ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হাসিনা সরকার ‘ক্ষমতা হারানোর ভয়ে’ এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বিদায় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তার বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার বিকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সারাদেশে ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, জামিন বাতিল করে নেতাকর্মীদের কারাগারে প্রেরণ, পুলিশি হামলা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকায় এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন ঢাকা মহানগরীর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে জড়ো হওয়ায় ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইলের নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খুব ঘাবড়ে গেছে। হাসিনা সরকার এতো ঘাবড়ে গেছে যে, এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের তারা চাকরি থেকে বিদায় দেয়া শুরু করেছে ভয়ে। গত পরশু খবরের কাগজে বেরিয়েছে এই যে ঋণ নিয়ে কাজ করে, বিদেশ থেকে ধার নেয়, অন্যান্য সাহায্য সংস্থা থেকে ঋণ নেয় এখন আর শোধ করতে পারছে না। তারপর কি হবে? সমস্ত বিদেশি ঋণ দেয়া বন্ধ করে দেবে। রিজার্ভ শূন্যের কোঠায় চলে যাচ্ছে। অত্যন্ত পরিষ্কার কথা, আপনাদের আর এদেশ শাসন করবার কোনো অধিকার নেই। আপনারা দুর্নীতি-দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে আজকে দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। আপনারা দয়া করে মানে মানে কেটে পড়–ন। যদি সরে না পড়েন তবে এদেশের মানুষ কিভাবে সরাতে হয় তা জানে।
তিনি বলেন, আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই আবারো যে, অবিলম্বে সংসদ বিলুপ্ত করে পদত্যাগ করুন এবং একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে সকল দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা জনগণের পার্লামেন্ট, একটা জনগণের সরকার গঠন হবে। একই সঙ্গে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
খুলনাতেও জনতার ঢল নামবে বলে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভিন্নভাবে চর্তুদিকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, বাধার সৃষ্টির করছে। ময়মনসিংহের বিভাগীয় সমাবেশে আপনারা জানেন পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিলো। ঠিক একইভাবে খুলনায়ও তারা দুই দিন আগে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে কি লাভ হয়? মানুষ কি থেমে থাকে। মানুষ নিজে হেটে দলে দলে তারা বিভিন্নভাবে সমাবেশে উপস্থিত হয়। খুলনাতেও একই ঘটনা ঘটবে, খুলনাতেও লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের মতো করে সমাবেশে উপস্থিত হবে।
সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই মিথ্যা মামলা দেয়া বন্ধ করেন, এই অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করেন, পুলিশের মানুষ হত্যা করা বন্ধ করেন। না হলে এদেশের মানুষ কোনো অত্যাচারিকে ক্ষমা করে নাই। আপনাদেরও ক্ষমা করবে না। ইতিহাস ভুলে যান কিভাবে? দেয়ালের লিখন পড়তে পারেন না। সাধারণ মানুষের চোখের দিকে তাকান, তাদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। তারা এক কথায় বলে- এই মুহূর্তে পদত্যাগ করো, গদি থেকে সরে যাও। এই সমাবেশে রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা আমাদের কথা শুনছেন, আমাদের কর্মচারি ভাইয়েরা বিভিন্ন দোকান থেকে আমাদের কথা শুনছেন। তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন যে, আজকে চালের দাম ৯০ টাকা কেনো? উনি বলেছিলেন ১০ টাকায় চাল খাওয়াবেন. ডালের দাম বেশি কেনো, লবণের দাম বেশি কেনো, চিনির দাম বেশি কেনো?
তিনি বলেন, এই সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ একটাই-লুট। লুট করে করে তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে অর্থ-সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে।
বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধৈর্য ধরেন। বিদ্যুৎ পেয়েছেন, আবারো বিদ্যুৎ পাবেন। আমাদের তো জীবন অতিষ্ঠ- লোডশেডিং লোডিশেডিং লোডশেডিং। প্রতিদিন ৪/৫ বার লোডশেডিং হয়। আমাদের ফ্যাক্টরীগুলো চলে না, ফ্যাক্টরীগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী বন্ধ হচ্ছে। মালিকেরা বলছেন, এভাবে যদি চলতে থাকে, যদি বিদ্যুৎ না পাই, গ্যাস না পাই তাহলে ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দিতে হবে। এসব ফ্যাক্টরী বন্ধ করলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে।
রুপপুরে আণবিক চুল্লী স্থাপন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, যে দেশে তারা (সরকার) বিদ্যুৎ ঠিক মতো দিতে পারে না, সঞ্চালন করতে পারে না, বিতরণ করতে পারে না সেখানে এতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করার একটা মাত্র কারণ। যেটা করতে গেলে তো প্রচুর পরিমাণ চুরি করতে পারে, তারা কমিশন পায়। সেজন্য তারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। দেখবেন চারদিকে তাকিয়ে- মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করছে। আজকে সমস্ত দেশকে তারা পুরোপুরিভাবে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের দেশ শাসনের কোনো অধিকার নেই জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। ভালোয় ভালোয় সরে পড়েন। নইলে দেশের জনগণ জানে কিভাবে সরাতে হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই সরকারের গণবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আমাদের আন্দোলন। সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন। আমরা বলতে চাই আমাদের যেসব সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন তাদের রক্ত ও আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। আমরা তাদের হত্যার মধ্য দিয়ে এই দানবীয় আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ চাই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে মিথ্যা মামলা ও গুলি করে মানুষ হত্যা বন্ধ করেন। ইতিহাস ভুলে যাবেন না। দেশের মানুষ কাউকে ক্ষমা করেনি। দেয়ালের লিখন পড়ুন। সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে শিখুন। আজকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেশি কেনো।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, যেখানেই বাধা সেখানেই সমাবেশ। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা হবে সমাবেশের শহর। হাসিনা কতো বাধা দিবেন? হাসিনার দিন শেষ। আরেক মহূর্তে এই সরকারকে কেউ দেখতে চায় না। আমাদের দাবি এখন একটাই সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ। পুলিশ ও প্রশাসনকে বলবো আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন কারণ হাসিনা আর নেই। শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতে দেয়া হবে না। এ সময় তিনি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ আবদুস সালাম বলেন, খেলা শুরু হয়ে গেছে। আর আওয়ামী লীগ হাবুডুবু খাচ্ছে। আওয়ামী লীগ লেজ গুটিয়ে দৌড় দিছে। তাদেরকে এখন তারেক রোগে পাইছে। তারেক রহমান দেশে আসলে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশের আসন্ন দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচতে হলে সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। ৫ জনকে হত্যা করেছেন। প্রয়োজনে বুক পেতে দিবো। কিন্তু আপনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। যারা সমাবেশে যাওয়ার আগেই বাস চলাচল বন্ধ করে দেন তাদের কালো তালিকা করা হবে। আমরা অনেক সহ্য করেছি আর নয়। আমরা যেকোনো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নুল আবদীন ফারুক, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, জাসাসের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব মোঃ আব্দুর রহিম, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। এছাড়াও বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সহ- সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সহ-তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজ্জামেল হক, হায়দার আলী খান লেলিন, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, সাবেক সহ সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নাজমুল হাসান, আনু মোহাম্মদ শামীম, সর্দার নুরুজ্জামান, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, জাসাসের মিজানুর রহমান সর্দার মিলন, সহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।