DMCA.com Protection Status
title=""

দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করায় বিএনপি থেকে ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ বহিষ্কার

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  দুই দফা শোকজের পর এবার দল থেকে স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার হলেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গতকাল তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর আগে সোমবার রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শওকত মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপি’র সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলের ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শওকত মাহমুদ বহিষ্কারের বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে বর্ণনা করেছেন। গনমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, শিগগির এ বিষয়ে কথা বলবেন তিনি। 

দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করায় ২০১৯ ও ২০২২ সালে বিএনপি শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। নোটিশের জবাব দেয়ায় তার বিষয়ে তখন আর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সর্বশেষ গত ১৬ই মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস্ জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে নৈশভোজের আয়োজন করেন। সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয় ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে।

নৈশভোজের ওই সভায় পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার সাবেক অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় জাতীয় সরকারের যে প্রস্তাবনা দেয়া হয় তা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর জাতীয় সরকার প্রস্তাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। বিএনপি একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পর একটি জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছে। এ অবস্থায় ইনসাফ কমিটির প্রস্তাব বিএনপির জাতীয় সরকার প্রস্তাবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিএনপি ও সমমনাদের কর্মসূচি বিঘ্নিত করতেই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়ে থাকতে পারে বলে বিএনপি নেতারা সন্দেহ করছেন।

ওই অনুষ্ঠানের পর দলীয় অনুসন্ধান এবং সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করেই শওকত মাহমুদকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এমন কিছু নামও দলীয় নেতাদের কাছে এসেছে। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। দায়ী হলে তাদের বিরুদ্ধেও দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া সমমনা দলগুলোর কিছু নেতাও ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ শুধু নৈশভোজ ভেবে গিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ না বুঝেই সেখানে যান। তাদের কেউ যদি ওই সংগঠনের কার্যক্রমে বুঝে অংশ নিয়ে থাকেন তাহলে তাদের বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ইতিমধ্যে ১২ দলীয় জোটের এক নেতা অসন্তোষের মুখে ওই জোট ছেড়েছেন। 

দলীয় সূত্র জানায়, সোমবার রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শওকত মাহমুদের বিষয়টি উপস্থাপন করেন বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা। পরে স্থায়ী কমিটি তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। সূত্র জানায়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্মকান্ডে জড়িত, ‘ইনসাফ কায়েম কমিটি’তে অংশগ্রহণ ও চলমান আন্দোলন সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় রয়েছে এমন আরও কয়েকজন বিএনপি নেতার বিষয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। তাদের কর্মকা- পর্যবেক্ষণ করছেন দলটির হাইকমান্ড। 


বনানীর বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি গতকাল বলেন, নৈশভোজ অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। সেখানে যেসব বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে তার বিষয়ে আমি আগে অবগত ছিলাম না। জানলে সেখানে যেতাম না। 

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৩ই ডিসেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। সেবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে তাকে এবং আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদকে ওই নোটিশ দেয়া হয়। তবে তারা শোকজের জবাব দেয়ার পর তা সুরাহা হয়ে গিয়েছিল। গত বছরের ২৭শে মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে ‘পেশাজীবী সমাজের’ ব্যানারে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে শওকত মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে গত বছরের ৬ই এপ্রিল দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পেশাজীবীদের ব্যানারে ওই সমাবেশ করায় শওকত মাহমুদের কাছে ব্যাখ্যা চায় বিএনপি। তখন ব্যাখ্যা দিয়ে পার পান তিনি। 

শওকত মাহমুদ বিএনপি’র পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং পরে ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান হন। এ ছাড়া কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।  ২০১৬ সাল থেকে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শওকত মাহমুদ। বিএনপি’র বাইরে শওকত মাহমুদ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপি সমর্থিত সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়কও ছিলেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!