ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য এবং পাল্টা মন্তব্যে সহিংসতা মিশ্রিত থাকায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক তার এক প্রতিবেদনে এমনটাই তুলে ধরেছেন।
বলা হয়, বাংলাদেশে সম্প্রতি রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়ামের চালান প্রবেশ করেছে দেশের একমাত্র পরামাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পাবনার রূপপুরে। এ নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন বিরোধী দল বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সমালোচনার জবাবে ৯ অক্টোবর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে’ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন তাদের ‘মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে দেওয়া হবে’।
তিনি বলেছিলেন, ‘ইউরেনিয়ামের দুইটা চালান এসে গেছে। পুতিন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছেন। বাংলাদেশে সাংঘাতিক আলো ঝলমলে পরিবেশ হবে। এতে ফখরুলের অন্তর্জ্বালা, মঈনুদ্দিন খানের (মঈন খান) অন্তর্জ্বালা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছিলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তার নামে মেগা দুর্নীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি এবং জীববৈচিত্র্যকে চূড়ান্ত হুমকির সম্মুখীন করার জন্য, অপরিণামদর্শী শেখ হাসিনার সরকারকে একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।’
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইউরেনিয়াম এমন একটি রাসায়নিক, যেটি বিস্ফোরিত হলে মাইলের পর মাইলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবে।
বিএনপি নেতাদের এসব বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বলছি রূপপুর যারা বন্ধ করতে চায় সে ফখরুল, মঈন খানের মাথায় রাশিয়ার ইউরেনিয়াম ঢেলে দেব। দুই চালান এসেছে। সেটা আমরা কিছু ফখরুলের মাথায়, কিছু গয়েশ্বরের মাথায়, কিছু আব্বাসের মাথায়, কিছু মঈন ইউ আহমেদের (মঈন খান) মাথায়, কিছু রিজভী পাগলার মাথায়… যে লাফাবে মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠান্ডা করে দেব। ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করব না, ইউরেনিয়াম মাথায় ঢেলে ঠান্ডা করে দেব।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের থেকে এ ধরনের সহিংসতামূলক বক্তব্য খুবই সাধারণ। তারা প্রায়ই হামলার প্ররোচনা দেয়। সম্প্রতি এক সমাবেশে একজন মন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘কেউ হুমকি দিলে কী করতে হবে তা আওয়ামী লীগ জানে। যদিও কর্তৃপক্ষ সমালোচক এবং বিরোধী সদস্যদের বিচার খবুব দ্রুতই করে তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদেরে এ ধরনের সহিংসতা উস্কানির জন্য বিচারের আওতায় আনা হয় না।
এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সহিংসতামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। গত বছর তিনি বলেছিলেন, বিরোধী নেতাদের পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিক্ষোভের আগে শেখ হাসিনা তার দলের সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যেই হাত তোলা হবে তা ভেঙে ফেলতে হবে।
প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় সম্প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার বয়স তো আশির ওপরে, মৃত্যুর সময় হয়ে গেছে। বিএনপি কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
এই ধরনের বিবৃতিগুলো বাকস্বাধীনতাকে আরও শীতল করতে সফল হয়েছে কারণ বাংলাদেশ দ্রুত ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। যে দেশে নির্বাচনী সহিংসতার বেশিরভাগই দলীয় সমর্থকদের দ্বারা পরিচালিত হয়, সেখানে দলের নেতাদের এই ধরনের হুমকি আরও হামলার দিকে পরিচালিত করতে পারে। অতিতে বাংলাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় শতাধিক মানুষ মারা গেছে।
সরকার যদি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বারবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আন্তরিক হয়, তাহলে দলীয় নেতারা সহিংসতার হুমকি কমিয়ে এবং শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে শুরু করতে পারেন।
লেখক: জুলিয়া ব্লেকনার, সিনিয়র গবেষক, এশিয়া বিভাগ এবং গ্লোবাল হেলথ ইনিশিয়েটিভ