ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশের বিদ্যমান জ্বালানী সংকট মেটাতে জাপান থেকে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিডনাইট হাসিনা সরকার। এজন্য ব্যয় হবে ৬৯০ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৩১২ টাকা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলার মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হবে। এদিকে এলএনজিসহ ৬ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২৮৬ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
সভা শেষে সাঈদ মাহবুব খান বলেন, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় জাপানের জেরা কোম্পানির এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলার মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হবে। তিনি বলেন, মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা মিলিত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে (এমএসপিএ) স্বাক্ষর করা প্রতিষ্ঠান থেকে কোটেশন সংগ্রহ করে ওই এলএনজি আমদানি করা হবে। জাপানের জেরা কোম্পানি থেকে ৬৯০ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৩১২ টাকা ব্যয়ে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে খরচ হবে ১৬.৫০ ডলার।
গত ১লা ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা মিলিত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে (এমএসপিএ) স্বাক্ষর করা প্রতিষ্ঠান থেকে কোটেশন সংগ্রহ করে ওই এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের ২৩শে জুন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা মিলিত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়।
পেট্রোবাংলা খোলাবাজার থেকে সর্বশেষ এলএনজি কিনেছিল গত বছরের মে মাসে। তখন প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়েছিল ২৬ ডলার ৪ সেন্ট। এরপর আর এলএমজি আমদানি করা হয়নি।
জানা গেছে, এলএনজি আমদানির জন্য বেশকিছু দেশের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। কিন্তু সরকার খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে এলএনজি আমদানি করতে চায়। এজন্য ২০১৯ সালে খোলা বাজার থেকে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে এমএসপিএ পরিকল্পনা নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে ২০২১ সালে জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও দুবাইয়ের চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে গত কয়েক বছর বাসাবাড়ির পাশাপাশি শিল্পখাতেও নতুন সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট বিবেচনায় ২০১৮ সালের ২৫শে এপ্রিল এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। সামিট এলএনজি ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জির স্থাপন করা ভাসমান টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে দৈনিক প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে কম-বেশি মিলিয়ে ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৪০-৪২ কোটি ঘনফুট এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাস। যেখানে দেশে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি রূপান্তরের সক্ষমতা রয়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে দেশে ২৯ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) ছাড়া সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্য গ্রাহকদের জন্য ফের গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৪টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৪টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ২৮৬ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৫৩২ টাকা। মোট অর্থায়নের সম্পূর্ণ অর্থই জিওবি থেকে ব্যয় হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (ডিএপিএফসিএল)-এর জন্য ২০ হাজার টন (+১০%) ফসফরিক এসিড আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১১৯ কোটি ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ১০০ টাকা। প্রতি টন ফসফরিক এসিড এর দাম ৫৫৯.৫০ মার্কিন ডলার।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, সভায় চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড (টিএসপিসিএল)-এর জন্য ২৫ হাজার টন (+১০%) রক ফসফেট (৭২% বিপিএল মিনিমাম) আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৮২ লাখ ৪৬ হাজার ২৫০ ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৮ কোটি ৬ লাখ ১৭ হাজার ৩৮ টাকা। প্রতি টন রক ফসফেট এর দাম ৩২৯.৮৫ ডলার।
তিনি বলেন, ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ঝালকাঠি জেলার খয়রাবাদ নদীর ওপর ৭৩০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১২৩ কোটি ৯ লাখ ৭ হাজার ৮২ টাকা।
সভায় এজেন্ডায় ৪টি প্রস্তাব ছিল। এর বাইরে টেবিলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে টিসিবির মাধ্যমে ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের মাঝে সাশ্রয়ী দামে বিক্রির জন্য এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৪.৫০ টাকা। এতে ব্যয় হবে ১৯১ কোটি ৯৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। এছাড়া ৮ হাজার টন মসুর ডাল কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে তুরস্ক থেকে মসুর ডাল আমদানি করা হবে। প্রতি টন ৮৫৮ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ৭৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।