ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে আপাতত বরিশালে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
নির্বাচনের আগে ভোটের স্বার্থে দলের হাইকমান্ড থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে ঢাকায় থেকে তিনি বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর জন্য চাইলে কাজ করতে পারেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একজন নেতা মানবজমিনকে বলেন, বরিশালে দলের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশালে থাকলে বিভেদ বাড়তে পারে, সহিংসতা হতে পারে-এই আশঙ্কায় তাকে আপাতত বরিশালে অবস্থান না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন না হলে নির্বাচন পর্যন্ত হয়তো সাদিককে বরিশালে দেখা যাবে না। গাজীপুরের মতো বরিশালেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ বিভক্ত। গাজীপুরের মতো বরিশালেও আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়রকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। সাদিক আব্দুল্লাহ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে।
গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে-এ কারণেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড তাকে এবার মনোনয়ন দেয়নি।
তার বদলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই খোকন সেরনিয়াবাতকে এই নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ কারণে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক টিম স্থানীয় বিভেদ মেটাতে নিরলসভাবে কাজ করছে বলে দাবি করেন টিমের একজন সদস্য। গত ১৭ই মে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ৯ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন সমন্বয়ক টিম গঠন করে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে সাংগঠনিক টিমের প্রধান করা হয়েছে। টিমের সমন্বয়ক করা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে এবং যুগ্ম সমন্বয়ক করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেনকে।
সদস্য হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান ও মো. গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে গঠিত টিমের সমন্বয়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সাদিক আব্দুল্লাহ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, সাদিক আব্দুল্লাহ ঢাকা থেকে কাজ করবেন। দলীয় সভাপতির বরিশালে তার না যাওয়ার নির্দেশনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের দলের পরামর্শ, নির্দেশ, নির্দেশনা সবই তো উনি দেন। তারই নির্দেশে ওইটা এভাবে সেট করা হয়েছে। বরিশালে সমন্বয়ক টিম কীভাবে কাজ করছে প্রশ্নে তিনি বলেন, বরিশালে ৩০টি ওয়ার্ড ও ১৩০টি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্র অনুযায়ী টিম তৈরি করা হবে। যে যে কেন্দ্রের সদস্য সে কেবল ওই কেন্দ্রের জন্যই কাজ করবেন।
তিনি অন্য কোনো কেন্দ্রে বা ওয়ার্ডে যেতে পারবেন না। একটি ওয়ার্ডে যদি ৫টি কেন্দ্র থাকে তাহলে মহানগর আওয়ামী লীগ ওই ওয়ার্ডের ৫টি কেন্দ্রের জন্য ৫টি টিম তৈরি করে দেবেন। কাজ আদায় করে নেয়ার স্বার্থেই এটা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নেত্রী পরামর্শ দিয়ে বলেছেন-ভোটারদের কাছে যেতে হবে। নেতাদের কাছে ধরনা দিয়ে, সালাম দিয়ে, হৈ হৈ করে হাজিরা দেয়ার দরকার নেই। সমন্বয়ক টিম বরিশালে কেমন সাড়া পাচ্ছে প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এখানে তো ওই অর্থে প্রতিপক্ষ বিএনপি’র কোনো প্রার্থী নেই। হাতপাখার প্রার্থী যিনি আছেন তাদের তো আবার নির্দিষ্ট ভোট আছে। তারা তো কখনো অন্য কাউকে ভোট দেয় না। তাদের ভোট তারা দেয়। তিনি বলেন, এখানে ২ লাখ ৭০ হাজার ভোটার রয়েছেন। বরিশাল ভোটারদের কি বার্তা দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বলেছি- আমাদের এক হতে হবে। বিভেদ থাকা চলবে না।
ভোটারদের কাছে যেতে হবে। ভোট চাইতে হবে। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নাই, অশান্তি নাই, অনৈক্য নাই। এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বরিশালে কাজে লাগাতে চায় আওয়ামী লীগ। আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, গাজীপুর ভোটের পর আমরা সতর্ক হয়েছি। আমাদের প্রার্থী কেন হেরেছে, কোথায় ভুল হয়েছে সেসব বিশ্লেষণ করে বের করছি। এসব থেকে সতর্ক হয়ে, শিক্ষা নিয়ে ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক আর নৌকা বিরোধী শক্তির বিপক্ষে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস চালাতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের কাছে গাজীপুরে হেরেছি। ওখানে আমরা ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হয়েছি। সেই ষড়যন্ত্র, সেই বিশ্বাসঘাতকতা আমরা বরিশালে হতে দেবো না। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, গাজীপুরের নির্বাচনে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ বিরোধী সবাই একাট্টা হয়েছিল জাহাঙ্গীর আলমের মায়ের পক্ষে। বরিশালে এমনটি ঘটতে পারে বলে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, বিএনপি এই নির্বাচনে নাই বটে- তবে তারা শেষ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীকে গোপনে সমর্থন দিতে পারে এবং আওয়ামী বিরোধী ভোটগুলো মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের পক্ষে যেতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। তাছাড়া এখানে আওয়ামী লীগের বিভক্তি থাকার কারণে আওয়ামী লীগের একটা অংশও গোপনে চাইবেন খোকন সেরনিয়াবাতকে হারাতে।