ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সিঙ্গাপুর সরকার দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালিয়েছে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ পাচার করে যারা সিঙ্গাপুরে এনেছে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চালানো হয়। ব্যাপক এই অভিযানে এক বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারের সমপরিমাণ সম্পদ, নগদ মুদ্রা এবং বিলাসবহুল গাড়ী জব্দ করেছে।
বিভিন্ন বিলাসবহুল বাংলো এবং অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানের সময় গ্রেফতার এড়াতে একটি বাংলোর দোতলা থেকে একজন লাফিয়ে পড়ে। পরে একটি ড্রেনে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। এমন তথ্য দিয়েছে সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক টিভি চ্যানেল নিউজ এশিয়া।
সিঙ্গাপুর পুলিশ ফোর্স -এর ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, এই অভিযানে নারীসহ ১০ জন বিদেশী নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।এদের মধ্যে সাইপ্রাস, তুরস্ক, চীন, কম্বোডিয়া, ভানুয়াতুর নাগরিক রয়েছেন। তাদের সবার বয়স ৩১ থেকে ৪৪ বছরের এর মধ্যে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের কেউ সিঙ্গাপুরের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা নন। এছাড়াও আরও ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং ৮ জন পলাতক রয়েছেন। এসব ব্যক্তি পরষ্পরের সাথে সম্পর্কিত বলে পুলিশ বলছে।
সিঙ্গাপুর হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। দেশটিতে অপরাধের হারও অনেক কম। তবে অবৈধ উপায়ে বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার করে সিঙ্গাপুরে অর্থ আনার বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে।
জালিয়াতি, অর্থ পাচার, এবং বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এসব ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ বিভাগ।
সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাচার হয়ে আসা এসব অর্থের উৎস দেখানোর জন্য জাল কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এমন সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয় বলে পুলিশ ফোর্স-এর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রায় ৪০০ জনের বিশাল দল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। এতে বাণিজ্য বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ, স্পেশাল অপারেশন্স কমান্ড এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিল।
এ সময় ট্যাংলিন, বুকিত টিমাহ, অর্চার্ড রোড, সেন্টোসা এবং রিভার ভ্যালিসহ দেশটির অভিজাত পাড়ায় একযোগে অভিযান চালানো হয়।
এই অভিযানে এক বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ও সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে – অভিজাত বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, দামি ঘড়ি, স্বর্ণের বার, দামি ব্যাগ ও মদ। জব্দের তালিকায় নগদ ২৩ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলারের সমপরিমাণ অর্থ রয়েছে।
এই অভিযানে ৯৪টি বিলাসবহুল বাড়ি জব্দ করা হয়েছে, যেগুলো দেমটির অভিজাত এলাকায় অবস্থিত। এছাড়া ৫০টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
তদন্তের স্বার্থে এবং অপরাধে জড়িত সন্দেহে ১১০ মিলিয়ন ডলারের ওপরে জমা থাকা ৩৫টিরও বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছে৷