ্ধতাও কিন্তু নাগরিকদের কাছে। নির্বাচনের মানেই হচ্ছে অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তাই তাদের দায়িত্ব হলো আমাদের সাথে আমাদের কল্যাণে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা। আমরা আশা করেছিলাম-এই নির্বাচন কমিশন সাহসিকতা বলিষ্ঠতার পরিচয় দিবে উল্লেখ করে বদিউল আলম বলেন, আমরা নির্বাচনের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করি না, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করি। আমরা যা কিছু করি জনগণের স্বার্থে করি। আমরা সংবাদ সম্মেলন করে যেসব তথ্য তুলে ধরেছি তা নাগরিকদের জন্য যাতে করে তারা জেনে শুনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। তথ্যগুলো দেখে মনে হল যারাই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে যায় তাদের কাছে যেন জাদুর কাঠি থাকে। শুধু এইবার নয় আমরা অতীতেও এটা দেখেছি। যারা পদ-পদবী পায় তাদের সম্পদ আয় হু হু করে বেড়ে যায়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য এলাকা ছেড়ে যাবেন না এই বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিবেন কিনা নির্বাচন কমিশন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়টা দেখব নির্বাচন কমিশন আইনের পথে যান কি না।
নাগরিকের জন্য সুশাসনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেছেন, আশা করি নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আসন্ন সিটি কুমিল্লা করপোরেশন নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের পূর্ববর্তী দুটি নির্বাচনের কথা মনে রেখে আমরা আশাবাদী হতে চাই। আমরা জানি যে, বিগত দুটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, সংশ্লিষ্ট সকলকে সাথে নিয়ে কঠোরতা ও সাহসিকতার সাথে সুচারুরূপে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে কুমিল্লবাসীকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিল। এই নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামানো এবং ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখছি। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে তাকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কুমিল্লা সিটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানালেও তিনি তা করেননি বলে জানা গেছে। এতে করে একদিকে যেমন নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, অন্যদিকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারপরও আমাদের প্রত্যাশা নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়- অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। সফল নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভালো দৃষ্টান্তসমূহ অনুসরণ করুন। সকল দল ও প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করুন। প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই যাতে নির্বাচনি আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন সে ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করুন। কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। কেউ নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন যাতে তারা পক্ষপাতমূলক আচরণ না করেন সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। নির্বাচনে কোনো এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম হলে সেই এলাকার নির্বাচন স্থগিত করুন এবং প্রয়োজনে ফলাফল বাতিল করে নতুন করে ভোট গ্রহণ করুন। সরকারের প্রতি আহ্বান সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করুন। নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোনোভাবেই কোনো দলের পক্ষে প্রভাবিত করবেন না। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি এই বার্তা দিন সরকার অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান : যেকোনো মূল্যে বিজয়ী হওয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করে নির্বাচনকে একটি প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করুন। আমরা বিজয়ী হবোই এ ধরনের বক্তব্য না দিয়ে গণরায় পেতে নেয়ার ঘোষণা দিন। দলের মনোনীত বা সমর্থিত প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনি আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন সে ব্যাপারে তাদের নির্দেশনা দিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করবেন না।
ভোটারদের প্রতি আহ্বান : ভোট প্রদানকে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব মনে করে সৎ যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করুন। অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময় অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, ঋণ খেলাপি, বিল খেলাপি, সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি, ভূমিদস্যু, কালো টাকার মালিক অর্থাৎ কোনো অসৎ, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেবেন না।
সচেতন নাগরিকদের প্রতি আহ্বান : অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য স্ব স্ব অবস্থানে থেকে যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করেন, সেই লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করুন। সৎ যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের পক্ষে আওয়াজ তুলুন এবং এমন পরিবেশ সৃষ্টি করুন, যাতে তারা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাগরিকের জন্য সুশাসনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন।