ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আগামী নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে জানিয়েছেন মিডনাইট প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুসরণ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন।
গতকাল রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। ‘সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি স্বাধীনতার বড় অর্জন’ শীর্ষক প্রস্তাবের পক্ষে লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ ও বিপক্ষে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন। এতে চ্যাম্পিয়ান হয় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ। ‘দেশে রাজনৈতিক স্পেস নাই’- এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, সামনে নির্বাচন। দুইটি জিনিস বলা হচ্ছে। একটি হচ্ছে রাজনৈতিক স্পেস। কথা না বলে যদি মুখোমুখি অবস্থানে থাকে তাহলে রাজনীতি এগুবে কীভাবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কথা হলো যে সংবিধান অনুযায়ী যা যা করার আমরা করেছি।
নয়া নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। মহামান্য প্রেসিডেন্ট যখন বললেন আসেন, কথা বলবো। তখন একটি বিরোধী দল উনারা আসলেন না। এখন উনারা কী বলছেন, তাদের দাবিটা কী। প্রথমত, উনাদের দাবি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করবো না। দ্বিতীয় দাবি হচ্ছে-এই নির্বাচন কমিশনের অধীন নির্বাচনে যাবো না এবং তৃতীয়-আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকার পরিবর্তন করবো। নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে তার অধীনে নির্বাচনে যাবে।
তিনি বলেন, অন্য কোনো সভ্য দেশে আছে যে, পাবলিকলি বলছে তোমাকে ক্ষমতায় থাকতে দেবো না। আন ল’-ফুলি একটি সরকারকে সরিয়ে দেবো। এটা তো রাজনৈতিক স্পেসের কারণে করতে পারছে তারা। এর চেয়ে আর বেশি রাজনৈতিক স্পেস দিতে পারি না। তারপরও আমরা অনুরোধ করছি, আপনারা আসেন। সবাই বলছি। নির্বাচন কমিশন কিছুদিন আগেও বলেছে আপনারা আসেন, কথা বলেন। উনারা যদি নির্বাচনে না আসতে চান, তাহলে সরকার তো কিছু করতে পারবে না। আমরা শুধু অনুরোধ করতে পারবো।
সালমান এফ রহমান বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। সুন্দর একটা নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আমরা এলাউ করছি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসুক। নির্বাচন কমিশন এখন স্বাধীন। কয়েকদিন আগের একটি উপ-নির্বাচন দেখেছেন। যেখানে নির্বাচন ঠিক হচ্ছে না, সেখানে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কমিশন।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসা-বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উপায় নেই। জ্বালানি খাতে আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে দাম বেড়েছে। এর আগেও আমরা ভর্তুকি দিতাম। দাম বাড়ার পরেও অনেক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছে, দাম বাড়ার কারণে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাদেরকে বলেছি- উপায় নেই। আমরা কিন্তু বাড়াইনি। যেসব দেশের সঙ্গে আমরা রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা করি, সেসব দেশেও বেড়েছে। এ যুদ্ধের জন্য জ্বালানির খাতের এই অবস্থা। সবচেয়ে বড় ক্ষতি জ্বালানি খাতে। এটা আমাদের হাতের বাইরে। যদি ১০ থেকে ২০ শতাংশ বাড়তো তাহলে কিছু করার থাকতো। যেখানে ১৩ থেকে ১৪ ডলারে গ্যাস কিনতাম। তা বেড়ে ৬০ ডলার হয়েছে। যদিও এখন কিছুটা কমে আসছে। এভাবে দাম বাড়ার কারণে সিরিয়াস প্রভাব পড়েছে। তিনি সুখবর দিয়ে বলেন, ভোলার যে গ্যাস আছে তা মেইন লাইনে কীভাবে আনা যায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাহলে কিছুটা সুবিধা পাওয়া যাবে।
দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়। সারা বিশ্বে দাম বেড়েছে। টিসিবি’র মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে কম দামে রমজানে বিভিন্ন আইটেমের পণ্য দেয়া হচ্ছে। যাতে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। তিনি ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করে বলেন, যাতে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। দাম মাঝে মাঝে বেড়ে যায়। সরকার ব্যবস্থা নেয়ার পরে আবার কমেও আসে।
শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো সংক্রান্ত সিপিডি’র বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রী সব সময়ে শ্রমিকদের চাওয়ার আগেই কিন্তু উনি ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে দেন। হঠাৎ সিপিডি’র দাবি করলেই তো হবে না। বিষয়টি শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, বিশ্বে বিভিন্ন দেশে যখন কথা বলি যে, বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে অষ্টম বৃহৎ দেশ। আমরা জনসংখ্যার দিক থেকে খুবই ঘনত্বপূর্ণ একটি দেশ। পুরো আমেরিকায় যে জনংখ্যা রয়েছে তার ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা এখানে বাস করে।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এত বড় জনসংখ্যার দেশে যে উন্নতি হয়েছে, তা সত্যিই গর্ব করার মতো। স্বাধীনতার পর ২০০৯ সালে জিডিপি’র আকার ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলার। ৩৫ বছর লেগেছে এখানে আসতে। আর গত ১৪ বছরে তা বেড়ে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি হয়েছে। কীভাবে কতো দ্রুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রগতি হয়েছে। সব জায়গায় উন্নতি হয়েছে। এটা কিন্তু এমনি এমনি হয়নি। রাজনৈতিক অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। প্রযুক্তিনির্ভর, স্মার্ট বাংলাদেশ। তার জন্য আমাদের তৈরি হতে হবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করেছি। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে। তরুণদের অনলাইনে কর্মসংস্থান হয়েছে। তৈরি পোশাকের পর আইটি খাত ভালো করছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অনেক কাজ করতে হবে। প্রতিটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পার্টনারশিপে অনেক উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাকে ভালোভাবে মোকাবিলা করেছি। অনেক উন্নত দেশের আগেই আমরা করোনার ভ্যাকসিন পেয়েছি। কৃষিতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভোজ্য তেলে ঘাটতি থাকলেও ভবিষ্যতে আমরা ভালো করবো।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে। এর মধ্যে রয়েছে- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণের জন্য মাইগ্রেশন ডিপ্লোম্যাসি জোরদার করা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চ্যাম্পিয়ান ও রানারআপ দলের বিতাকির্কদের হাতে ট্রফি ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অর্থনীতিবিদ তাহরিন তাহরীমা চৌধুরী, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় ও ইকবাল আহসান।