ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের নতুন সংসদ ভবনে একটি ‘অখণ্ড ভারত’ মানচিত্র রাখা হয়েছে, যেখানে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কার মানচিত্র যুক্ত করা হয়েছে। ‘অখণ্ড ভারত’ ধারণাটি ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মূল মতাদর্শগত চিন্তার অন্যতম। ওই ধারণায় বলা হয়ে থাকে, প্রাচীন কালে ইরান থেকে বর্তমানের মিয়ানমার, উত্তরে তিব্বত, নেপাল, ভূটান আর দক্ষিণে বর্তমানের শ্রীলঙ্কা- সবই ছিলো অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত। সূত্র: বিবিসি বাংলা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে উদ্বোধন করা হয়েছে ভারতের নতুন সংসদ ভবনের। সদ্য উদ্বোধন হওয়া নয়াদিল্লির ওই সংসদ ভবনে স্থাপিত একটি মানচিত্র নিয়ে নেপালে বড় ধরনের বিতর্ক শুরু হয়েছে। একইসঙ্গে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তানও।
শুক্রবার পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু।
আরএসএস বলছে, অখণ্ড ভারত হল প্রাচীন সাংস্কৃতিক ভারতবর্ষ। যেসব এলাকায় ভারতীয় সংস্কৃতি ছিল প্রাচীনকালে, তা নিয়েই ‘অখণ্ড ভারত’।
আরএসএস নেতা জিষ্ণু বসু বলছেন, গান্ধার থেকে ব্রহ্মদেশ, দক্ষিণে সিংহল- গোটা অঞ্চল জুড়েই তো একই সংস্কৃতি ছিল একটা সময়ে। এটাই তো ছিল ভারতের প্রাচীন রূপ। আফগানিস্তানের বামিয়ান বুদ্ধ বলুন বা সিন্ধু সভ্যতার যে সব নিদর্শন বর্তমান পাকিস্তানে আছে, সেগুলো তো ভারতেরই এলাকা ছিল। আবার বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে যে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন হয়েছিল, সেটাও তো ভারতবর্ষেরই অঙ্গ ছিল। ভারতের এই সাংস্কৃতিক ইতিহাস যাতে মানুষ ভুলে না যায়, সেজন্যই অখণ্ড ভারতের চিন্তা তুলে ধরা হয়।
সংসদ ভবনে যে মানচিত্রটি রাখা হয়েছে, অনেক মন্ত্রী ওই মানচিত্রের ছবি টুইট করেছেন। এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান এবং নেপালের বিভিন্ন শহরের প্রাচীন নাম লেখা আছে, কিন্তু তিব্বত বা বাংলাদেশ অঞ্চলে কোনও প্রাচীন জনপদের নাম লেখা নেই।
তিব্বতের বিভিন্ন জনপদের প্রাচীন নাম লেখা হলে তা নিয়ে চীন আপত্তি তুলতে পারে ভেবেই সম্ভবত সেগুলির নাম লেখা হয়নি। একই যুক্তিতে বাংলাদেশর অঞ্চলটিকে অখণ্ড ভারতের মধ্যে দেখানো হলেও সেখানকার কোন প্রাচীন জনপদের নামও চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির কাছে এই মানচিত্র একটা ভুল বার্তা দেবে বলে মনে করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ ইমন কল্যান লাহিড়ী।
তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে ঐতিহাসিকভাবে আমরা যে ভূখণ্ড পেয়েছি, ভারতবর্ষ সেই ভূখণ্ডের ওপরেই প্রতিষ্ঠিত। এর দর্শন, এর ধারণা অনেক গভীর। দেশ পরিচালিত হয় সংবিধান মেনে, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ মেনে। তাই এধরনের পদক্ষেপ প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে অবনতি হবে বলেই আমার মনে হয়।
দ্য হিন্দু বলছে, ভারতের নতুন সংসদ ভবনে স্থাপিত ম্যুরালটিকে অখণ্ড ভারত বা অবিভক্ত ভারতের মানচিত্র হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। আর এটিই দল-মত নির্বিশেষে নেপালি রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বিতর্কিত ওই ম্যুরালে গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনি দেখা যাচ্ছে, যা এই অঞ্চলের ওপর ভারতের দাবির ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে নেপাল লুম্বিনিকে নেপালের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই এক বিবৃতিতে বলেছেন, সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারত’-এর বিতর্কিত ম্যুরাল নেপালসহ প্রতিবেশী দেশ ও অঞ্চলে অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকারক কূটনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। ভারতের অধিকাংশ নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে আস্থার ঘাটতি রয়েছে, এই ঘটনা সেটি আরও বাড়িয়ে দেওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
দ্য ডন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাজধানী ইসলামাবাদে সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলার সময় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বালুচ নয়াদিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনে বিতর্কিত ম্যুরাল স্থাপন করায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।
মমতাজ জাহরা বালুচ বলেছেন, ম্যুরালটিকে ‘অখণ্ড ভারত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ভারতের একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ বিজেপির রাজনীতিবিদদের দেওয়া বিবৃতিতে আমরা ব্যাপকভাবে আতঙ্কিত হয়েছি।