DMCA.com Protection Status
title="৭

তীব্র আর্থিক সংকটের মাঝেও ডিসি-ইউএনওদের জন্য কেনা হচ্ছে ২৬১ বিলাসবহুল গাড়ী!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  তীব্র আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে মিডনাইট হাসিনা সরকার। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় সংকোচনের নীতি ঘোষিত রয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকারি যানবাহন কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যেই জেলা প্রশাসক ও উপজেল নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জন্য ৩৮০ কোটি ৬৫ লাখ টাকায় ২৬১টি বিলাসবহুল জিপগাড়ী কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

কোনো দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে এসব দামি গাড়ি কিনবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর।

বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সাধারণত এ বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী নিজে কিংবা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। কিন্তু আজ কোনো ব্রিফ করা হয়নি।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বৈঠকে উপস্থাপিত এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা; মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও পরিবহন সেবা স্বাভাবিক রাখার জন্য এসব গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখতে যেসব গাড়ির আয়ুষ্কাল ১৪ বছর বা তদূর্ধ্ব এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে তার প্রতিস্থাপক হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনা হবে। 

জানা গেছে, ৮৮ কোটি টাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জন্য কেনা হবে ৬১ টি মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্ট কিউএক্স জিপ। প্রতিটি জিপের দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জন্য কেনা হবে ২০০টি একই গাড়ি কেনা হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটির দাম একই ধরে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।  

মতামত জানতে চাইলে  ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান  বলেন, প্রশাসনের জন্য এ ধরনের কেনকাটা স্বাভাবিক সময়ে হলে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হতো না। কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক থাকায় সরকার অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন নীতির ঘোষণা দিয়েছে। ফলে এ সময়ে নতুন গাড়ি কেনাকাটায় প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক।  সরকার যা প্রচার করছে তা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে কি–না সেই প্রশ্ন উঠবে।  

তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক প্রশাসনিক কার্যক্রম কিংবা আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে কর্মকর্তাদের তোষণের মাত্রা বাড়াতে, যে কারণেই হোক এ ধরনের কেনাকাটার দায় কিন্তু পড়বে জনগণের উপর। চলমানা আর্থিক সংকটের কারণে ইতোমধ্যেই জনগণ নাভিশ্বস অবস্থায় রয়েছে। এ জন্যই সরকার বারবার কৃচ্ছ্রসাধন বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার যখন নিজেই এ নীতি প্রয়োগ করছে না, তখন সাধারণ জনগণকেই এর মূল্য দিতে হচ্ছে।  

গত ২ জুলাই  একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে সব ধরনের গাড়ি কেনা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে পরিচালন বাজেটের আওতায়ও গাড়ি কেনা বন্ধ রাখতে বলা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ১০ বছরের অধিক পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় করার সুযোগ রাখা হয়। 

গত জুলাইয়ের শেষ দিকে গাড়ি প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত ব্যয়ের অনুমতি চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।চিঠিতে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের জন্য ৯৬টি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসের জন্য ৩৬৫টিসহ  মোট ৪৬১ গাড়ি কিনতে বাজেট বরাদ্দের অনুরোধ জানানো হয়। এ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে অর্থ বিভাগ ২৬১ টি গাড়ি কেনার পরামর্শ দেয়।  

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!