DMCA.com Protection Status
title="৭

আগামী নির্বাচন নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের কাছে মার্কিনমন্ত্রী মিরা রেজনিকের প্রশ্ন?

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে হাসিনা সরকারের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছেন সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিক বিষয়ক বিভাগের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক।

পাশাপাশি তিনি সামগ্রিক নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন। মঙ্গলবার বিকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের  সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এসব বিষয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চান। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের আগে মিরা রেজনিক ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নবম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপে যোগ দেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগ) খন্দকার মাসুদুল আলম ওই সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তার সৌজন্য সাক্ষাৎকালে মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগ) খন্দকার মাসুদুল আলমও উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন প্রতিনিধিদলকে বিদায় দিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্র সচিব এবং মহাপরিচালক। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) জানতে চেয়েছেন, আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা বলেছি যে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তারা তা দিতেও রাজি আছেন।

মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সামগ্রিক নিরাপত্তার কথা যদি বলি সেখানে তো মানবাধিকার এসেই যায়। সেখানে আমাদের যেসব বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেগুলো আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পূরণ করছি। নিরাপত্তা সংলাপ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রেগুলার এনগেজমেন্টের অংশ উল্লেখ করে সচিব বলেন, গত বছরে ওয়াশিংটনে অষ্টম সিকিউরিটি ডায়ালগ হয়েছিল। এবারে গত বছরের আলোচনার ফলোআপ হয়েছে। 

ডেলিগেশনে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন জানিয়ে সচিব বলেন, পিউরলি ডিফেন্স রিলেটেড বিষয় ছাড়া মানবাধিকার, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, সাইবার সিকিউরিটি, ইন্দো প্যাসিফিক আউটলুক ও এনার্জি সিকিউরিটি নিয়ে কথা হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে উভয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীরতর হোক। মাল্টিফেসেটেড মাল্টিলেটারেল, পলিটিক্যাল, ইকোনমিক সব সাইডেই যেন কোনো গ্যাপ তৈরি না হয়ে সেজন্যই নিয়মিত আলোচনাকে তারাও সাধুবাদ জানিয়েছে। সরাসরি আকসু ও জিসুমিয়া চুক্তি নিয়ে নিরাপত্তা সংলাপে তেমন আলোচনা হয়নি জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটা মিলিটারি বা ডিফেন্স ডায়ালগের প্রতিপাদ্য ছিল। ফলে এই ফোরামে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে এখানে আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সিমিলার চুক্তি নিয়ে যে কাজ করছি তা আমেরিকানদের জানিয়েছি। বলেছি, জাপানের সঙ্গে আমরা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপে উন্নীত করেছি, তারা আমাদের ওডিএর আওতায় সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্ট দিতে চায়। 

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি। সচিব বলেন, সামনে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা রয়েছে। র‌্যাবের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমরা তাদের জানিয়েছি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটা অভিযোগকেই আমরা সিরিয়াসলি গ্রহণ করি। এখানে দায়মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। র‌্যাব পুলিশ প্রত্যেকেরই একটা এসওপি আছে, একটা গুলি খরচ করলে সেটারও জবাবদিহিতা আছে। যেকোনো অভিযোগ বা দুর্ঘটনায় যে সব সময় সরকার জড়িত থাকে এমন নয়, গাজীপুরে একজন শ্রমিক নেতা মারা গেছেন সেখানে আমাদের সরকার নাথিং টু ডু ইট। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদেরকেই জবাবদিহিতা করতে হয়েছে। সচিব বলেন, আমরা বলেছি, অনেক সময় লোকাল বিষয় থাকে, ১৭০ মিলিয়ন মানুষের একটা দেশ। একেক জায়গায় একেক রকম ঘটনা ঘটে। যদি আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকে ইমিডিয়েটলি সেগুলো এসওপি অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় বিচারের উদাহরণ টানেন। সংলাপে ইন্দো প্যাসিফিক আউটলুক নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলে যাতে ফ্রি নেভিগেশন হয়, ইকোনমিক যে পোটেনশিয়াল আছে সেগুলো যেন পুরোপুরি ইউটিলাইজেশন হয় সেটাই চেয়েছি আমরা। সেগুলোর ব্যাপারে তারাও একমত। তারাও এটা চায় না যে, কোনো পার্টিকুলার দেশ আধিপত্য বিস্তার করুক, ফ্রি নেভিগেশনে বাধা হয়ে দাঁড়াক। এ নিয়ে ঢাকায় সদ্য সমাপ্ত আন্তর্জাতিক সেমিনারের প্রসঙ্গ টেনে সচিব বলেন, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারতের এক্সপার্টরা বাংলাদেশের অবস্থানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং অন্য সংস্থার ক্যাপাসিটি বিল্ডিংয়ে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত থাকে সেটি চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, র‌্যাবের উপরে আপাতত তাদের রেস্ট্রিকশন আছে। আমাদের ইলেকশন কমিশন আছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড এদের সবার সঙ্গেই সহযোগিতা আছে। আর্মি টু আর্মি জয়েন্ট এক্সারসাইজ আছে সেগুলো অব্যাহত থাকবে এবং আগামীতে আরও জোরদার করা যাবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নবম নিরাপত্তা সংলাপে অংশ নিতে আসা ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সরকারের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অধিকার কর্মী এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বলে জানা গেছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!