DMCA.com Protection Status
title="৭

এবার আমাদের উপর আক্রমন করলে,পাল্টা আক্রমনঃ ওবায়দুল কাদের

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং  সড়ক পরিবহন ও মিডনাইট হাসিনা সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো ধরনের সংঘাতে যাবে না আওয়ামী লীগ। তবে আন্দোলনের নামে বিএনপি আক্রমণ করলে বাঁচার জন্য পাল্টা আক্রমণ করবে আওয়ামী লীগ। আর এটাই বাস্তবতা।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।

সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে একই দিনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে সংঘাত সৃষ্টিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সমকাল এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেশ খোলামেলা কথা বলেছেন ওবায়দুল কাদের।

গতকাল বুধবার বিকেলে তিনি এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আওয়ামী লীগ দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ কখনোই সংঘাতে জড়াবে না। সর্বোচ্চ ধৈর্য দেখিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। 

ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর রাতে বিএনপির আজকের মহাসমাবেশের দিনক্ষণে পরিবর্তন এনে তা আগামীকাল শুক্রবার নির্ধারণ করা হয়। আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন– যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগের যৌথ সমাবেশও পিছিয়ে আগামীকাল ধার্য করা হয়েছে।

এই অবস্থায় বিএনপির সমাবেশ পিছিয়ে দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের সমাবেশের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা– জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত রাতে জানান, পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। এই মাঠে সমাবেশের মঞ্চ নির্মাণসহ আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির জন্য দুই দিন সময় প্রয়োজন। এ জন্য তাদের সমাবেশ পিছিয়ে শুক্রবার নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমাবেশ পিছিয়ে দেওয়া সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেছেন, বিএনপি কথিত আন্দোলনের নামে তাদের কর্মীদের লেলিয়ে দিয়ে অতীতের মতো অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও করলে, জনগণের জানমালের ক্ষতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সেই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগেরও দায়িত্ববোধ আছে। ওই দায়িত্ববোধ থেকেই বিএনপির সব ধরনের সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা হবে।

‘বিএনপির কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি কেন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ’– এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ‘পাল্টাপাল্টি বুঝি না। বিএনপির কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগেরও কর্মসূচি থাকবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এমনটা চলবে– এটা আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার ও ঘোষণা। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে যাচ্ছে না।’

‘রাজধানীতে একই দিনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কিনা’– এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ঢাকায় কি পাল্টাপাল্টি মারামারি হচ্ছে? কোনো রাজনৈতিক সংঘর্ষ হয়েছে? কয়েক দিন আগে রাজধানীতে এক কিলোমিটার দূরত্বে সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ নিয়ে তো কোনো সমস্যা হয়নি; সংঘাত হয়নি। কথায় কথায় কেন সংঘাতের আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে?

সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। সুতরাং রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ হবেই। সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। সেটা তাদের বিষয়। এ নিয়ে কি তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে? আওয়ামী লীগ তো তাদের সঙ্গে মারামারি করতে যায়নি। যাবেও না। তবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সতর্ক অবস্থায় রাজপথে থাকবে। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবিলা করবে।

আওয়ামী লীগ আগ বাড়িয়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংঘাতে জড়াবে না বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ আক্রমণে যাবে না। তবে বিএনপি আন্দোলনের নামে আক্রমণে গেলে বাঁচার জন্য পাল্টা আক্রমণ করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি রাজনীতির নামে অপ্রিয়, অনাকাঙ্ক্ষিত, অপ্রত্যাশিত কিছু করার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চালালে আওয়ামী লীগ অবশ্যই চুপ করে থাকবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলা হবে।

‘আগামী দিনের রাজনীতিতে সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা দেখছেন কিনা’– এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, অবশ্যই। বিএনপি সবসময়ই সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। দেশে নাজুক অবস্থা তৈরির জন্য নানামুখী অপচেষ্টা চালাচ্ছে। হাতের নাগালেই ক্ষমতা– এমন ধারণা দিয়ে ওরা তাদের নেতাকর্মীকে মাঠে নামিয়েছে। জেলা-উপজেলায় সংঘাত সৃষ্টির জন্য নেতাকর্মীকে উস্কানি দিয়ে যাচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে প্রকাশ্যে বিএনপি কর্মীদের হামলার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা কি উস্কানি নয়? কিন্তু আওয়ামী লীগ ধৈর্য ধারণ করেছে। সংঘর্ষে জড়ায়নি।

সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সুখবর দিচ্ছে। সব মিলিয়ে জনগণ বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ৭০ শতাংশ জনগণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছে। জনগণ আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার জন্য উদগ্রীব।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্র নস্যাৎ করেছে। তারা রাষ্ট্র পরিচালনার নামে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিচার বিভাগকে দলীয় কার্যালয়ের আঙিনায় রূপান্তরিত করেছিল। সেই বিএনপির মুখে আজ গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের কথা ভূতের মুখে রাম নাম ছাড়া আর কিছুই নয়।

তিনি আরও বলেছেন, বিএনপির রাজনীতির মূল হাতিয়ার হলো সন্ত্রাস ও মিথ্যাচার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ পন্থায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের টুঁটি চেপে ধরেছিলেন। এই ব্যক্তিই বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষার জন্য সংবিধান কাটাছেঁড়া করেছেন। আওয়ামী লীগ সংবিধান কাটাছেঁড়া করেনি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আওয়ামী লীগ শান্তি চায়। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই আওয়ামী লীগের প্রত্যাশা। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার পথে বাধা দিচ্ছে বিএনপি। তারা নির্বাচন বানচালের জন্য ষড়যন্ত্র করছে। আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও সহিংসতা সৃষ্টি করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ তা মোকাবিলা করবে।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, নির্বাচনকালে সরকারের প্রধান হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ওই সময়ে রুটিন ওয়ার্ক করবেন। নির্বাচন কমিশনের কোনো কাজে সরকার কোনোভাবেই কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন হবে। নির্বাচন-সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলোও নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। এখানে বিএনপির আপত্তি কেন?

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে শত শত নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল। তিন হাজার ৮০০ যানবাহন, পাঁচ শতাধিক স্কুল, ভূমি অফিস, মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল। বিএনপি সবসময়ই গণচেতনার বিপরীতে পথ চলা রাজনৈতিক অপশক্তি। বিএনপি ও তার দোসররা বারবার এ দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!