ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে নেই। কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে পারে, কিন্তু জাতীয় পার্টি কারো দাসত্ব করবে না।
তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলি, আমরা দেশের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি করি। আমাদের রাজনীতি দেখে অনেকেই মনে করছেন, আমরা অন্য কারো সঙ্গে হাত মিলিয়েছি। আমরা আসলে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করছি। কারো সঙ্গে নাকে খত দিয়ে রাজনীতি করব না। কারো দালালি করতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি নয়।
আজ রবিবার (০৯ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন জিএম কাদের।
মতবিনিময়ে প্রতিটি উপজেলার নেতারা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
তারা বলেন, ময়মনসিংহ জেলা জাতীয় পার্টি, ময়মনসিংহের সব উপজেলা এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র নসাৎ করে দেবে।ময়মনসিংহের মাটিতে কোনো ষড়যন্ত্রকারীর জায়গা হবে না বলেও ঘোষণা করেন তারা।তারা এও বলেন, ময়মনসিংহে জাতীয় পার্টির প্রতিটি নেতাকর্মী পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ফখরুল ইমাম এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বড় গাছের ছায়াতলে থাকলে ছোট গাছ বেড়ে উঠতে পারে না। বড় গাছের ছায়াতলে না থাকলে ঝড়-ঝঞ্ঝা আসে, তা মোকাবিলা করেই দাঁড়াতে হয়। জাতীয় পার্টি কারো ছায়াতলে যাবে না। তাই ঝড়-ঝঞ্ঝা আসবে। আমরা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব।কারো ছায়াতলে থেকে, কারো দালালি অথবা চাকর হয়ে রাজনীতি করলে সম্মান পাওয়া যায় না। আমরা সম্মানের জন্য রাজনীতি করছি। টাকার জন্য ব্যবসা করা যায়, ঘুস খাওয়া যায় কিন্তু রাজনীতি করা উচিত নয়। জাতীয় পার্টি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আদর্শ নিয়ে এগিয়ে যাবে।’
এ সময় জিএম কাদের আরও বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আমরা মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচনের বিরোধিতা করছি। আমরা মনে করি, ইভিএমে কারচুপির সুযোগ আছে। ইভিএমে কারচুপি করে ফলাফল ঘোষণা হলে চ্যালেঞ্জ করা যায় না।’
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের কেউ কেউ মনে করছেন, একটি দল নির্বাচনে কারচুপি করে বিজয়ী হয়ে শর্টকাট পদ্ধতিতে তাদের মন্ত্রী-এমপি করবেন। এটা যারা মনে করেন তারা জাতীয় পার্টির জন্য জীবাণু। তাদের জাতীয় পার্টি থেকে চলে যেতে হবে অথবা সংশোধন হতে হবে। আমরা শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়তে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব। প্রয়োজনে অপ্রিয় কিছু সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হব না।’
এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুর্নীতি, দুঃশাসন আর দলীয়করণের মাধ্যমে দেশের মানুষের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। তাই দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় একটি শক্তিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। দেশের মানুষ এখনো জাতীয় পার্টির স্বর্ণালী যুগের কথা মনে রেখেছেন। তারা আবারো জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। আমরা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতেই রাজনীতি করছি।’
তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার সংবিধান কাটাকাটি করে এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা দিয়েছে। নির্বাহী বিভাগ, আইন সভা এবং বিচার বিভাগের বেশিরভাগই এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে। এটা কখনোই গণতন্ত্র হতে পারে না।’
সভাপতির বক্তব্যে ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় পার্টিতে কারো বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ নেই। পল্লীবন্ধুর সৈনিকরা কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করবে জাতীয় পার্টি। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি। কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না দিতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতেও আহ্বান জানান ফখরুল ইমাম।
এ সময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, কোনো দালালের ষড়যন্ত্রে জাতীয় পার্টিতে বিভাজন হবে না। যারা পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। তিনি বলেন, বেগম রওশন এরশাদ ৯ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার পক্ষে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব বা কাউন্সিল করা সম্ভব নয়।