ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর্থিক স্বচ্ছতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ন্যূনতম শর্ত পূরণকারী দেশগুলোর তালিকা প্রকাশ করে।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়,শর্তপূরণে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে আর্থিক স্বচ্ছতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ন্যূনতম শর্ত পূরণকারী দেশগুলোর তালিকায় নেই বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছতার মানকে উন্নত করতে চার দফা সুপারিশ করা হয়েছে। তা হলো- এক. আন্তর্জাতিক নীতিতে গ্রহণযোগ্য বাজেট ডকুমেন্ট প্রস্তুত করতে হবে। দুই. সর্বোচ্চ নিরীক্ষা বা অডিট বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতার মানদণ্ড পূরণ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের থাকতে হবে পর্যাপ্ত জনবল। তিন. সময়মতো অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। থাকতে হবে বাস্তব অনুসন্ধান তথ্য, সুপারিশ এবং বিস্তারিত নিরীক্ষা প্রতিবেদন। চার. প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে সম্পাদিত চুক্তির মৌলিক তথ্যগুলো জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে এবং অব্যাহতভাবে তাদের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। এতে বাংলাদেশের যেসব অসঙ্গতি আছে তাও তুলে ধরা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের শিরোনাম- ২০২২ ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট (এফটিআর)। মোট ১৪১টি দেশের ওপর এই মূল্যায়ন উপস্থাপন করা হয়। বলা হয়, ওই দেশগুলোর মধ্যে ৭২টি দেশ আর্থিক স্বচ্ছতার ন্যূনতম শর্ত পূরণ করেছে। ৬৯টি দেশ তা পূরণ করতে পারেনি। তবে আর্থিক স্বচ্ছতার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শর্ত পূরণের জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে ২৭টি দেশ। তার মধ্যে আছে বাংলাদেশ।
যে দেশগুলো ২০২২ সালে ন্যূনতম শর্ত পূরণ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আলবেনিয়া, আর্জেন্টিনা, আর্মেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বোতসোয়ানা, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, ক্যাবো ভারডি, চিলি, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা, আইভরিকোস্ট, ক্রোয়েশিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, ফিজি, গাম্বিয়া, জর্জিয়া, ঘানা, গ্রিস, গুয়াতেমালা, গায়ানা, হন্ডুরাস, হাঙ্গেরী, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইসরাইল, জ্যামাইকা, জর্ডান, কোনিয়া, কসোভো, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মালয়েশিয়া, মালটা, মার্শাল আইল্যান্ডস, মৌরিতিয়াস, মেক্সিকো, মাইক্রোনেশিয়া, মলদোভা, মঙ্গোলিয়া, মন্টিনেগ্রো, মরক্কো, নামিবিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, নর্থ মেসিডোনিয়া, পানামা, প্যারাগুয়ে, পেরু, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, সামোয়া, সার্বিয়া, সিসিলি, সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তিমুর লেস্তে, টোগো, টোঙ্গা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, তিউনিশিয়া, তুরস্ক এবং উরুগুয়ে। এই তালিকায় রয়েছে এশিয়া মহাদেশের ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার নাম। অন্যদিকে বাংলাদেশ যাদের কাতারে আছে তার মধ্যে আছে পাকিস্তান, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান ও মিয়ানমার। ২০১৪ সালে যেসব দেশকে আর্থিক স্বচ্ছতা বিষয়ক রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছিল, তাদের পারফরমেন্স রিভিউ করা হয় এতে।
যেসব দেশ আর্থিক স্বচ্ছতায় যারা ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি, তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে এতে। ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে এসব দেশ ২০২১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই শর্ত পূরণের দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে কিনা। আর্থিক স্বচ্ছতা নাগরিকদের কাছে তথ্য পৌঁছে দেয় যে, কীভাবে সরকার এবং ট্যাক্স রেভিনিউ খরচ করা হচ্ছে। একে বলা হয় সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি কার্যকর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর মধ্যদিয়ে বাজেট সম্পর্কে জানতে পারে নাগরিকরা। ফলে তারা সরকারকে জবাবদিহিতায় নিতে পারে। আয়-ব্যয় সহ বাজেটের তথ্যের পর্যাপ্ততা ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের জন্য সরকারের বিভিন্ন চুক্তি ও নিবন্ধন দেয়ার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা মূল্যায়ন করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এর বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, রিভিউ সময়কালে সরকার বছরের শেষে যৌক্তিক সময়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে বাংলাদেশ। তারা এক্সিকিউটিভ বাজেট প্রস্তাব তৈরি করেছে। জনগণ যাতে সহজেই হাতের নাগালে পায়, সেজন্য এই বাজেটকে অনলাইনে সহজলভ্য করেছে। ঋণ বাধ্যবাধকতা বিষয়ক তথ্য জনগণের জন্য সহজলভ্য ছিল।
সরকারি ব্যাজেট এবং প্রাকৃতিক সম্পদভিত্তিক রাজস্ব সহ সব রকম রাজস্বের বিষয়ে সরকারের একটি বাস্তব চিত্র সরবরাহ করা হয়েছে। তবে বাজেট বিষয়ক তথ্য সাধারণত নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য নীতি (প্রিন্সিপালস) অনুযায়ী এই বাজেট ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা হয়নি। সরকারের সর্বোচ্চ অডিট সংস্থা সরকারি হিসাব রিভিউ করে দেখেছে। কিন্তু রিভিউ রিপোর্টে উল্লেখযোগ্য বাস্তবসম্মত কোনো অনুসন্ধান তথ্য ছিল না। একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তা জনগণের জন্য সহজলভ্য করা হয়নি। সর্বোচ্চ অডিট প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করেনি। সরকার আইন বা প্রবিধান নির্দিষ্ট করেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ চুক্তি এবং লাইসেন্স প্রদানের জন্য মানদণ্ড এবং পদ্ধতিগুলো অনুশীলন করতে দেখা গেছে। কিন্তু এসব বিষয়ে মৌলিক তথ্য জনগণের জন্য অবাধ নয়।