ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘জনগণ যাকে খুশি তাকে দেবে, জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বাছাই করবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
এসময় দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
ইহসানুল করিম বলেন, ‘বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা দেশের মানুষের অধিকার আদায় লড়াই করেছেন। তার পরিবারও সবসময় মানুষের অধিকারের প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করাই তার অঙ্গীকার। এর আগেও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করা হয়েছে। এবারও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছেন। জনগণ যাকে খুশি তাকে দেবে, জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বাছাই করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতে বিএনপি কীভাবে ভোট কারচুপি করেছে তা দেশের মানুষ দেখেছে। সংগ্রাম করে সেটি পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকারই স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে ভোট চালু করেছে। ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি নৃশংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পাচঁশ জন মানুষ নিহত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাকে বাংলাদেশে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। হত্যার উদ্দেশে বারবার তার ওপর হামলা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তার ওপর গ্রেনেড হামলা করা হয়। সেই হামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থকরা মানব প্রাচীর তৈরি করা তার প্রাণ বাঁচিয়েছিল কিন্তু অনেক নেতাকর্মী সেদিন গ্রেনেড হামলা মারা যায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত মার্কিন ভিসা নীতি প্রসঙ্গে আজরা জেয়া বলেন, ভিসা পলিসি হচ্ছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও প্রতিশ্রুতি আছে। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়তা করতে এ ভিসা নীতি।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, কোনো দলের প্রতি তাদের কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। তারা একটা নিরপেক্ষ, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চান এবং অনুষ্ঠিত করা হবে।
সাক্ষাতে রোহিঙ্গা বিষয়ে কথা বলেন আজরা জেয়া। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানান মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি।
রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিচালন ব্যয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে বলে জানান উজরা জেয়া।
এসময় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দুটি এলাকায় বাংলাদেশ বর্তমানে ১ মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবপাচার, অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলছে, যেটি বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া।
শ্রমিক ইস্যুতে আলোচনাকালে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মালিকদের চাপ দিয়ে শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাড়িয়েছেন।