ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০১৪ সালে কারচুপি করে, ২০১৮ সালে সবাইকে বোকা বানিয়ে, বিচার ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে, খায়রুল হকের ওপর জোর দিয়ে পার্লামেন্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিল করে দেয় এই শেখ হাসিনার সরকার। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে, নিরপেক্ষ সরকার থাকলে, নির্দলীয় সরকার থাকলে আওয়ামী লীগের ভাত নেই। ৩০টি আসনও পাবে না। গতকাল নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে মেহনতী মানুষের পদযাত্রায় জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, তারা বলে নির্বাচন আমাদের অধীনে হবে। আমরাই ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবো। আমরাই ভোট দেওয়াবো, আমাদের মতো করে সকলকে ভোট দিতে হবে। নইলে চলে যেতে হবে। এমনকি আমাদের ভোটারদের এখনো বলে ভোট কাকে দিবা। যদি বিএনপিকে ভোট দিতে চাও তাহলে তোমার ভোট হয়ে গেছে। ভোটকেন্দ্রে যাইতেই দেয় না।
শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা আমাদের ডেকে বলেন নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে সবাই ভোট করতে পারবেন। সবাইকে বলেন ভোট করতে আমি কোনো বাধা দেবো না।
আমরা ভাবলাম বোধ হয় শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে! ভূতের মুখে রাম রাম। আগের রাতে ভোট হয়ে গেল। এখন আবার বলছে আমরা সুন্দর ভোট করবো। আমাদের অধীনেই ভোট হবে। ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশান হবে। আহারে কী আবদার! শিয়ালের কাছে বার বার কুমিরের বাচ্চা দেয়া যাবে না। বার বারই খেয়ে ফেলবে। আমরা এবার আর খেতে দিবো না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবার মানুষ জেগে উঠেছে। এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি। কীভাবে তাদের বিশ্বাস করবো।
সুবর্ণচরে একজনকে শুধু ধানের শীষে ভোট দেয়ার অপরাধে অকথ্যভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এভাবে তারা অসংখ্য মা-বোনকে বেইজ্জত করেছে। আজকে শ্রমিক ভাইয়েরা বাজারে যেতে পারে না। বাজারে গেলে চাল কিনতে পারে না, ডাল কিনতে পারে না, মাংস কিনতে পারে না, সবজি কিনতে পারে না। ১০ টাকায় চাল দিবে বলেছে, এখন ৯০ টাকা। ঘরে ঘরে চাকরি দিবে বলেছে। কোনো চাকরি হয়নি। তাদের লোকদের কাছ থেকে তারা ২০-৩০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে চাকরি দিয়েছে।
দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। এটা একটা লুটের রাজত্বে পরিণত করেছে। ব্যাংকগুলো সব লুট করতে করতে খালি করে দিয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার পাচারের টাকা দেশে নিয়ে আসার একটা বিধান করেছে। দেশে নিয়ে আসলে আবার আড়াই পার্সেন্ট ইনসেনটিভ পাবে। কী মজা, আমাদের পকেট থেকে টাকা কেটে রেখে ট্যাক্সের টাকা নিয়ে তারা আবার চোরদেরকে পুরস্কার দিচ্ছে।
এ সমস্যা শুধু বিএনপি’র নয়, এ সমস্যা শুধু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নয়। এ সমস্যা সমগ্র জাতির। আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজকে বিপন্ন। আমাদের আজকে ভোট দেয়ার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, আর কোনো সময় নেই, তাদের সময় শেষ। আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি। আবারো বলছি, ভালো ছেলের মতো সুবোধ বালক-বালিকার মতো পদত্যাগ করেন, সংসদ ভেঙে দেন। যদি ভালোই ভালোই শুনে পদত্যাগ করেন তাহলে তো ভালো। তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৮ বছর কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আপসহীন সংগ্রাম করেছেন। আমরা নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই ৩১ দফা দিয়ে আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সমন্বয়ে পদযাত্রায় আরও বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, বিএনপি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম প্রমুখ। এ সময় নোয়াখালী জেলা বিএনপি’র সভাপতি গোলাম হায়দার, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রহমান, নোয়াখালী জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ আজাদ, নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনজুরুল আজম সুমন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খানসহ পদযাত্রায় বৃহত্তর নোয়াখালীর পাঁচটি জেলার নেতাকর্মী অংশ নেয়।