ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ঢাকায় সফররত রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বৈঠকে রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে রাজধানীর ইন্টার-কন্টিনেন্টালে বৈঠকে বসেন তারা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার রাতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়াতে ও জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ভালো ও দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ জোরদার করেছি। ভারতের পর বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ বলেন, আমরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করেছি। আমরা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অব্যাহত আলোচনাকে সমর্থন করি। রোহিঙ্গা ইস্যু, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং রাশিয়ায় বৃহত্তর বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই আলোচনা ও আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হোক।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প—রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়েও কথা বলেন এবং এর ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসায় আমরা খুবই আনন্দিত। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করছে। আজকে এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা অনেক ইস্যু তুলে এনেছি। আমাদের ইস্যু ছিল, আমাদের রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্ট। আপনারা জেনে খুশি হবে যে এটি মোটামুটি অনটাইম শেষ হবে। আমাদের ইস্যু ছিল রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তারা (রাশিয়া) আমাদের সঙ্গে একাত্ম যে তাদের (রোহিঙ্গাদের) দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। এইভাবে আমরা তাদের সহায়তা চেয়েছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়ানোর জন্য কথা বলেছি। আমাদের জন্য অনেক স্কোপ আসছে—১০০টি ইকোনোমিক জোন, ২৯টি হাইটেক পার্ক- এইগুলোর অ্যাডভান্টেজ যাতে নিতে পারে সে জন্য আমরা অনুরোধ করেছি। তারা আমাদের বলেছে, তাদের দেশ থেকে আমরা এলএনজি আনতে পারি। তারা আমাদের প্রস্তাব করেছে যে তারা দেশ থেকে আমরা ক্লোরাইড আনতে পারি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই ইউক্রেন ওয়ারের কারণে এই ব্যবসা-বাণিজ্যের যে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে- সেটি তুলে ধরেছি। আর আমরা বলেছি তাদের দেশে একটি ইকোনোমিক কমিশন আছে এশিয়ান ইকোনোমিক কমিশন সেটাতে তাদের পারটিসিপেন্ট চাই। তারা বলেছে, সেটা নিতে হলে বাকি রাষ্ট্রের যে সব সদস্য বিশেষ করে তাজাকিস্তান, তাদের পারমিশন লাগবে। সবাই মিলে ডিশিসন…। তো আমাদের দেশের যেগুলো বাইলিটারাল ইস্যু সেগুলো ওনার (লাভরভ) কাছে তুলে ধরেছি এবং হি ওয়াজ ভেরি সিমপিথেটিক এবং বলেছেন এইগুলো ব্যাপারে দৃষ্টি দেবেন।’
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুদিনের কর্ম সফরে ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন তার রুশ প্রতিপক্ষকে ফুলের তোড়া হাতে স্বাগত জানান।
ল্যাভরভের সফরকে পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর।
ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস জানিয়েছে, দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতামত বিনিময় করবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর শেষ করে ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর ল্যাভরভের বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল, প্রধানত ২৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২২তম আইওআরএ মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে যোগদানের জন্য। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই সফর স্থগিত করা হয়।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও তার রুশ সমকক্ষ সের্গেই ল্যাভরভ টেলিফোনে আলাপ করেন এবং বাংলাদেশ ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন এবং এ সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
টেলিফোনে আলাপকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিডিউল জটিলতার কারণে ঢাকায় আসতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং শিগগিরই সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
মোমেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন ল্যাভরভ। এরপর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন তিনি। এদিন বিকেলেই জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।