ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জোরপূর্বক ঢুকে পুলিশ অভিযান পরিচালনাকে পৈশাচিক ও সংবিধান বিরোধী বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ বুধবার রাতে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে বসে থাকা অবস্থায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা বর্বরোচিত পৈশাচিক, নারকীয় ও মর্মান্তিক ঘটনা। আমি মনে করি যে, কোনো সভ্য দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এখানে একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল তার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এইভাবে রেইট করা এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য না।”
‘‘এধরনের ঘটনা ঘটিয়ে তারা সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে, আমাদের অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। এটা গণতন্ত্রকে ধবংস করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন করার শামীল। এটা গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত। এর থেকে খারাপ কাজ কিছু হতে পারে না। আমার ভাষা নাই বলার। আই্ অ্যাম শক লাইক এনিথিং টুডে।”
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, ‘‘একটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বানচাল করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে।”
আপনি কি সারা রাত থাকবেন এখানে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘ইটস ডিপেন্ড তারা কখন এই অভিযান শেষ করে তার ওপর।”
বিকাল ৫টায় বিএনপি অফিসের প্রবেশ করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। কলাপসেবল গেইট বন্ধ করে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা এই অভিযান শুরু করে। মির্জা ফখরুল একাধিকবার পুলিশ কর্মকর্তাদের শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে তাকে তার অফিসে প্রবেশ করতে দেওয়ার জন্য বললেও তারা বিএনপি মহাসচিবে কথা কর্ণপাত করেননি।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, ‘‘এটা ক্রাইম জোন। স্যার একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমি উপরের সাথে কথা বলে নেই।”
বিএনপি মহাসচিব কর্মকর্তাদের বলেন, ‘‘আমি পুলিশ কমিশনারের সাথে বলে এসেছি। আপনি কথা বলুন। আমাকে যেতে দিন।”
পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে বলেন, ‘‘স্যার দেখছি স্যার।”
এই পর্যায়ে বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে থেকে পুলিশ শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে আটক করে বের করে নিয়ে আসে ।মহাসচিব পুলিশ কর্মকর্তাদের বলতে গেলে মহাসচিবের কথা কর্ণপাত না করে শিমুল বিশ্বাসকে নিয়ে যায়।
পরে বিএনপি মহাসচিব ফুটপাতে বসে পড়েন।
এই পর্যায়ে পুলিশ ভ্যান এসে নেতা-কর্মীদের লাইন দাঁড় করায় এবং কর্মীদেরকে পুলিশ ‘হাত উচু’ করে পুলিশ ভ্যানে তুলতে থাকে। রাত ৭টা পর্যন্ত দুই ভ্যানে করে পর্যায়ক্রমে চার দফায় নেতা-কর্মীদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
দলীয় কার্যালয়ের নিচতলায় নেতা-কর্মীদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে রাখে।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, আপনাদের কত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘মোর দেন দুই হান্ডেড। সিনিয়র লিডারস রয়েছেন। মহানগর নেতাদের নিয়ে গেছে। অফিসে রেইট করে বিস্ফোরন রেখে দিয়ে উল্টো অভিযোগ দেবে। আমান উল্লাহ আমান, আবদুল সালাম, রুহুল কবির রিজভী, শহিদউদ্দিন চৌধুরী, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েলসহ সবাই নিয়ে গেছে শুনেছি। কত জন গ্রেফতার করেছে সেটা আমি তো পারফেক্টলি বলতে পারবো না।”
‘‘আহত হয়েছে শুনেছি শতাধিক।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আজকে যেভাবে রেইট হলো সেটা আগেরটার সেইম কেইস। আগে যারা অভিযানে ছিলেন আজকেও তাদেরকে দেখা গেছে। সেই গ্রুপই ছিলেন।”
‘ফখরুল আবেগ প্রবন হয়ে উঠেন’
মির্জা ফখরুল বলেন,‘‘এই ভয়াবহ নির্যাতন, অসহায় গণতান্ত্রিকামী মানুষগুলো আজকে দেখছেন কিভাবে নিয়ে যাচ্ছে( আবেগ প্রবণ কন্ঠে)। এটা কি বলব। এটার জন্য আমরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম?”
পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা এই অসহায় মানুষগুলোকে এভাবে ধইরেন না। এটা ঠিক নয়। দিস ইজ টু মাচ। ইন মাই প্রেজেন্টস আপনারা একরম ঠিক করছেন না।”
এই সময়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্মীদের হাত উুঁচ করে নিয়ে যাওয়া থামায়নি।
এই পর্যায়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে অনুরোধ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘প্লিজ আমি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমাকে অফিসে যেতে দিন।”
পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, ‘‘দেশটা আমাদের সকলে। এভাবে আপনারা রেইট করতে পারেন না। পলিটিক্যাল পার্টি অফিসে এভাবে রেট কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না।”
‘পুলিশই এই ঘটনা ঘটিয়েছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘বেলা তিনটা দিকে পুলিশ রবার বুলেট দিয়ে গুলি ছুঁড়তে ছুড়তে আমাদের অফিস আক্রমন চালায়। আর এরপরে আমি যখন এখানে আসে প্রবেশ করতে চাই, আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। আমাকে এখানে আটকিয়ে রাখা হয়।”
‘‘তারা ভেতরে ঢুকে ব্যাগ-টেক নিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত ২ জন ছাত্র নেতা শহীদ হয়েছেন। পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
রাতে সাড়ে ৭টা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশের অভিযান চলছিলো এবং বিএনপি মহাসচিব ফুটপাতে বসে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘‘আমি সকলের সঙ্গে কথা বলেছি। আই টক টু ডিএমপি কমিশনার, আই টক টুক হোম মিনিস্টার। কোনো লাভ নেই। ইনফেক্ট এখানে দেয়ার ইজ নো গর্ভামেন্ট, দেয়ার ইজ নো স্টেট হিয়ার।”
নেতাদের গ্রেফতার সম্পর্কে ফখরুল বলেন, ‘‘এভাবে গ্রেফতার জঘন্য। এভাবে রাজনৈতিক দলের নেতাদের গ্রেফতার করা যায় না। এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। নিন্দার ভাষাও নেই আমার।”
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকিসহ নেতৃবৃন্দ বিএনপি মহাসচিব উদ্দেশ্যে নয়া পল্টনে মোড়ে আসার পর পুলিশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানকে তারা ফিরিয়ে দেন।
রাত ৮টায় দলীয় কার্যালয়ের গেইটের ফুটপাতে থেকে উঠে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরী সভায় যোগ দিতে গুলশানের অফিসের উদ্দেশ্যে নিজের গাড়িতে উঠেন।
সর্বশেষ সংবাদ ব্রিফিং:
‘কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশের তান্ডবের অভিযোগ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী যৌথভাবে এই অভিযান চালিয়েছে। তারা সবচেয়ে হীন কাজটা করেছে যে, তারা নিজেরা এখানে ব্যাগে করে কিছু কিছু বিস্ফোরক নিয়ে এসেছে এবং সেটা ভেতরে রেখে আমরা যেটা খবর পেয়েছি তারা এখন বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে আরকি।”
‘‘ আমরা পরিস্কারভবে বলতে চাই, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করে এবং শান্তিপর্ণ উপায়ে কর্মসূচি আমরা পালন করে আসছি। আপনারা জানেন যে, আমরা বিভিন্ন দাবিতে ৯টি বিভাগীয় দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করেছি। শত বাধা-বিপত্তি সত্বেও উস্কানির পরেও জনগণ শান্তিপূর্ণণভা্বে এই সমাবেশগুলো করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকারের মন্ত্রীরা উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখতে শুরু করে।
তাদের সাধারণ সম্পাদক পরিস্কার করে বলেন, খেলা হবে। আারেকজন মন্ত্রী বলেন যে, হেফাজতের মতো সাফ করে দেয়া হবে। এই যে ভয়াবহ সমস্ত উক্তি, সমস্ত কথা তখন থেকে যেটা আশঙ্কা করেছিলাম যে ২০১৩/১৪/১৫ ‘র মতো নীলনকশা করছে জনগণের ন্যায়সঙ্গত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আবারো রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে দমন করে দিতে চায়।”
‘খেলা হবে’ এর প্রকাশ এই অভিযান’
ফখরুল বলেন, ‘‘এই অভিযান শুধু বিএনপিকে ক্ষতি করে নাই, সমস্ত বাংলাদেশে মানুষের বুকে আঘাত হেনেছে। একই সঙ্গে তারা গণতন্ত্রকে আঘাত করেছে। যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সরিয়ে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য সেই ব্যবস্থাকে তারা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য তারা পরিকল্পিাতভাবে কাজ করছে।”
‘‘আমরা আজকে দেখেছি যে, কারা কারা এই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কোন কোন বাহিনী এখানে এসছে। কিভাবে পাশবিকভাব নারকীয় তান্ডব তারা চালিয়েছে তা বর্ণনা করা যায় না। সেই ভাষা আমার নেই। এটা আমি একমাত্র মনে করতে পারি একাত্তর সালে হানাদার বাহিনী যেভাবে মানুষের অত্যাচার করেছিলো সেই অত্যাচারের নমুনা আমরা দেখেছি।”
ফখরুল বলেন, ‘‘এখানে আমি আমার সামনে যেটা দেখলাম আমাদের অফিসে সমস্ত কম্পিউটার, যতরকম ডকুমেন্ট সব তারা নিয়ে গেছে। সমস্ত সিসি ক্যামেরাগুলো তারা ভেঙে দিয়েছে। বিদ্যুতের লাইট ভেঙে দিয়েছে যাতে করে কোনো এভিডেন্স না থাকে।”
‘‘এটা কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করতে পারে এটা আমাদের ধারনার বাইরে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার সরকার কাজ করছে কিনা সন্দেহ আছে। আমরা বার বার তাদেরকে অনুরোধ করেছি এখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হচ্ছে, কোনো ঝামেলা করবেন না। কিন্তু তারা কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি।”