ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিনা ভোটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে এখন একটিই মাত্র পথ খোলা আছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জনগণ তাদেরকে (আওয়ামী লীগ সরকার) আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাদের উচিত হবে, এখনো সময় আছে, বিরোধী দলের কাছ থেকে যে দাবি এসেছে তা মেনে নিয়ে পদত্যাগ করা, সংসদ বিলুপ্ত করা এবং তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হন্তান্তর করা। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন করবে। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে এখন একমাত্র পথ। গতকাল বুধবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগই হচ্ছে অগ্নি সন্ত্রাসের হোতা ও জন্মদাতা অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা কখনোই অগ্নি সন্ত্রাস করিনি। এই সন্ত্রাস তো তাদের (আওয়ামী লীগ) জীনের মধ্যে আছে। তাদের দুটো ব্যাপার- একটা সন্ত্রাস একটা দুর্নীতি। এটা ওদের বডি কেমিস্ট্রিতে আছে। এখান থেকে তারা বেরুতে পারেন না। যখন ক্ষমতা পায় তখন সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, সব কিছু লুট করে নিয়ে যাওয়া এবং বর্গীরা যেমন আসে লুট করে নিয়ে চলে যায় তেমন ওরা ক্ষমতা এসে লুট করে নিয়ে চলে যায়। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ।
রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের আগুন লাগার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছেই না। ফায়ার বিগ্রেডও বলেছে, এটা শট সার্কিটে হতে পারে। সবগুলোতে খেয়াল করে দেখবেন। এখানে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা কথা বলার আগেই তথাকথিত অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন এটাতে বিএনপি জড়িত আছে কিনা দেখতে হবে। এখন উনারা (আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক) বলছেন, অগ্নি সন্ত্রাস করে বিএনপি। আরে অগ্নি সন্ত্রাসের মূল হোতা আওয়ামী লীগ।
বিদেশীদের কাছে আওয়ামী লীগ ধর্ণা দেয়:
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে বিএনপি নেতাদের বৈঠকে ক্ষমতাসীনরা বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছে। এই বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বিদেশীদের কাছে আমরা যাই না। তারা আমাদেরকে ইনভাইট করেছে বলে আমি গিয়েছি। প্রত্যেকবার যতবার আমরা গেছি তাদের আমন্ত্রণে গেছি। আমাদের চাইতে ১‘শ ভাগ বেশি তারা (আওয়ামী লীগ) গেছে, এখনও যাচ্ছে। সেইদিনও ওবায়দুল কাদের সাহেবে (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) তাদের টিম নিয়ে আমেরিকান অ্যাম্বেসেডরের কাছে গিয়েছেন। তাহলে সেটা কি?? ধর্ণা কে দিচ্ছে? কোটি কোটি ডলার বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করেছে, সব খানে গিয়ে তারা বলছে যে ভাই, এবারকার নির্বাচনটা আমাদেরকে করতে দাও, এভাবে করতে দাও যাতে আমাদের প্রতিপক্ষ কেউ না থাকে, যাতে করে আমরা আগের মতোই ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করতে পারি। তাই একথাগুলো (বিএনপি ধর্ণা দিচ্ছে) একেবারেই অবান্তর, এই কথাগুলোর কোনো মূল্য নেই।
বিরোধী নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার নীল নকশা:
মির্জা ফখরুল বলেন, অবৈধ সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তারা আসন্ন যে নির্বাচন হওয়ার কথা সেই নির্বাচনের পূর্বেই বিএনপিকে নেতৃত্ব শূণ্য করার জন্য মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনা মধ্যে আছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাদেরকে আটকে রাখা। আর জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা যেমন হাবিবুল ইসলাম হাবিব তিন বারের সংসদ সদস্য, নিজ এলাকায় জনপ্রিয় নেতা এরকম নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাদেরকে আটকিয়ে রাখার একটা প্রক্রিয়া তারা ইতিমধ্যে শুরু করেছে। হাবিবুল ইসলাম হাবিব একজন ছাত্র নেতা ছিলেন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে তিনি ভালো ভূমিকা রেখেছে যে কারণে তিনি দেশের মানুষের বিশেষ করে তার এলাকার মানুষের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা। তিনি একজন লড়াকু মানুষ ছিলেন। গত ৩৫ বছরে এদেশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যতগুলো আন্দোলন হয়েছে, প্রত্যেকটা আন্দোলনে তিনি একজন সম্মুখ সারির নেতা ছিলেন। এই ধরনের একজন রাজনৈতিক নেতাকে ২১ বছর পরে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া- এটা সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, চক্রান্তমূলক, প্রতিহিংসামূলক। এই সাজা সম্পূর্ণ ন্যায় বিচার পরিপন্থি এবং আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
২০০১ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরের হামলার ঘটনার ১২ বছর পর জব্দ তালিকা প্রণয়নের নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ১২ বছর পরে জব্দ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মহাসড়কেরর উপর থেকে বুলেটের খোসা, একটা কালো রঙের মজিব কোট, তিন আগোয়ার অংশ বিশেষ, দুইটি স্যান্ডেল ইত্যাতি উদ্ধার করে আলামত দেখানো হয়। এক যুগ পরে? ওই সময়ের মধ্যে ওই মহাসড়ক সংস্কারও হয়েছে কয়েকবার। এরপর উনারা আলামত কিভাবে পেলেন, কিভাবে এটা সত্যতার প্রমাণ করছেন এবং মহামান্য আদালত তারা কিভাবে গ্রহন করলেন এটা কারো কাছে বোধগম্য নয়। এসব করে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা পুরোপুরি চলে যাচ্ছে। কারণে এই আলামত গ্রহনযোগ্য হতে পারে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে সাজা প্রদান- সরকারের নীল নকশার অংশ। এটা শুধু হাবিব সাহেব নয়। দেখবেন খুব দ্রæত বিএনপি ও বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ অনেককেই এই ধরনের মিথ্যা মামলায় সাজা দেবে। ইতিমধ্যে আমরা লক্ষ্য করছি যে, মামলাগুলো খুব দ্রæত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। এসব করে যদি তারা মনে করে থাকেন যে, জনগণের যে আন্দোলনকে নস্যাৎ করবেন তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কারণ বাংলাদেশের জনগণ তারা পুরোপুরিভাবে প্রতিজ্ঞবদ্ধ শপথ নিয়েছে যে, তারা কোনো মতেই এই দেশে এই ধরনের যে কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসীবাদ সরকার আছে তাকে মেনে নেবে না। আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।”
গত সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনার জন্য সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে এসব অগ্নিকান্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবিও জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি এবং একসঙ্গে সরকার প্রধানের বিরোধী দলের প্রতি দোষারোপে আঙ্গুল তোলা ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর কৌশলের নিন্দা জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দলের মিডিয়া সেলের আহবায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও সদস্য সচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি উপস্থিত ছিলেন।