ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা বাংলাদেশকে বিদেশিদের কাছে বন্ধক দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়’। তার এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বুধবার প্রধানমন্ত্রী সেন্টমার্টিন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা পুরোপুরি ‘বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’। বিএনপি কখনো দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়নি, বরং হাসিনা সরকারই দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছে।
সেন্টমার্টিন নিয়ে শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা রাজনৈতিক কৌশল।
গতকাল সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। এর আগে বুধবার দুপুরে সুইজারল্যান্ড সফর নিয়ে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সেন্টমার্টিন ও বিএনপি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই কথাগুলো বলে প্রধানমন্ত্রী কিছু সুবিধা পেতে চান। সেই সুবিধা যদি উল্টো হয়… এটা উনি বুঝেন না।
উনি এসব কথা বলেছেন উনার অফিশিয়াল পজিশন অ্যাজ প্রাইম মিনিস্টার থেকে? নাকি অ্যাজ প্রেসিডেন্ট অব আওয়ামী লীগ?’ বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন তুলে বলেন, এখন আমি তাকেই (প্রধানমন্ত্রী) জিজ্ঞাসা করতে চাই, উনি বিএনপি’র বিরুদ্ধে যে মিথ্যা, সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ করেছেন তা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে পড়ে কিনা? সরকার প্রধানের এই বক্তব্য পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ স্ট্যান্ড, উনি এটা বলে, তারপরে উনি যেটা বলেছেন, আমি একবিন্দু জীবন থাকতে দেবো না, এই কথাটা সম্পূর্ণ স্ট্যান্ড। উনি যখন হেরে গেলেন ২০০১ সালের নির্বাচনে তখনো উনি একই কথা বলেছেন।’ বিএনপি দেশ বিক্রি করেনি, স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি একটা দল যে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, স্বাধীনতার রক্ষায় সব সময় ত্যাগ স্বীকার করে এসেছে।
এই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, লড়াই করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু তাদের (ক্ষমতাসীন সরকার) বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আছে। নিজেও বলেছেন, আমরা তো সব দিয়ে দিয়েছি, বলে নাই? কাকে দিয়েছেন? সেই বিষয়টা আপনারা জানেন… ঠিক না? এখন প্রশ্নটা হচ্ছে এই জায়গা, মানুষকে ওনারা এত বোকা ভাবেন কেন? এই সমস্ত বলে যে পার পাবেন না, এটা তার বোঝা উচিত।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার তার কাছে আহ্বান এখনো সময় আছে দয়া করে জনগণের যে ভাষা, জনগণের যে আশা-আকাঙ্ক্ষা সেটা দেখুন এবং যে চাহিদা সেটা দেখুন। জনগণ চাচ্ছে এই মুহূর্তে আপনারা সরে যান, এটাই চাচ্ছে জনগণ। রাইট নাউ। ইউ টক টু অ্যানি বডি। আমি আজ পর্যন্ত একজন রিকশা শ্রমিক পাইনি, একজন সিএনজি চালক পাইনি, গার্ডের কাজ করে, দোকানে কাজ করে একজন পাইনি যে, তারা বলবে হাসিনা থাকুক। কিছু সুবিধাভোগী এবং এই সময়ের বেআইনিভাবে অর্থ উপার্জনকারী উচ্ছিষ্টভোগী লোক ছাড়া একথা আর কেউ বলছেন না।’ তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় সেটা এসেছে যে, সাহায্য চাওয়ার কথা বলেছেন।
এটা তো তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীই বলেছেন, আপনারা সবাই সেটা জানেন। একবার ভারতের কাছে বলেছেন, একবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েও বলেছেন যে, আপনারা একটু সাহায্য করেন যাতে করে বিএনপি নির্বাচনে আসে, তাদের যেন সাহায্য করেন…আবার যেন তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হয়। উনি স্বীকার করেছেন।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জিনিসগুলো আমরা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল, আমরা ইচ্ছা করলেই বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারি না। ওনাদের মন্ত্রীরা পারেন, ওনারা পারেন, উনিও পারেন। কিন্তু আমরা সেটা পারি না। আমরা যখন কথা বলি, দায়িত্ব নিয়ে কথা বলি, উইথ অল রেসপন্সিবিলিটিজ।’ তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কালকেই স্টেটম্যান্ট দিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে এবং তারা এভাবে কোনো কথাই বলতে পারে না। ওয়াট অ্যানি ব্লাপ।’ ‘এক্ষেত্র উনি তৈরি করেছেন। আমরা সব সময় বলে এসেছি, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমেত্ব বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটি কাউকে দেয়ার পক্ষপাতী না।
আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে প্রতিরোধ করবো’ বলেন মির্জা ফখরুল। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, লিটন মাহমুদ, হাজী মো. মনির হোসেন, আনম সাইফুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাঈদ হাসান মিন্টু, খন্দকার এনামুল হক এনাম, মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাইদ মোরশেদ পাপ্পা, মহানগনর দক্ষিণ কৃষক দলের হাজী মো. কামাল হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন বাদশা ও পূর্ব ছাত্রদলের মোহাম্মদ আল আমিন প্রমুখ।