ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে দেশের নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, দেশের অগ্রযাত্রা যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে, অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ছাত্রলীগকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকতে হবে। গতকাল রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশে তিনি একথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, এ বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করবো। কবির ভাষায়- এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার। আমার কোনো ভয় নেই। তোমাদের বলবো, শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি, ছাত্রলীগের মূলনীতি।
এর আগে সমাবেশে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সারা দেশ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করে। সকাল ১১টা থেকে সমাবেশস্থল নেতাকর্মীদের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এ সময় নিয়ম মেনে তাদের সমাবেশে যোগ দিতে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজসহ রাজধানী ও রাজধানীর বাইরের নেতাকর্মীরা নির্ধারিত গেট দিয়ে সভাস্থলে প্রবেশ করেন। দুপুরে নেতাকর্মীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে থাকেন। এরপর নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দেশীয় ও সাংগঠনিক গান গেয়ে উজ্জীবিত রাখেন নেতারা। বিকাল ৩টার আগেই সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যবৃন্দ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
বিকাল ৩টা ৩৮ মিনিটে সমাবেশে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে মূল সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাজ পরিয়ে দেন সংগঠনটির নারী নেত্রীরা। একে একে প্রধানমন্ত্রীকে মাতৃভূমির প্রকাশনা, স্মারক নৌকা, ছাত্র সমাবেশের পোস্টারের স্মারকসহ বিভন্ন স্মারক তুলে দেন নেতারা। এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহাগনর দক্ষিণের পক্ষ থেকেও প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্মারক তুলে দেন সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতারা। রাজধানীর শাহবাগ ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয়েছে মিছিলের নগরীতে। মিছিলে এবং সমাবেশে স্লোগান ছিল একটাই- ‘ওয়ানস অ্যাগেইন শেখ হাসিনা।’ ছাত্রলীগের দাবি, স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্রসমাবেশ এটি। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নেতারা অংশ নেন।
ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনের নেতাদের সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ সমাবেশে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনের নেতাদের সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের বিষয়ে জনগণকে মনে করিয়ে দেবেন ওরা ভোট করতে আসে না। ভোট পায় না। ভোট চায় না। ভোট পাবে না। কারণ তারা তো লুটেরা, সন্ত্রাসী। মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়। মানুষের সম্পদ-ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। তারা জঙ্গিতে বিশ্বাসী। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি। এরা কখনো মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ইলেকশন তাদের কথা (লক্ষ্য) নয়। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আবারো তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়। কারণ তাদের জন্ম হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না। তারা নাকি এখন গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। যাদের জন্ম মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে, জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার মধ্যদিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে, সেই ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে তৈরি ওই বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধীরা এ দেশের কল্যাণ কখনো চাইতে পারে না। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়। বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব। সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। আমি আশা করি, ছাত্রলীগের নেতারা নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলবে।
তারা যেন ১০ টাকায় টিকিট কেটে একটু চোখটা দেখায়
অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের এত উন্নয়ন হওয়ার পরও যারা কোনো উন্নয়ন দেখেন না, তাদের বলবো তারা যেন ১০ টাকায় টিকিট কেটে একটু চোখটা দেখায়। সরকার প্রধান বলেন, কোনোকিছুই তাদের ভালো লাগে না, কোনোকিছুই তারা দেখে না। আমি তো খুব চমৎকার, খুব আধুনিক আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। খুব ভালো আই ইনস্টিটিউট এখন বাংলাদেশে আছে, যা আন্তর্জাতিক মানের এবং সমস্ত আধুনিক মেশিনপত্র সেখানে আছে। আমি নিজেও সেখানে চক্ষু দেখাতে যাই। যারা অন্ধ, কোনো উন্নতি দেখে না, তাদের বলবো ১০ টাকায় সেখানে চক্ষু দেখানো যায়। তাদের অনুরোধ করবো তারা যেন চোখটা একটু দেখিয়ে আসে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, শহীদের খাতায় নাম দেখতে চাইলে দেখবো- ছাত্রলীগই বুকের রক্ত দিয়ে সব সংগ্রামে ছিল। বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় ছিল, অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ২০০৭ সালে আমাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন ছাত্রলীগই মাঠে নেমেছিল। এ ছাত্রলীগই হচ্ছে সেই শক্তি, যারা একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। করোনায়ও ছাত্রলীগ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদের সময় আমার নির্দেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কাস্তে হাতে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে। এজন্য তাদের প্রতি আমার অনেক বিশ্বাস এবং আস্থা।
আমি মৃত্যুকে ভয় করি না
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে অনেক সংগঠন মানবাধিকারের কথা বলে। ৮১ সালে যখন আমি ফিরে এসেছি, তখন তো আমি মা-বাবা-ভাইবোন হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। জিয়াউর রহমান খুনিদের ক্ষমতায় বসায়। প্রতি পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু কোনো বাধাই আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি বাবার স্বপ্ন পূরণ ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করে দেশে এসেছি। মাঠের পর মাঠ হেঁটেছি। দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছি। দেখতে চেয়েছি, এদেশের মানুষের কী অবস্থা? তিনি বলেন, ৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশকে কী দিয়েছে? যে জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে, বিজয়ী জাতি, সেই বিজয়ের ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছিল। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলা হয়েছিল, ৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল, জয় বাংলা স্লোগান, যে স্লোগান দিয়ে লাখো মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে, সেই স্লোগান নিষিদ্ধ, রেডিও’র নাম, বিভিন্ন নাম পরিবর্তন করে।
যাদের আমরা পরাজিত করেছিলাম, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করার চেষ্টা চালিয়েছিল সেই খুনি মোশতাক, জিয়া। আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকেই ধ্বংস করার জন্য জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসা। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অল্প সময় পেয়েছিলাম, তখন বাংলাদেশের অনেক উন্নতি করেছি। ওই সময় খালেদা জিয়া ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। বলেছিল, ছাত্রদলই নাকি আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আর সেখানে আমি ছাত্রলীগের হাতে দিয়েছিলাম খাতা এবং কলম। বলেছিলাম, পড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ না হলে কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। আর অশিক্ষিত-মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে, সেই দেশের কোনোদিন অগ্রযাত্রা হতে পারে না। সরকার প্রধান বলেন, আমি মৃত্যুকে ভয় করি না।
আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করবো। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করবো। যেই চেতনা নিয়ে আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সারা জীবন কষ্ট সহ্য করেছেন, তার সেই স্বপ্ন পূরণ করবো। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই দেশে ফিরেছিলাম। তারপর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা ছিল কীভাবে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায়। তিনি আরও বলেন, উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই। নিঃশ্বেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই। আমি সেই আদর্শ নিয়েই পথ চলি। আমার কোনো ভয় নেই। এদেশের মানুষকে ভালোবাসি, স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিজে আদেশ দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক করে দিয়েছি। বিদেশে যারা যাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা যেতে পারবে। কোনো ঘরবাড়ি বিক্রি করা লাগবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাদের ওপর বদনাম দিয়েছিল, একটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য, সেটাও সরকারি বেতনধারী। সরকারি আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি থাকতে পারবে। এর বেশি হলে থাকতে পারবে না। তারপরও বেআইনিভাবে ১০ বছর চালিয়ে আবারো সেখানে থাকতে হবে, সেই লোভে বারবার আমাদের ওপর চাপ। একটি বড় দেশও বারবার চাপ দিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমডি পদে না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারে না। সে মামলায় হেরে যায়। তারপর তার বিদেশি বন্ধু দ্বারা…এটা কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বোর্ডে হয়নি। হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো, কারও কাছে হাত পেতে না। আমরা সেটা করেছি। সেটা করে বিশ্বকে দেখিয়েছি। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির পিতা ভাষণ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা কিন্তু সেই জাতি। আমাদের দাবায়ে রাখতে পারে নাই।
অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে: ওবায়দুল কাদের
ছাত্রলীগের সমাবেশে ওয়ান ইলেভেনের মতো অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ওয়ান ইলেভেন আমরা ভুলি নাই। আবারো অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেই অস্বাভাবিক সরকার বাংলার মাটিতে আমরা হতে দেবো না। তিনি বলেন, আজ দেশে-বিদেশে কতো ষড়যন্ত্র, কতো চক্রান্তের খেলা! তারা জানে, এই দেশে ৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। নির্বাচনে তাকে হারাতে পারবে না। যেই জন্য ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা থেকে সরানোর চক্রান্ত করছে।
নিষেধাজ্ঞা, ভিসা নীতি প্রয়োগ করতে চাইছে। শেখ হাসিনা ১৫ বছরের যে মুক্তি সংগ্রামের অসম সাহসী কাণ্ডারি, আজকে সেই কীর্তি তারা মুছে দেয়ার চক্রান্ত করছে। আদালতের আদেশে যে তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে, সেটাকে তারা আবার জীবিত করতে চাচ্ছে। এটা কী হবে? শেখ হাসিনা রিজাইন করবে? সংসদ ভেঙে যাবে? এই সরকার পদত্যাগ করবে? বাংলার মানুষ যেটা চায় না, তারা কেন তা করতে চায়? ছাত্রসমাজকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আজকে তারুণ্যের যে ঢেউ উঠেছে তা আবেগ ও চেতনা দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা মাতৃভূমিকে রক্ষা করবো, গণতন্ত্রকে বাঁচাবো। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তার পরিচিত শব্দবন্ধ ‘খেলা হবে’ উচ্চারণ করে বলেন, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার শত্রুদের রুখতে খেলা হবে। তৈরি হয়ে যান, প্রস্তুত হয়ে যান।
নো কম্প্রোমাইজ উইথ দ্য কিলারস: সাদ্দাম
সভাপতির বক্তব্যে সাদ্দাম হোসেন বলেন, আজকের ছাত্র সমাবেশ হচ্ছে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে আগমনী রায়। তরুণ প্রজন্মের আত্মমর্যাদা এত ঠুনকো নয়, আমরা খুনিদের রাজনীতি বাংলাদেশে মেনে নেবো না। তিনি বলেন, ১৫ই আগস্টের ঘাতক যারা রয়েছে এবং আজকেও যারা রাজনৈতিক মোড়কে বাংলাদেশে রাজনীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, গণতন্ত্রের মোড়কে দেশি-বিদেশি মোড়কে যারা বাংলাদেশে রাজনীতি করার চেষ্টা করে আজকের ছাত্র সমাবেশ থেকে আমরা বলতে চাই, খুনিদের রাজনীতি, সন্ত্রাসীদের রাজনীতি, জঙ্গিবাদের রাজনীতি বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ সমর্থন করে না। আমরা আজকে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, নো কম্প্রোমাইজ উইথ দ্য কিলারস। হত্যাকারীদের সঙ্গে আপস করার রাজনীতি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ কখনোই সমর্থন করবে না। এ সময় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের ধারণা এটি দলীয় কোনো বিষয় নয়। এটি গোটা বাংলাদেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। স্মার্ট বাংলাদেশ আজকে তরুণ প্রজন্মের কমন থিম। কমন ডেসটিনেশনে পরিণত হয়েছে। এ কারণে আজকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের আগমনী রায় দেয়ার জন্য এখানে এসেছি।
ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ানোর শপথ ছাত্রলীগের
সভাপতির বক্তব্যের পর নেতাকর্মীদের শপথ পড়ান ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। এ সময় তারা বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদাশীল করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ানোর শপথ নেন। শপথে বলা হয়, ‘আমরা বাঙালির মহান স্বাধীনতা ও পূর্ব পুরুষের পবিত্র রক্তে ভেজা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের নব রূপায়ণের রূপকার বাঙালির নির্ভরতার শেষ ঠিকানা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নামে দৃঢ়চিত্তে শপথ করছি যে, তারুণ্যের স্বপ্নের স্বদেশ, পিতার কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা এবং কন্যার পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপসহীন, অক্লান্ত, আমৃত্যু সদা সর্বদা সচেষ্ট থাকবো।
আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, বঙ্গমাতার সাধনা, দেশরত্নের সাহসকে নিজের জীবন গঠনে ও সমৃদ্ধ স্বদেশ গড়তে মূলনীতি মানবো। তারুণ্য লড়বে, তারুণ্য গড়বে, তারুণ্য দেশ বিরোধী সব অপশক্তিকে পিতার তর্জনীর দাপটে ধ্বংস করবে। বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদাশীল করতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াবে। জাতির পিতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রশ্নে এ দেশের তরুণ প্রজন্মকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’ এদিকে ছাত্রলীগের ছাত্র সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগতদের অতিরিক্ত চাপে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের। অধিকাংশ ক্যান্টিনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা ছিল না। জুমার নামাজও নির্ধারিত সময় থেকে এগিয়ে দেয়া হয় সবগুলো হলে। এ ছাড়াও বিভিন্ন হল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোর করে সমাবেশে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সমাবেশে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে যোগ দেন ধানের শীষের সংসদ সদস্য সুলতান মনসুর। সমাবেশের মঞ্চে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানের পাশের আসনেই বসেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সুলতান মনসুর। তার পরেই আওয়ামী লীগের অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা বসেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সুলতান মনসুর। নৌকার সুলতান খ্যাত এই প্রার্থী সেই সময় বিএনপি জোটের শরিক গণফোরামের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। সুলতান মো. মনসুর আহমদ ২০১৮ সালের আগে ১৯৯৬ সালে ১২ই জুনের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। ওয়ান ইলেভেন ইস্যুতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেননি।