ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, নির্বাচন যদি সঠিকভাবে হয় তবেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো। যদি আমরা মনে করি সঠিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে না তখন আমরা ঘোষণা দিয়েই নির্বাচন বর্জন করবো। ঘোষণাটা আমাদের তরফ থেকেই আসতে হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। নির্বাচন নিয়ে কোনো একক সিদ্ধান্ত হবে না, প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়া হবে। গণমাধ্যমের সামনে ঘোষণা দেয়া হবে। আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছি।
শনিবার দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয়ে নিজের লেখা দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির সভাপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদেরের সভাপতিত্বে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
জি এম কাদের বলেন, দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের লোক, আমরাই বানিয়েছি। তারা কোনো ভুল করলে অবশ্যই আমরা বলবো। কথা বললেই শাস্তি পেতে হবে? সেজন্য আইন করা হবে? আমি ভুল বলতে পারি কিন্তু আমার বলার অধিকার তো আছে।
আমরা যেনো কথা বলতে না পারি সেজন্য আইন করা হচ্ছে। সরকার হচ্ছে কেয়ারটেকারের মতো, ভুল করলে পরিবর্তন করতে চাইবো না? বাংলাদেশের মানুষের এই অধিকার এখন আর নেই। গণতন্ত্র না থাকলে কোনো প্রকল্প গণমুখী হয় না তার প্রমাণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। বিবিসি’র দেয়া তথ্যে জানা গেছে, চার হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প, বছরে আয় করছে একশো কোটি টাকা। ১৫ বছর হচ্ছে এটার লাইফ। এটা কি বাস্তবসম্মত হলো? তাহলে আবার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্পের জন্য চুক্তি কেন? আসলে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নামে দুর্নীতির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। যেখানে বেশি দুর্নীতি করা যায় সেই প্রকল্প দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন হয়।
তিনি বলেন, রূপপুর বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়েও কথা আছে। ভারতে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ হয়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারে। অথচ একই কোম্পানীর ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের স্থাপনে ইতোমধ্যেই খরচ হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প। ইউরোপসহ অনেক দেশই এমন প্রকল্প বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে একটি দুর্ঘটনা হলে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের দেশে ভারতের চেয়ে তিনগুণ বেশী খরচে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আবার বরিশালেও না কি আরো একটি প্রকল্প তৈরি করা হবে। এমন দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করার অধিকার অবশ্যই আমাদের আছে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, যেসব দেশে একনায়কতন্ত্র থাকে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, স্থিতিশীল সরকার থাকলে অনেক উন্নয়ন হয়। এক সরকার বেশি দিন থাকলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা ঢেকে রাখতে পারে না। সরকার বা সরকারপ্রধান পরিবর্তন হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি অস্থিরতা সৃষ্টি না হয় তাকেই স্থিতিশীলতা বলা যায়। স্বৈরশাসনে কখনোই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। একটি সরকার বেশি দিন থাকাও অস্বাভাবিক ব্যাপার। একটি সরকার বেশি দিন থাকলে অস্থিতিশীলতার বীজ বড় হতেই থাকে।
এ সময় নিজের লেখা বই নিয়ে জিএম কাদের বলেন, শাসন পদ্ধতি থেকে মানুষ সুশাসন আশা করে। আইনের শাসন, আইন সবার জন্য সমান হবে। ন্যায় বিচার ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা হবে। সবাই যেনো মনে করে, আমরা ন্যায় বিচার পাচ্ছি। কেউ যেনো বঞ্চনা বা অত্যাচারের শিকার না হয়। রাজতন্ত্রে সকল ক্ষমতা রাজার হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে। রাজা ও তার পরিবার থাকে আইনের ঊর্ধ্বে। তাই রাজতন্ত্রে আইনের শাসন থাকে না। তাতে ন্যায় বিচার ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি সম্ভব নয়। ডিক্টেটরদের শাসনে ন্যায় বিচার ভিত্তিক শাসন পদ্ধতিতে কিছুটা সুশাসন হতে পারে কিন্তু আইনের শাসন সম্ভব নয়। এক নায়কতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়, এই শাসন ব্যবস্থা জনগণের জন্য ক্ষতিকর।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের বইয়ের প্রতিটি লেখা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে। এই ধরনের লেখা কালের স্বাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকে। একশো বছর পরও পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে দেশের বাস্তবতা কেমন ছিলো। তিনি বলেন, দেশের রাজনীতিতে গোলাম মোহাম্মদ কাদের একটি সুবাতাস নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি যেনো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকেন রাজনীতির মাঠে। পরবর্তী প্রজন্ম যেনো জানতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন ভদ্রলোকের অবির্ভাব হয়েছিলো।
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সিনিয়র সাংবাদিক সফিকুল করিম সাবু, শাহজালাল ফিরোজ ও বইয়ের প্রকাশক আবুল বাশার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।