ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আমরা কখনও পালাবো না, প্রয়োজনে আমরা মির্জা ফখরুল সাহেবের বাড়িতে গিয়ে উঠবো বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব বলেছেন- আমরা নাকি পালিয়ে যাব। আপনাদের নেতা মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়েছেন। আমরা এ দেশেই জন্মেছি। এ দেশেই মরবো। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। প্রয়োজনে আমরা ফখরুল সাহেবের বাড়িতে গিয়ে উঠবো। তার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতেও আমরা যেতে পারি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি আমাদের লাল কার্ড দেখায়। সরকার পতনের কথা বলে। ৩০ ডিসেম্বর সরকারের পতন হবে বলেছিল। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে বলেছিল। বিএনপির পদযাত্রা মানে শেষ যাত্রা বা অন্তিমযাত্রা।
রোববার রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির জ্বালা বড় জ্বালা। তাদের জ্বালা মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু আর শেখ হাসিনার উন্নয়ন। পরবর্তীতে আসছে বঙ্গবন্ধু টানেলের জ্বালা। অন্তর জ্বালায় পুড়ছে বিএনপি। সামনে আরও জ্বালা আছে। মেট্রোরেল হবে আন্ডারগ্রাউন্ড। মাতারবাড়ি আর রূপপুরের জ্বালাও বিএনপি নিতে পারছে না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, খেলা হবে। হবে খেলা। খেলা শুরুর আগেই বিএনপি পালাতে শুরু করেছে। অন্তিম যাত্রা শুরু করেছে। সামনে হবে আন্দোলনের খেলা। হবে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে খেলা। আর আগামী নির্বাচনে হবে ফাইনাল খেলা। রেডি হন। বিএনপির এখনো শিক্ষা হয়নি। শিক্ষা হবে আগামী নির্বাচনে পরাজিত হলে।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আপনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে একসঙ্গে দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। অনেকেই আমাকে গ্রিন সিটি রাজশাহীর সফল মেয়র বলেন। আমি এটা মনে করি না। এ সফলতা আপনার। আপনার সহযোগিতায় রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাজশাহীবাসী আগামী নির্বাচনে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।
আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন বলেই ফখরুলরা ষড়যন্ত্র করছেন। তারা অসাংবিধানিক শক্তিকে উৎসাহিত করছেন। আগামীতে কোনো অপশক্তি ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন হবে। সেই সময় অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন শেখ হাসিনা।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এই উত্তর জনপদ ছিল সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। বিএনপি বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি করেছিল। আর সেই উত্তর জনপদে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। দেশে সব সেক্টরে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা জনগণের মাঝে তুলে ধরতে হবে। জনগণ আওয়ামী লীগের উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা নির্বাচনে নৌকাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।
দলটির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে এ দেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল; কিন্তু সফল হননি। শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনায় দেশ দুর্বারগতিতে এগিয়ে চলেছে। জনগণের আস্থার প্রতীক শেখ হাসিনা। তারা জানেন দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।
সভায় আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, হত্যা, খুন আর গুম ছাড়া খালেদা জিয়া রাজশাহীকে আর কিছুই দিতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে গোপালগঞ্জের উন্নয়ন করেছেন, সেভাবেই রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাগঞ্জসহ সারা দেশে সুষম উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। শেখ হাসিনা ঐক্যের প্রতীক। সব জায়গায় তার সরকারের উন্নয়ন দৃশ্যমান।
সভায় ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার কারণে রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, দেশ আবার বাংলা ভাইয়ের জঙ্গি তৎপরতার দিকে ফিরে যাবে- নাকি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে।
সভায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাফরউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। তবে অসুস্থতার কারণে তিনি বক্তব্য দেননি। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শেখ হেলাল, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন- খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান, নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হক, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক প্রমুখ।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন আসনের এমপি, আট জেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। সভাটি পরিচালনা করেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।
জনসভা শুরুর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের সদস্য এবং বিভিন্ন সময়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিকাল ৩টা ১২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সভামঞ্চে আসেন। এ সময় ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার ৩১৬ কোটি ৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকার মোট ৩২টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্যে ২৬টির কাজ শেষ হয়েছে। আর ৬টির কাজ চলমান রয়েছে। এ সময় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
মোনাজাতের পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রধানমন্ত্রীকে ক্রেস্ট উপহার দেন। এছাড়া জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।