ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে মানহানিকর মন্তব্যের কারণে সুরাটের স্থানীয় এক ম্যাজিস্ট্রেট কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দু’বছরের জেলের রায় দিয়েছেন। এমন ঘোষণায় ভারতজুড়ে তোলপাড় চলছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে উঁচুতলা পর্যন্ত সব জায়গায় এ নিয়ে আলোচনা। এখন থেকে চার বছর আগে রাহুল গান্ধী এক নির্বাচনী জনসভায় মন্তব্য করেন ‘মোদি পদবি যাদের হয় তারা সবাই চোর হয় কীভাবে’। ২০১৯ সালে সুরাটে এক নির্বাচনী জনসভায় এই উক্তি করেন রাহুল। এর বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হন পূর্ণেশ মোদি। তিনি বর্তমানে গুজরাটে বিজেপি দলীয় বিধায়ক এবং সাবেক মন্ত্রী। পূর্ণেশ মোদির অভিযোগ ছিল, ‘মোদি সমাজকে অপমান করেছেন রাহুল এবং কেন তিনি মানহানির দায়ে পড়বেন না? গতকাল সকালে টানটান উত্তেজনার মধ্যে রাহুলকে ভারতীয় দ-বিধির ৪৯৯ ও ৫০০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে দু’বছরের কারাবাসের রায় দেন সুরাটের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এইচএইচ ভর্মা। রাহুলের বিরুদ্ধে এই রায় ‘ডেকার্ড সেন্টেন্স’ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তিনি ৩০ দিন সময় পাবেন আপিল করার জন্য।
রায় ঘোষণার সময় সুরাটের আদালতে রাহুল হাজির ছিলেন। বাইরে অগণিত কংগ্রেস সমর্থক ছিলেন। তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে রাহুলকে ‘শের-ই-হিন্দুস্থান’ বলে বর্ণনা করা হয়। কিছু কিছু প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘বিজেপির ষড়যন্ত্রের কাছে নতি স্বীকার করবে না কংগ্রেস’। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাহুল গান্ধী বলেছেন, তিনি সত্যের পূজারী এবং মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ মেনে চলেন। অতএব, সত্য তিনি বলবেনই। রাহুল গান্ধীকে ক্রিমিনালের সঙ্গে তুলনা করে বিজেপি বলেছে, অন্যকে অপমান করাটা যদি সত্যকে পুজো করা হয় তাহলে রাহুল সত্যের পূজারী। বিজেপি মুখপাত্র রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, একটি সমাজকে চোর বলে রাহুল ভারতীয় সংস্কৃতিকে আহত করেছেন। শিবসেনা রাহুলের শাস্তিকে স্বাগত জানালেও এনসিপি এই রায়ের বিরোধিতা করেছে। তাদের বক্তব্য, বিজেপি নেতারাও একই কাজ করে থাকেন। তাদের অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। আম আদমি পার্টির নেতা ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বিজেপি’র সমালোচনা করে বলেছেন, মোদিকে সমালোচনা করলেই শাস্তির খড়গ নেমে আসে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গে বলেছেন, আদালত আগেও বার বার রায় পরিবর্তন করেছে। এবারো তাই করবে। কংগ্রেস আইনগত পদ্ধতিতে বিষয়টির মোকাবিলা করবে। রাহুল গান্ধীর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র বলেছেন, আমার ভাই সত্য কথা প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন না। তাই করেছেন। ইতিমধ্যে রাহুল গান্ধীর এমপি পদ থাকবে কিনা তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী দু’বছর বা তার অধিক কারও জেল হলে তিনি এমপি পদে থাকতে পারেন না। কিন্তু, এক্ষেত্রে আপিল করার সময় পাচ্ছেন রাহুল। এই সময়ের মধ্যে তার এমপি পদ যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বিজেপি’র দাবি, মোদিকে হিটলারের সঙ্গেও তুলনা করেছেন রাহুল। এর জন্যও তার সাজা পাওয়া উচিত।
এদিকে রাহুল গান্ধীর দু’বছরের জেলের সাজা শুনে কলকাতায় তীব্র উত্তেজনা আছড়ে পড়েছে। কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, মোদি সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের ফল এটি। অনেকেই আবার আদানি-মোদি সম্পর্ক নিয়ে রাহুলের বক্তব্যের ফলেই এটা ঘটেছে বলে মনে করছেন। দিল্লিতে প্রদেশ কংগ্রেস-এর দপ্তরে জরুরি বৈঠকে বসেন শীর্ষ নেতারা। ডেকে পাঠানো হয় কংগ্রেসের সেরা আইনজীবী সদস্যদের। একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে অন্য রাজ্যগুলোতে। সবাই সতর্ক নজর রাখছেন ভারতের ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেসের এই নেতার দিকে। কারণ, তিনি এখন গান্ধী পরিবারের রাজনীতিরও উত্তরাধিকার।