ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে জনগণের উত্তাল তরঙ্গে মিডনাইট আওয়ামী লীগ সরকার ভেসে যাবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে দুর্ভিক্ষ আসবে। ২০১৮ সালের মতো তাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) আর সুযোগ দেয়া হবে না। তাই পরিষ্কার করে বলছি, এখনি পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নইলে জনগণের উত্তাল তরঙ্গে এই সরকারকে ভেসে যেতে হবে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত কৃষকদলের ‘কৃষক সমাবেশে’ তিনি এসব কথা বলেন। সার, বীজ, ডিজেল, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম কমানো এবং কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের উদ্যোগে এই কৃষক সমাবেশ হয়। এতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকদলের নেতাকর্মীরা এই সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশের শুরুতে মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীর এই দিনে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি দুর্ভিক্ষের কথা বলেছেন। দুর্ভিক্ষ তো আসবে গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে। এখনও সময় আছে নিরাপদে প্রস্থান করুন। তা না হলে রেহাই নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কৃষকদের কোমর ভেঙে দিয়েছে। কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। ডিজেলের দাম বেড়ে গেছে ৫ গুণ। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ গুণ। তাহলে এখন কৃষকরা কোথায় যাবে? তাই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। সরকার বিভাগীয় সমাবেশ বানচালে পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা সমাবেশকে বানচাল করার জন্য পুলিশকে লাগিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন জায়গায় মারামারি করার জন্য। সিরাজগঞ্জে গুলি করেছে, আমাদের ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সাহেবের স্ত্রীকে পর্যন্ত গুলি করেছে, সিলেটে গুলি করেছে, গোলমাল করেছে, হবিগঞ্জে গুলি করেছে। কেন? সমাবেশকে আপনারা এতো ভয় পান কেন? আজকে জনগণ জেগে উঠছে, জনগণ জেগে আছে। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এখনই পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং নির্দলীয় কেয়ার টেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। ক্ষমতা দিয়ে আপনি অবশ্যই একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, জনগণের পার্লামেন্টের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণের উত্তাল তরঙ্গে আপনাদেরকে বিদায় নিতে হবে। তাই আবারো বলছি, এখনো সময় আছে সেইভ এক্সিজিট নিন, সরে যান মানে মানে।
মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশের কৃষকরা যারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলায়। যাদের গায়ে পারফিউমের গন্ধ থাকে না, সেন্টের গন্ধ থাকে না, তাদের গায়ে থাকে মাটির গন্ধ, তাদের গায়ে থাকে সেই বৃষ্টিতে ভেজা কাদার গন্ধ। তারা দিনরাত্রি পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়ে এদেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আপনাদের (কৃষকদের) নির্বাচনের সময় সার দেবে বলেছিল। বিনা মূল্যে সার দিয়েছে। দেয় নাই। এখন ইউরিয়া সার, পটাশ সারের দাম কত? অনেক বেড়ে গেছে। এখন ধান বিক্রি করে ধানের দাম পাওয়া যায় না, ন্যায্যমূল্য পায় না। এখন অনেক প্রান্তিক কৃষক ক্ষেত ছেড়ে, মাঠ ছেড়ে ঠেলাগাড়ি-ভ্যান চালায়। এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কৃষকের কোমর, কৃষকের মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বর্তমান সরকারকে সরানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কি ২০১৮ সালের আগের রাতে নির্বাচনে যাব? শেয়ালের কাছে মুরগি দেবো? না। তাহলে শেখ হাসিনাকে সরাতে হবে। শেখ হাসিনাকে সরাতে হলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
কৃষকদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি কৃষক ভাইদের বলব, আজকে এখান থেকে গিয়ে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ুন, সমস্ত কৃষককে জাগিয়ে তুলুন। এই দেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, এই জাতিকে যদি রক্ষা করতে হয়, আপনার অধিকারকে যদি রক্ষা করতে হয় তাহলে আজকে সমস্ত দেশবাসীকে নিয়ে, কৃষকদের নিয়ে আপনাদেরকে জেগে উঠতে, পরাজিত করতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে। মুক্ত করতে হবে দেশনেত্রীকে, ফিরিয়ে আনতে হবে তারেক রহমানকে। এই জনগণকে সংগঠিত করুন।
কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় কৃষক সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, সদস্য তাবিথ আউয়াল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেন প্রমুখ।