ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানও ডিজিএফআই এর কুখ্যাত ‘আয়নাঘর’-এর একজন ভিকটিম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আপনারা দেখেছেন, এই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিভাবে তুলে নিয়ে যায়, নেত্র নিউজে যে খবর বেরিয়েছে- তাদের টর্চার সেল আছে। তার নাম দিয়েছে আয়না ঘর। যাদেরকে মেরে ফেলতে হয় তাদেরকে মেরে ফেলে, যাদেরকে রেখে দিতে হয় তাদের রাখে, টর্চার করে, বছরের পর বছর তাদেরকে রাখে।
মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের উদ্যোগে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ-র্যাব কর্তৃক গুম-খুন-ক্রসফায়ারে হতাহত নেতা-কর্মীদের পরিবারকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ভোলা, ফেনী, নেত্রকোনা, চট্টগ্রামের যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দলের ১৪ জন নেতা-কর্মীর পরিবারকে এককালীন ও শিক্ষাবৃত্তির আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। গত ৯ বছরে সারাদেশে গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার ৩২৭টি পরিবারকে সহায়তা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী হেল্প লাইন।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব তিনি নিজে বলেছেন, আমি নিজে একজন ভিকটিম। তাকে যখন ১/১১ সময়ে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সময়ে তাকে রিমান্ডের নাম করে নিয়ে আসা হয়েছিলো। এমন টর্চার করা হয়েছিলো যে, তার কোমড় ভেঙে গিয়েছিলো।
আমরা যারা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা কল্পনাও করিনি যে, এই বাংলাদেশ আমাদের দেখবে হবে। আজকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে এজন্য কি আমরা যুদ্ধ করেছিলাম?
গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার পরিবারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই কথা আমরা দিতে পারি, আমরা যদি এই সরকারকে পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, একটা সত্যিকারের জনগণের পার্লামেন্ট আনতে পারি তাহলে আমাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের পূর্ণবাসনের জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা ভুক্তভোগী হয়েছেন, ভিক্টিম হয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় সিস্টেমের মধ্য দিয়ে ব্যবস্থা করা হবে। আমরা এতোটুকু বলতে পারি, আমরা আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) থেকে আমাদের আবার নতুন করে গ্রাম পর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং সেটা হচ্ছে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে। গোটা দেশের মানুষ দেখছে যে, মানুষ কিভাবে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। প্রায় প্রতিটি থানা-উপজেলাতে কিন্তু বড় বড় মিছিল হয়েছে। এর মধ্যেও তারা কেউ থেমে নেই। গতকাল লক্ষীপুরে শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে আক্রমণ করেছে, বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি-যুব দল-ছাত্র দলের নেতাদেরকে ঘর থেকে ধরে এনে মারধর করেছে, অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। সমস্যাটা ওই জায়গায় শেখ হাসিনার, আওয়ামী লীগের। এতো নির্যাতন, এতো নিপীড়ন, এতো হত্যা, এতো গুম-খুনের পরেও বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিএনপি সেই ফিনিক্স পাখির মতো আবার ওই ধ্বংসাবশেষ থেকে জেগে উঠছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রীকে বেগম খালেদা জিয়াকে তারা (সরকার) বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। বিরোধিতা করে। কেনো? যদি তিনি বেরিয়ে আসেন তাহলে তারা সামাল দিতে পারবে না। তারেক রহমান সাহেব যদি দেশে আসেন তাহলে এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসবে-এই ভয়েই তারা সেটা করতে চায় না। আমরা যারা দেশে আছি আমরাও তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশে কিন্তু এখন জেগে উঠছি। জেগে উঠতে হবে- বিকল্প নেই আমাদের কাছে। এই জেগে উঠার মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এই দানবকে উপড়ে ফেলে জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
‘এরা উন্নয়নের বড়াই করছে’:
মির্জা ফখরুল বলেন, এরা বড়াই করছে-সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিয়েছে, মালয়েশিয়া বানিয়ে দিয়েছে। মানুষের পার কেপিটা ইনকাম নাকী ২৮‘শ টাকা হয়ে গেছে। আর এদিকে চা শ্রমিকেরা ১২০ টাকা প্রতিদিন পায়। তারা আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে। তারপরে তারা (সরকার) বলে, আমরা নাকী তাদের উন্নয়ন দেখতে পাই না। আপনারা তো আওয়ামী লীগের যতজন মানুষ আছেন আপনারা জনগণের পকেট কেটে নিজেদের পকেট ভারী করেছেন আর উন্নত হয়েছেন, ধনী হয়েছেন।
জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের সদস্য যুব দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানের সভাপতিত্বে এবং হেল্প সেলের সদস্য মামুন খান, ফয়সাল আহমেদ ও নাসির উদ্দিন শাওনের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের পারভেজ রেজা কাকন, হেল্প সেলের সুমন আহসান, ওবায়দুর রহমান, কাজী এমদাদুল ইসলাম, শরীফুল ইসলাম রাসেল, এমদাদুল হক লিমন বক্তব্য রাখেন।