DMCA.com Protection Status
title="৭

হাসিনা সরকারবিরোধী প্রচারণায় জড়িত প্রবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হাসিনা সরকার বিরোধী প্রচারণায় জড়িত প্রবাসী ও অভিবাসীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে বিদেশে থাকা বাংলাদেশের মিশনগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই নির্দেশনা জারি করেছে। পররাষ্ট্র  মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ওই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

গত মাসে কমিটির ২৯তম বৈঠকে করা সুপারিশে বলা হয়- বিভিন্ন ডায়াসফোরাগুলোর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলার জন্য মিশনগুলোর জোরালো ভূমিকা পালনের পাশাপাশি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেল গঠনপূর্বক বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো বিশ্ববাসীর কাছে ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে হবে। গতকাল সংসদ সচিবালয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩০তম বৈঠকে মন্ত্রণালয় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। সেখানে ওই সুপারিশের বাস্তবায়ন অগ্রগতি জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মুহাম্মদ ফারুক খান।

 এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে আব্দুল মোমেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মো. আব্দুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত, নাহিম রাজ্জাক ও কাজী নাবিল আহমেদ। সংসদীয় কমিটি জানিয়েছে, সরকারবিরোধী প্রচারণায় জড়িত প্রবাসী ও অভিবাসীদের শাস্তির আওতায় আনা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়- দেশের বাইরে অবস্থান করে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানকারী এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের ওই দেশের আইনের আওতায় আনয়ন করে শাস্তির/বিচারের মুখোমুখি করতে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট সরকারসমূহের নিকট আবেদন জানানোর জন্য মিশনগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মিশন প্রধানগণকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত এ ধরনের ব্যক্তিদের একটি তালিকা ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনসমূহের অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। 

রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে- বিদেশে অবস্থানকারী সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানকারী এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের শাস্তি প্রদানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারগণকে ওই দেশের জন্য প্রযোজ্য আইন-কানুন চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের কার্যক্রম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পোস্টসমূহ নিয়মিত নজরদারি করার জন্য এবং তাদের কর্তৃক প্রচারিত মানহানিকর, মিথ্যা ও উস্কানিমূলক তথ্য চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানকারী সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানকারী এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের প্রচারণার সহযোগীদেরও চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারগণকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই বিষয়ে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠানোর জন্য মিশনসমূহকে নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো বিশ্ববাসীর কাছে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা এবং বাংলাদেশ বিরোধী নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা মোকাবিলার জন্য স্থায়ী কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের আওতায় একটি স্থায়ী ও শুধুমাত্র এই কাজে নিবেদিত একজন পরিচালকের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা জরুরি বলে প্রতীয়মান হয়। এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগে ‘অভিবাসী কূটনীতি’ নামে একটি অধিশাখা সৃজন করা ও একজন পরিচালকসহ দুই জন সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা উক্ত ‘অভিবাসী কূটনীতি’ অধিশাখায় পদায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগসহ অন্য অংশীজনের কাছে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের বিবরণ বিশ্ববাসীর কাছে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য জনকূটনীতি অনুবিভাগ এইসব সাফল্যের বিবরণ সম্বলিত বাংলাদেশ রাইজিং নামে একটি প্রকাশনা নিয়মিতভাবে প্রকাশ করছে এবং বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোর কাছে পাঠাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী/অভিবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট দেশে তাদের মেধা, শিক্ষা ও কাজের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। 

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর পাশাপাশি স্বাগতিক দেশে তাদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের নাম ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। স্বাগতিক দেশে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণেও তারা অনেক সময় ভূমিকা রাখতে পারেন। দুঃখজনক হচ্ছে, ইতিবাচক অবদান রাখার পাশাপাশি প্রবাসী/অভিবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য মিডিয়ায় তাদের সরব উপস্থিতি ও দেশবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য, বক্তব্য ও প্রচারের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। স্বাগতিক দেশের নানাবিধ আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ হয়ে পড়ে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!