ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশে যারা গত কয়েক বছরে ‘গুম’ হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তাদের অনেকেই এখন বিএনপির মিছিল করছে৷ কেউ আবার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন বাংলাদেশের অনির্বাচিত সরকার প্রধান।মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকার ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়েছে।
ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এসময় বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, মিডিয়ার স্বাধীনতা, আগামী নির্বাচন ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন শতরূপা বড়ুয়া। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রশ্নের জবাব দেন ও নানা বিষয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলের নানা অর্জনও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে গুম-খুনের যে অভিযোগগুলো আছে সেগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার কী ভাবছে?
এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের একটা মানবাধিকার কমিশন আছে। তারা কিন্তু তদন্ত করছে। যখন আমরা তালিকা চাইলাম, তখন ৭০ জনের একটা তালিকা দেওয়া হলো। সেখানে দেখা গেল বেশির ভাগই বিএনপির অ্যাকটিভিস্ট, তারা এখন মিছিল-মিটিং করছে। অনেকে ব্যক্তিগত কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না, এ জন্য নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'মারা গেছে এমন সাতজনের তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন না, মানবাধিকার সংরক্ষণ করেছি।'
বিএনপির নির্বাচনকালীন ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে দেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আইনের মাধ্যমে কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন তৈরি হয়েছে। তাদেরকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করে দেওয়া হয়েছে।তারা নির্বাচন যাতে ফেয়ারভাবে করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা আছে।'
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নেবে বাংলাদেশ। আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কী?
ভয়েজ অব আমেরিকার এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০২১ সালকে লক্ষ্য করে আমরা আমাদের পরিকল্পনাটা নিলাম। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০১৪ সালে নির্বাচন হলো। জনগণ আমাদের কাজে খুশি হয়ে আমাদের আবার ভোট দিল, আমরা দ্বিতীয়বার এলাম। এর সুবিধা হলো ধারাবাহিকতা থাকলে কাজগুলো আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।'
তিনি বলেন, 'তৃতীয়বারও যখন নির্বাচন হলো তখন আমাদের ভোট দিল এবং আমাদের কাজগুলো করতে পারলাম। দারিদ্র্য ৪১ শতাংশ থেকে ২০.৫ শতাংশে নামালাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ১৬-১৭ শতাংশে নিয়ে আসব। এর মধ্যে করোনাভাইরাস এসে আমাদের অগ্রযাত্রাটা একটু ব্যাহত করে দিল। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, সেটাও একটা বাধা সৃষ্টি করল।'
সম্প্রতি একাধিকবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবে না। সরকার কেন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা জানতে চায় ভয়েজ অব আমেরিকা।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের তো এমনিতেই ঘনবসতির দেশ। তার ওপর এত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এভাবে থাকা তো একটা বোঝার মতো হয়ে যাওয়া। কত দিন এই রিফিউজি থাকবে, তাদের তো নিজের দেশে ফিরে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বারবার অনুরোধ করেছি যে আপনারা একটা ব্যবস্থা নেন যাতে তারা নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে। তারা দীর্ঘদিন থাকার ফলে কক্সবাজারের সমস্ত পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। ইদানীং আবার মিয়ানমারে গোলমাল শুরু হয়েছে। তো এ জন্যই বলা হয়েছে, আমরা তো আর নিতে পারব না, সম্ভব না।'