ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নির্বাচনকালীন সরকারের বাইরে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনায় যেতে রাজি নয় বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আসন্ন সংলাপেও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ২০ জুলাই বিএনপির সঙ্গে সংলাপের তারিখ নির্ধারণ করেছে ইসি।
জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে মতবিনিময়ের পরপরই এবার নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উন্মুক্ত সংলাপে বসতে যাচ্ছে ইসি। এতে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। কোরবানির ঈদের পর ১৭ জুলাই সংলাপ শুরু হবে। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে ইসির এ কার্যক্রম শেষ হবে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন। তারই ধারাবাহিকতায় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন এ কমিশনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করছে। এর আগে শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক, সাবেক নির্বাচন কমিশনারসহ সাংবাদিকদের সঙ্গে কয়েক ধাপে সংলাপ করেছে।
শুরু থেকেই নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের সংলাপ বর্জন করে আসছে বিএনপি। ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আনুষ্ঠানিক সংলাপ বর্জনের মধ্য দিয়ে এর শুরু। এর পর ইভিএম নিয়ে ইসির মতবিনিময়েও যায়নি বিএনপি।
রাষ্ট্রপতির সংলাপের সময় বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটি বলেছে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ছাড়া শুধু নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপকে কেবল সময়ের অপচয় বলে মনে করে বিএনপি। তাই তারা অর্থহীন কোনো সংলাপে অংশ নেবে না।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যখন এই নির্বাচন কমিশন তৈরি করা হয়, আমরা প্রথম থেকেই এর কিছুতেই সম্পৃক্ত নই। আমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। এই সরকার পদত্যাগ করবে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে, সেই সরকারের অধীনে ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না।’
বিএনপির নীতিগত অবস্থান হচ্ছে, তারা আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার বা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না। আলোচনা হবে শুধু নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়—এটাই তাদের মূল দাবি।
বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কোনো নির্বাচন কমিশনই করতে পারবে না। তা ছাড়া আগের কমিশনের মতো বর্তমান নির্বাচন কমিশনও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘পরিকল্পনার’ বাইরে যেতে পারবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন আছে। দ্বিতীয়ত, সরকার ভোট চুরির প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এই কমিশনকে দলীয় খোলোয়াড হিসেবে নামিয়েছে। সুতরাং তাদের সঙ্গে বসতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে রাজনৈতিকভাবে সমাধানে না আসা পর্যন্ত ইসির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় কোনো সুফল আসবে না। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এরপর নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তারাই সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, সেই কমিশনের সঙ্গেই নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসবে বিএনপি। এই অবস্থান থেকেই বিএনপি ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে অংশ নেয়নি। এটাকে ভিত্তি ধরেই বিএনপি রাজপথে সরকারবিরোধী একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে।
ইসির এ দফার সংলাপে যাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা কোনো কথাই বলব না, কেবল নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া।’