DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

আমাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষঢ়যন্ত্র হচ্ছে: শেখ হাসিনা

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা হচ্ছে। আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ বছর ধরে সংঘাত ছিল, আমি সরকারে (১৯৯৬) আসার পরে শান্তি ফিরিয়ে আনি। সেখানেও আবার নানা রকম অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা হয়। যেহেতু এটা আমি জানি, আমি বুঝি, যে কারণে কীভাবে আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাবে। তাদের কিছু কেনা গোলাম আছে, পদলেহনকারী আছে তাদের বসিয়ে এই জায়গাটাকে নিয়ে খেলবে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব থেকে অবাক লাগে, যেসব দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যখন আমাদের মানবাধিকারের কথা বলে। তারা নির্বাচনের কথা বলে, স্বচ্ছতার কথা বলে। তারা এখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে খুব উতলা হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, ২০০১ সালের নির্বাচনে এ দেশে নির্বিচারে অত্যাচার চলল। কত মানুষকে খুন করেছে, হাত কেটেছে, চোখ তুলে নিয়েছে ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। তখন নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। সেই নির্বাচনে তো আমাদের হারার কথা নয়। সে নির্বাচনে জোর করে আমাদের হারানো হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল তখন তাদের নির্বাচনী চেতনা কোথায় ছিল? জিয়াউর রহমান বা জেনারেল এরশাদের সময় ৪৮ ঘণ্টা ভোটের ফল বন্ধ রেখে ফল ঘোষণা করে সেটা নিয়ে তো এদের কোনো উদ্বেগ দেখিনি। আজকে তাদের কাছ থেকে নির্বাচনের কথা, মানবাধিকারের কথা আমাদের শুনতে হয়। যেখানে আমরা বাবা-মায়ের হত্যার বিচার চাইতে পারতাম না। আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? হত্যার বিচার চেয়ে একটা মামলা করার অধিকার আমাদের ছিল না।’ 

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ এবারের ইলেকশনের সময় যেন খুব বেশি উতলা হয়ে পড়ল। নির্বাচনের একেবারে দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোথায় কী? কীভাবে হবে, তাই নিয়ে সব থেকে বেশি…এবং একের পর এক তাদের লোকজন আসা শুরু করল। কেন? কারণটা কী? আর বিএনপি এখন তাদের চোখের মণি, যে বিএনপি এত মানুষ হত্যা করেছে, জাতির পিতার হত্যার সাথে জড়িত। তারা কয় দিন আগেও আগুন দিয়েছে। ২০১৩, ১৪ ও ১৫-তে অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করল। কিছুদিন আগেও তো পুলিশের গাড়িতে আগুন দিল। পুলিশের ‍ওপর আক্রমণ করল। তো পুলিশ কি বসে বসে মার খাবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে বিএনপি সন্ত্রাসী দল হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, যাদের হাতে আমার বাবা-মা-ভাইয়ের রক্তের দাগ, হাজার হাজার নেতা-কর্মীর রক্তের দাগ, তাদের জন্য তারা (যুক্তরাষ্ট্র) উতলা হয়েছে। আজ তাদের নিয়ে ক্ষমতায় বসাতেই হবে। আসলে ক্ষমতায় বসানো নয়। আজকে সবার উদ্দেশে একটা কথা এখানে বলে রাখি, এদের উদ্দেশ্য এখানে নির্বাচন নয়, এদের উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নয়। আমরা যে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে, মানুষ আজ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, দারিদ্র্যের হার কমছে। এরা একটা জিনিসই করতে চায়—বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে এরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’

‘উদ্দেশ্য—বিভিন্ন দেশে আক্রমণ’
বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল ভৌগোলিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে ভারত মহাসাগর, অপর দিকে প্রশান্ত মহাসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভারত মহাসাগরে কিন্তু আমাদের বে অব বেঙ্গল (বঙ্গোপসাগর)। এর গুরুত্ব অনেক বেশি।’ তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের গণতন্ত্রের নাম নিয়ে, নির্বাচনের নাম নিয়ে, নানা নাম নিয়ে এই দেশে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করতে চায়, যাতে করে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করা যায়। এটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে আক্রমণ করা, দেশগুলোকে ধ্বংস করাই হচ্ছে কারও কারও উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই কিন্তু এদের নানা ধরনের টালবাহানা। এটা দেশবাসীকে বুঝতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কিছু আঁতেল আছে। জানি না, তারা এসব চিন্তা করে কি না? তারা এগুলো কখনো উপলব্ধি করে কি না? সেগুলো না করেই তারা এদের সাথেই সুর মেলায়। দুটো পয়সার লোভে তারা নানাভাবে এই কাজগুলো করে বেড়ায়। এ বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের এতটুকু ক্ষতি করে কোনো দিন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা আমি করি না। তাহলে ২০০১ সালে যখন আমার কাছে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব এসেছিল…খালি মুখেই বলতাম, আমি গ্যাস বিক্রি করব; তাহলে ক্ষমতায় আসার কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু দেশের স্বার্থ বেচে, দেশের মানুষের সম্পদ অন্য কোনো দেশের হাতে তুলে দিয়ে আমাকে ক্ষমতায় যেতে হবে—এ রকম ক্ষমতালোভী আমি না।’

বিএনপি আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও দেশের মানুষ বিএনপির পেছনে দাঁড়ায়। কীভাবে যায়, সেটা আমার প্রশ্ন। তারা এ পোড়া মানুষগুলোর চেহারা দেখে না? যারা জীবন্ত মানুষকে পেট্রল দিয়ে পোড়াতে পারে, তারা কি মানুষ! এদের মধ্যে কি মনুষ্যত্ব আছে? জনগণের অর্থসম্পদ দুই হাতে লুট করেছে।’

পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদেরই এক কুলাঙ্গার, সুদখোর, যে শ্রমিকের অর্থ মেরে খায়, ট্যাক্স ফাঁকি দেয়, শ্রমিকের অর্থ চুরি করে খায়, গরিব মানুষের রক্ত চুষে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে, তাদের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি। এটা আমরা দেখি।’

দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি–এটাই অনেকের অন্তর্জ্বালা। লুট করে খেতে পারছে না, ক্ষমতায় নাই। জনগণকে শোষণ করে খেতে পারছে না, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারছে না। তাই ধোয়া তুলছে নির্বাচনের। বিএনপির মুখে নির্বাচনের কথা আসে কোথা থেকে?’ তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে চলে গিয়েছিল। এখন ওখানে বসে বড় বড় কথা বলে, টাকা কত লাগবে লোক নিয়ে আসেন। দেশের মানুষের কত টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে বিদেশে, একবার চিন্তা করে দেখেন। তারা এখন জনগণের ভাগ্যে নিয়ে খেলতে চায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর উত্থান জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে সর্বহারা পার্টি, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন পার্টির সঙ্গে ভিড়ে যায়। সেই সময় ছাত্রলীগ ভেঙে যে জাসদের সৃষ্টি হয়, সেই জাসদের সঙ্গেও এরা যুক্ত হয়। জিয়াউর রহমান জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ভোট করার অধিকার ফিরিয়ে দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে বানায় প্রধানমন্ত্রী। এরশাদও তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন খুনিদের নিয়ে প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল গঠন করে। এরশাদ খুনি ফারুককে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার সুযোগ দেয়।’

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!