ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ করোনাভাইরাস ও বৈশ্বিক মন্দায় বাংলাদেশে কোটিপতি আমানতকারী হিসাবধারীর সংখ্যা কয়েকটি প্রান্তিকে কমেছিল। তবে কোটিপতির সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা সত্ত্বেও হঠাৎ করে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে।
মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২ জন। জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪ জনে। ৩ মাসের ব্যবধানে দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার। মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে ব্যাংকগুলোতে আমানত প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। একইসঙ্গে ঋণ প্রবাহও বাড়তে শুরু করে। তবে আমানতের চেয়ে ঋণ প্রবাহ বেশি বাড়ছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকার রেকর্ড পরিমাণে ঋণ নেয়। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কম নেয়। সরকারের ঋণের কারণেও ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট বেড়েছে।
ব্যাংকিং খাতে হঠাৎ করে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এখন অনেকে যুক্তরাষ্ট্র বা তাদের মিত্র দেশগুলোতে অর্থ সম্পদ রাখতে চাচ্ছেন না। এ কারণে অনেকে অর্থ স্থানান্তর করছেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও এখন কমে গেছে। অর্থাৎ সে দেশ থেকে রেমিট্যান্স আগেই চলে এসেছে। এ কারণে এখন কম আসছে। এছাড়া সামনে নির্বাচন। এ কারণেও অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখছেন। কারণ নির্বাচন করলে সম্পদের হিসাব দেখাতে হয়। এখানে সম্পদের হিসাব গোপন করলে পরে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। আমানতকারীদের একটি অংশ আবার ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছেন। এসব কারণে ব্যাংকে আমানত বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি জুনের পরিসংখ্যান হতে দেখা যায়, ব্যাংকিং খাতে শুধু এক কোটির বেশি থেকে ৫০ কোটি টাকার উপরে আমানত রয়েছে এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টিতে। এর মধ্যে ব্যক্তি যেমন আছেন, তেমনি আছে প্রতিষ্ঠানও। তবে ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি। আর হিসাবের মধ্যে সঞ্চয়ী আমানতের হিসাবই বেশি। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানত রয়েছে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকা। ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন হিসাব সংখ্যা ১ হাজার ৮২৪টি। এসব হিসাবে জমা রয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া ৭৫ লাখ টাকার বেশি থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত আমানত হিসাব রয়েছে ৭২ হাজারটি। এর বিপরীতে আমানত রয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যেও অনেক কোটিপতি রয়েছেন।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মার্চের তুলনায় জুনে ব্যাংকিং খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যই শুধু বাড়েনি। তাদের হিসাবে জমা আমানতের পরিমাণও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। জুন শেষে কোটিপতিদের হিসাবে মোট আমানত বেড়েছে সাড়ে ৪৪ শতাংশ। অথচ ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে এ কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র ১৯ হাজার। এখন তা বেড়ে লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর হিসাব রয়েছে ১৪ লাখ ৫৯ হাজার। এর বিপরীতে আমানত রয়েছে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে এক হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ৫১ লাখ। আর এসব হিসাবের বিপরীতে আমানত রয়েছে ৬ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। ৫ হাজার টাকার বেশি থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হিসাব রয়েছে ৫৬ লাখ ৬০ হাজার। এর বিপরীতে জমা আমানতের পরিমাণ ৪ হাজার ২৩ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে ক্ষুদ্র আমানতকারীর সংখ্যা বাড়লেও তাদের আমানত কমেছে। বেড়েছে বড় আমানতকারীর অর্থ। অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে জানা গেছে।