DMCA.com Protection Status
title="৭

শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিও আমাকে মানুষ মনে করেনি : হিরো আলম

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত নাম ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন, যিনি হিরো আলম নামে সমধিক পরিচিত। সঙ্গীতের ভিডিও, মডেলিং, হাস্য রসাত্মক অভিনয় ও গায়ক হিসেবে দর্শকদের মধ্যে বহুল উচ্চারিত নাম। তবে বিভিন্ন সময় নির্বাচনে অংশ নিয়েও তিনি প্রাদপ্রদীপের নিচে চলে এসেছেন।

এবার বগুড়ার দুই আসন থেকে নির্বাচন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে একটি আসনে তিনি অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এরপর হয়ে উঠেন টক অব দ্য কান্ট্রি। তাকে নিয়ে সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইছে।

সমসাময়িক বিষয় নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন হিরো আলম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মানিক রাইহান বাপ্পী
   
যুগান্তর: নির্বাচনে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোট পেয়েছিলেন কিনা। কী কারণে পরাজয় হলো?

হিরো আলম: হ্যাঁ, আমি প্রত্যাশার থেকেও বেশি ভোট পেয়েছি। ভোটের মাঠে এবার জনগণ যাওয়ার কথা ছিল না। আমার জন্য শুধু ভোট কেন্দ্রে গিয়েছিল ভোটাররা। আমি না দাঁড়ালে ভোট কেন্দ্রে এত লোক কখনই উপস্থিত হতো না। আমি কিন্তু ভোটে হারিনি, তবে ফলাফলে হারিয়েছে সরকার। নির্বাচনে কোনোভাবে আমাকে পেছনে ফেলতে না পেরে ফলাফল পরিবর্তন করে হারিয়েছে আমাকে।

যুগান্তর: আপনার কার্যক্রম নিয়ে মানুষ এক সময় হাসাহাসি করত; কিন্তু নির্বাচনের ফল বলছে বর্তমানে মানুষের আস্থা অর্জনের জায়গায় পৌঁছেছেন আপনি। সেটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
 
হিরো আলম: আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন। আমি ধৈর্য ধরেছি। মানুষ একসময় আমি কোনোকিছু করলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত, গালি দিত- এটা আমি বুঝতে পারতাম; তারপরও লেগে থাকতাম। তবে আমি বিশ্বাস করতাম, শত্রুরাও আমাকে বুকে টেনে নেবে। মানুষের ভুল ভাঙবে। সেটা ভেঙেছে।

যুগান্তর: নির্বাচনের মাধ্যমে আপনার প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা হলেও বদলেছে। এটা কাজের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসবে কিনা?
 
হিরো আলম: ইতোমধ্যে কাজের পরিবর্তন এনেছি। হাস্যকর, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে মানুষ এমন কাজ করব না। মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সেই ভালোবাসা ধরে রাখার জন্য সব সময় ভালো কাজের মধ্যে থাকব।

যুগান্তর: ইতোমধ্যে নির্বাচনের ভোট পুনরায় গণনার দাবি করেছেন, পরবর্তী কী পদক্ষেপ নেবেন?
 
হিরো আলম: ফল পুনর্গণনার জন্য আবেদন করেছি। দেখি কি রেজাল্ট আসে। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পরিকল্পনা নির্ধারণ করব। ইতিবাচক ফলাফল না আসলে অবশ্যই আদালতে যাব।   
 
যুগান্তর: আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা। নিলে স্বতন্ত্রভাবে নাকি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে?
 
হিরো আলম: এ রকম মারধর করে নির্বাচন হলে অংশ নেওয়া আর না নেওয়া সমান। এখন পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচণে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। সময়সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতেও পারে।

যুগান্তর: কোনো রাজনৈতিক দল আমন্ত্রণ জানালে সেক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা কী হবে?

হিরো আলম: এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ভবিষ্যতে ভেবেচিন্তে দেখব, কী করা যায়।
 
যুগান্তর: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন আপনি জিরো হয়েছেন। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
 
হিরো আলম: এ কথা অনেক ব্যাথিত করেছে আমাকে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল দুজনই আমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। দুই দলই মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করেনি আমাকে। কোনো রাজনীতিবিদ কাউকে ছোট করে কথা বলতে পারেন না। তারা এলিট শ্রেণির লোকদের সম্মান করে, কিন্তু নিম্নশ্রেণির লোকদের সম্মান করে না; কিন্তু তারা নিম্নশ্রেণির মানুষদের সমর্থন নিয়েই তো নেতা হয়েছে। এটা ভুলে গেছে।

যুগান্তর:  আগে মুভি, গান করতেন। সেটা চালিয়ে যাবেন কিনা? বিভিন্ন সময়ের কিছু গান নিয়ে হাসাহাসি বা ট্রল করা হতো। এগুলো পরিহার করবেন কিনা?
 
হিরো আলম: মানুষ একটা অবস্থানে চলে গেলে চাইলেও আর উল্টাপাল্টা কাজ করা যায় না। আমি সিনেমা চালিয়ে যাব। তবে যে কাজই করি না কেন, এখন থেকে মানসম্মত কাজ করব।
 
যুগান্তর:  আপনার পরিবার নিয়ে যদি কিছু বলতেন?

হিরো আলম: পরিবার নিয়ে অনেক সুখে আছি। পরিবারের সদস্য পাঁচজন। স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে। সন্তানেরা এলাকায় পড়াশুনা করছে।

যুগান্তর: নির্বাচনের আগে আপনার সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই বিষয়ে কী ব্যাখ্যা দেবেন?

হিরো আলম: আমার সম্পদ নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। তবে এটা হিংসাত্মক ও ইর্ষা মনোভাব থেকে। আমার বিভিন্ন উৎস রয়েছে আয়ের। সেখান থেকে টাকা জমিয়েছি।

যুগান্তর:  আপনার নির্বাচনে এত টাকা খরচ হলো- এ টাকার উৎস কোথায়?

হিরো আলম: আমার আয়ের উৎস অনেক। তার মধ্যে কনর্সাট, ফেসবুক, ইউটিউব থেকে অনেক আয় হয়। পাশাপাশি ক্যাবল বিজনেস আছে।

যুগান্তর: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ ছিল বিএনপি আপনাকে ভোটে পৃষ্ঠপোষকতা করে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

হিরো আলম: বিএনপি আমাকে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা করে না। ভোটেও দাঁড় করায়নি। আমি স্বেচ্ছায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছি। আর বিএনপি দাঁড় করালে মাঠে তো বিএনপির নেতাকর্মীরা থাকত। তা কী ছিল? আমার নির্বাচনি প্রচারে কোনো দলের নেতা অংশ নেয়নি এবং আমি আহ্বানও করিনি। বিএনপির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই এবং যোগাযোগও নেই।  

যুগান্তর: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি সংসদকে হেয় করতেই হিরো আলমকে নিয়ে খেলছে?
 
হিরো আলম: এলিট শ্রেণির লোক আমাকে মানতে চায় না। তাদের ধারণা আমি সংসদে গেলে সংসদের মানসম্মান কমে যাবে। তারা শুধু এলিট শ্রেণির লোকদের সম্মান করতে চায়।

যুগান্তর: সিলেটের উপহারের গাড়ির বিষয়ে কিছু বলতে চান?

হিরো আলম: গাড়িটি যে ফিটনেসবিহীন ও কাগজপত্রের ঝামেলা ছিল এটা আগে জানতাম না। তবে উপহারের জিনিস নষ্ট হলেও সেটা উপহার। ওই গাড়িতে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হলেও ঠিক করে জনসেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স বানাব।

যুগান্তর: গাড়ি নিতে গিয়ে কীভাবে মামলা খেলেন?

হিরো আলম : আমরা যে গাড়িতে ছিলাম সেটি ৮০ কিলোমিটার বেগে চলছিল। হাইওয়ে পুলিশ দাঁড় করিয়ে আইন অনুযায়ী ২৫০০ টাকা জরিমানা করেছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তা পরিশোধ করেছি।


যুগান্তর: মূল্যাবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

হিরো আলম : আপনাকেও ধন্যবাদ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!