ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দিল্লিতে তিন দিনের সফর শেষে ঢাকায় ফিরেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। এ সময় ভিআইপি গেটে তাকে স্বাগত জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলটির নেতাকর্মীরা।
পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, ।ভারত বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন চায়। নির্বাচনটা যাতে সময়মতো হয়। নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা না হয়। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা যাতে অনিশ্চিত না হয়- এরকম একটি পরিবেশ তারা দেখতে চায়। তাদের এখানে অনেক বিনিয়োগ আছে। অনেক ভারতীয় এখানে কাজ করেন। তাই তারা এখানে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ দেখতে চায়।
জিএম কাদের আরও বলেন, ভারত মনে করে জাতীয় পার্টি একটি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দল। জাতীয় পার্টির ওপর তাদের আস্থা রয়েছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কটা বরাবরই সৌহাদ্যপূর্ণ; যা সবসময় ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলে তারা আশা করছে। ভারত সরকারের আমন্ত্রণে জিএম কাদের গত ২০ আগস্ট দুপুরে তিন দিনের সফরে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।
জিএম কাদেরের সঙ্গে তার সহধর্মিণী, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শেরিফা কাদের এবং পার্টি চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাশরুর মাওলা ছিলেন।
জিএম কাদের বলেন, ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে গেছি। সেখানে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে আমার খোলামেলা আলাপ আলোচনা হয়েছে। কার কার সঙ্গে, কী কী বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়েছে- তা আমি বিস্তারিতভাবে বলতে পারব না। কারণ আলাপগুলো ওভাবেই হয়েছে। যদি ওনারা কিছু প্রকাশ করতে চান, তা তাদের বিষয়। তারা করবেন। আমি ওনাদের অনুমতি ছাড়া এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। তবে আমরা আমাদের দ্বি-পাক্ষিক, অর্থাৎ ভারত ও বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছি।
তিনি বলেন, আমার কাছে ভালো লেগেছে যে জাতীয় পার্টি সম্পর্কে তারা ভালো ধারণা পোষণা করেন। জাতীয় পার্টি সম্পর্কে ওনাদের ধারণা ভালো।
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করার খবর সম্পর্কে জিএম কাদের বলেন, এটা উনি করেননি। ওনাকে দিয়ে এসব করানো হচ্ছে। তিনি আমার ভাবি। আমার সবচেয়ে বড় ভাইয়ের তিনি সহধর্মিণী। আমার বড় ভাইকে আমরা সবসময় নিজের বাবার মতো মনে করেছি। সেই হিসেবে আমার ভাবিকেও আমরা ছোটবেলা থেকে মায়ের মতো করেই দেখে আসছি। তাকে সেভাবেই সম্মান ও শ্রদ্ধা করে আসছি।
বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, তার সঙ্গে আমার কখনো কোনোদিন দ্বন্দ্ব-বিরোধ ছিল না, এখনো নেই। কিছু মানুষ বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন সময় তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তাকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করাচ্ছে। অথবা ওনার কাছ থেকে কিছু বক্তব্য লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আমার জানামতে, এগুলো উনি নিজের ইচ্ছায় বা জেনে বুঝে করেননি। জেনে বুঝে দিচ্ছেনও না।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এটা করার উদ্দেশ্য হলো যাতে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাতীয় পার্টিকে যাতে দুর্বল করা যায়। আমাদের বিরুদ্ধের কিছু লোক এসব করাচ্ছেন। ‘দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব’ ইত্যাদি ইত্যাদি বলে তারা মুখরোচক সংবাদ প্রচার করাচ্ছেন।
তিনি বলেন, দলটা যাতে শক্তিশালীভাবে দাঁড়াতে না পারে, দেশে-বিদেশে, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের যে একটা ইমেজ রয়েছে, সেই ইমেজ নষ্ট করতে কিংবা বলা যেতে পারে ইমেজ সংকট সৃষ্টি করতেই এসব করা হচ্ছে। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এসব করা হচ্ছে- যাতে প্রচার করা যায়, আমাদের পার্টিতে একতা নেই। দল বিভাজিত। দলের শক্তি, সামর্থ্য নাই। নীতির ঠিক নাই। দলের নেতারা একেকজন একেকরকম কথা বলেন- এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে আমাদের বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। আমি মনে করি যারা এসব করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে আরও উপস্থিত ছিলেন-জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আবুল কাশেম, সাহিদুল রহমান টেপা, এসএম আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, লে. জে. (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, নাজমা আক্তার এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, আতিকুর রহমান আতিক, জহিরুল আলম রুবেল, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আমানত হোসেন আমানত, মো. ইলিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান, নূরুল ইসলাম তালুকদার এমপি, সাজ্জাদ পারভেজ, ইকবাল হোসেন তাপস, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, সুলতান আহমেদ সেলিম, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, এইচএম শাহরিয়ার আসিফ, তারেক এ আদেল, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো. বেলাল হোসেন, মো. আমার হোসেন ভূঁইয়া, একেএম আশরাফুজ্জামান খান, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন, মো. হুমায়ুন খান, কাজী আবুল খায়ের, এমএ রাজ্জাক খান, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, মাওলানা এসএমআর জুবায়ের, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মিজানুর রহমান মিনু, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক আজাহারুল ইসলাম সরকার, বাদল, আকতার হোসেন দেওয়ান,এমএ সোবাহান, জাকির হোসেন মৃধা, মামুনুর রহিম সুমন, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, মীর সামসুল আলম লিপ্টন, কেন্দ্রীয় নেতা শাহরিয়ার জামিল জুয়েল, আব্দুস সাত্তার, আলাউদ্দিন আহমেদ, জাহিদ হাসান, মাহমুদুল হক মনি, মো. মিজানুর রহমান, জাকির হোসেন, নূরুজ্জান, আলমগীর হোসেন, মোহাম্মাদ আলী, জাতীয় ওলামা পার্টির আহ্বায়ক ড. এরফান বিন তোরাব আলী, জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম খান, মটর শ্রমিক সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম, এসএম হাসেম, রফিকুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ।
জানা গেছে, দিল্লি সফরে আগামী নির্বাচন ও জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জিএম কাদের বৈঠক করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্তে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের দিল্লি সফরের রাজনৈতিক তাৎপর্য অনেক। এর আগে গত ৬ আগস্ট ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে দিল্লি সফরে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এ দলে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পারভীন জামান এবং দলের সংসদ সদস্য আরমা দত্ত।