ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশের কোথাও দুর্নীতি হলে এর সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দেয়া হলে তার সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বলেছেন, দেশের কোথায় কী দুর্নীতি হয়েছে সে তথ্য দিতেও জাতীয় সংসদে আহ্বান জানানো হয়েছে। কাজেই শুধু মুখে দুর্নীতির কথা বললেই হবে না, সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ দিলে আমার সরকার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এখন এমন লোকদের কাছে দুর্নীতির কথা শুনতে হয় যারা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তাদের আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
অঙ্গীকার অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সবসময় জাতির কল্যাণে কাজ করে এবং দেশের মানুষ এর সুফলও পাচ্ছে।
গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করে এবং সবসময় তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার রক্ষা করে- এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
তিনি বলেন, ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের যে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে তা অনেকেই মেনে নিতে পারছে না। উন্নতি অনেকে চোখে দেখেও না দেখার ভান করে, স্বীকার করতে চায় না, করতে চাইবেও না। কিন্তু যেটা আমি সবসময় বলতে চাই, আওয়ামী লীগ যে ওয়াদা করে সে ওয়াদা রক্ষা করে। সরকার প্রধান বলেন, প্রত্যেক ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে আমরা ঘর করে দিচ্ছি, আমাদের কথা ছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বালাবো সেটাও আমরা পেরেছি।
তিনি বলেন, দেশে এর মধ্যে দরিদ্র্যের হার অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে এই হার আরও ৩ থেকে ৪ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব হতো।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করতে গিয়ে গরিব মানুষের ওপর এমন চাপ, যাদের সুদ দিতে গিয়ে ঘরবাড়ি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলেই যেতে হয়েছে অথবা আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু এই গরিব মানুষের টাকা দিয়েই বিদেশে নামধাম করে তারা ভালোই আছে, প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগও করছে। এই টাকা তো গরিবের রক্তের কামানো টাকা, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের পতিত জমি কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের দেশেও যারা একেবারে নির্দিষ্ট বেতনে চলতে হয় তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে। সেটা আমরা বুঝি। সেই জন্য বিদেশ থেকে অনেক টাকা খরচ করে খাবার কিনে নিয়ে এসে ভর্তুকি মূল্যে সেটা দিচ্ছি। টিসিবি’র কার্ডের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে আপদকালীন সময়ে ভোজ্য তেল, চিনি, ডালসহ নিত্যপণ্য যেন ক্রয় করতে পারে ন্যায্যমূল্যে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পাশাপাশি, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার কৃষিতেও ভর্তুকি অব্যাহত রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের সবজি এখন ৭০টির মতো দেশে রপ্তানি হচ্ছে। শরীয়তপুরের যে সবজি হচ্ছে তা সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছে। এভাবে উদ্যোগ নিয়ে আমরা করতে পারি।
তিনি বলেন, কৃষকদের গুরুত্ব দিয়ে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বানের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বৈজ্ঞানিক তৎপরতা চালানোর’ কথা জাতির পিতা বলে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে আসার পর গবেষণায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ’৯৬ সালে সরকারে আসার পর থেকে গবেষণায় পৃথক বরাদ্দ দিয়েছি। যার জন্য বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। আর তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে অনেক অনাবাদি জমিতে আবাদ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার সামাজিক নিরপত্তাবলয়ের কর্মসূচির পরিধি বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের ক্ষুদ্র সঞ্চয় সৃষ্টিতে ট্রেনিং, টাকা এবং সমবায় গড়ে দেয়ার মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ জন্য ‘আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প’ যেমন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে তেমনি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করে দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি, যুব সমাজের জন্য সরকার কর্মসংস্থান ব্যাংক করেছে, যেখান থেকে বিনা জামানতে তারা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং বিদেশগামীদের জন্য সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকও করেছেÑ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এভাবেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনার ফলে আজকে বাংলাদেশে বিরাজমান দারিদ্র্য ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামাতে সক্ষম হয়েছে এবং হতদরিদ্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এবং মাথাপিছু আয়ও বাড়াতে পেরেছে এবং গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানেরও উন্নতি ঘটিয়েছে।
জাতির পিতা যা যা চেয়েছিলেন আমরা মানুষের জন্য সেগুলো কিন্তু একে একে করেছি, তার যে স্বপ্নটা সেটাই বাস্তবায়ন করা আমাদের লক্ষ্য’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু আমাদের দেশের এক একটা খাত ধরে আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ফলে আজকে যেমন দারিদ্র্য কমাতে পেরেছি তেমনি কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বাড়াতে পেরেছি।
তিনি বলেন, এখন তো ওরকম কেউ ইচ্ছা করলে বেকার থাকতে পারে না, কারণ, প্রকৃতপক্ষে বেকার থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, আমরা এত সুযোগ সৃষ্টি করেছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক ছেলেমেয়ে এখন গ্রামে বসে টাকা উপার্জন করছে। কাজেই এভাবে যত সুযোগ আছে আমরা করেছি।