DMCA.com Protection Status
title="৭

মুক্তির পরদিন নৌকা নিয়ে নির্বাচনে বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরঃবিএনপি থেকে বহিষ্কার

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাসে আগুন দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার একটি মামলায় বুধবার দুপুরে জামিন পান বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর-উত্তম। এদিন সন্ধ্যায় কারামুক্ত হন তিনি। পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার প্রসঙ্গে শাহজাহান ওমর বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি আরও উন্নত। তাই নৌকার হয়ে ভোট করবো।

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর পান্থপথের নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। শাহজাহান ওমর বলেন, আমি ভাবলাম, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে- বিশেষ করে জাতি ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে নির্বাচনে যাওয়া উচিত।  মাননীয় নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা) আমাকে নৌকা প্রতীক দেন, তাই আমি সিদ্ধান্তে নিয়েছি যে, আমি নির্বাচন করবো। আর আজ থেকে বিএনপি’র সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছি।
মনোনয়ন কী বৃহস্পতিবার জমা দিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জি শেষ মুহূর্তে জমা দিয়েছি। ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নির্বাচন করবো।

শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক দেয়া না হলে আপনি কী নির্বাচনে থাকবেন- এই প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, তাহলে কীভাবে থাকি।

আমি নৌকায় নির্বাচন করতে চাই। নৌকায় আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। এরপরে নেত্রী যেটা মনে করেন। 

কোনো চাপে পড়ে এই সিদ্ধান্ত নিলেন- এমন প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, আমার চাপ কিসের? আর আমার জামিন করছেন তো বিএনপি’র মাসুদ আহমেদ তালুকদার।  
শাহজাহান ওমর বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপি’র নির্বাচনে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু যায়নি। আর ২০১৮ সালে মিসটেক। এবার যাওয়ার উচিত ছিল। যাওয়ার পরে দেখা যেতো যে কী হয়।
আরেক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার শর্তে আমাকে মুক্তি দেয়া হয়নি। আর বিএনপি থেকে আর কেউ নির্বাচনে যাবে কিনা তা আমি জানি না।
বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা বিষয়ে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার দেখা হতেই পারে। আমি দেখা করতেই পারি। 

শাহজাহান ওমর আরও বলেন, বিএনপি এবার নির্বাচনে যাচ্ছে না। যে শর্তগুলোর কথা তারা বলছে, এটা তো কারও পক্ষে ১০০ ভাগ মানা সম্ভব না। এরপরও আমি ভাবছিলাম যে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিবে এবং ২৮শে অক্টোবরের ঘটনায় যেসব রাজনৈতিক মামলা দায়ের করেছে, যারা কিছু করে নাই তাদের সেসব মামলা থেকে বাদ দিবে। একজন পুলিশকে হত্যা করা হলো, কারা করলো এটা? আমরা এটা খুঁজে পাই না। 

তিনি বলেন, বিএনপি রাজনীতি কি ইয়াং ছেলেরা কট্রোল করবে? না অভিজ্ঞ, মেধা, রাজনৈতিক সচেতন যারা তারা রাজনীতি করবে। এখানেই আমার দ্বন্দ্ব। অনেকে যারা রাজনীতিতে সচেতন, অভিজ্ঞ, রাজনৈতিক চর্চা করে এবং রাজনৈতিক ভাষা জানে তারা রাজনীতিতে নাই। রাজনীতিতে আছে কচি-কাঁচার দল। আমি অ্যাডজাস্ট করতে পারি না। ৭৭ বছর বয়স হয়েছে। এবার নির্বাচনে গেল না! আর কবে নির্বাচনে যাবে? 

বিএনপিকে নির্বাচনে অংগ্রহণ করতে বলেছিলেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাকে অফার করা হলো, আপনি নির্বাচন করেন। আমি বললাম আমি কীভাবে নির্বাচন করবো? আমার দল তো করবে না। বললো যে, আপনি নিরপেক্ষ নির্বাচন করেন। এটা তো কোনো পক্ষই না। আমি বলেছি, সম্ভব না। আর আমি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। উনি খুবই ভালো মানুষ। জিয়াউর রহমানের রাজনীতি ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে আসা আমি মনে করি যে, এটা প্রমোশন। কারণ জিয়াউর রহমানের রাজনীতির চেয়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি উন্নত। বলতে পারনে অতিতে কেন করেন নাই। কারণ আমি যখন রাজনীতি করি তখন তো আওয়ামী লীগ ছিল না। এরপরে এরশাদও আমাকে ডেকেছেন। ১৯৮৪ সালে আমাকে মন্ত্রী হওয়ার অফারও করেছেন। কিন্তু এরশাদের দলে আমি যাইনি।   

শাহজাহান বলেন, ২০২২ সালের ২৬শে জুন আমাদের মহাসচিবের কাছে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। বিএনপি’র রাজনীতি করবো না। আমি রাজনীতি করবো না বলে এই রিটায়ারমেন্ট লেটার দিয়েছিলাম। কারণ পরিবেশ ভালো লাগে না। 

চিঠি কি দল গ্রহণ করে নাই- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি দিয়ে এসেছি। এরপরে তো আমি বিভিন্ন কর্মসূচিতে গিয়েছি এবং বক্তব্য দেয়াসহ সবই করেছি। আমি কিন্তু বলি মহাসচিব ভালো লোক। আমি আর কাউকে মূল্যায়ন করি না। তারপরে ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও ভালো লোক। মির্জা আব্বাসও ঠিক আছে। এদের সঙ্গে রাজনীতি করা যায়। 

শাহজাহান ওমর বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমার শিক্ষক ছিলেন। আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। উনার ডাকে আমি সাড়া দিয়েছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। খুব ভালো জানেন। উনার সঙ্গেও রাজনীতিতে একসঙ্গে ছিলাম। একজন ফ্রিডম ফাইটার আমার অহংকার। এর সঙ্গে বর্তমান রাজনীতি যায় না। এজন্য আমি বারবার বলেছি, আমি রাজনীতি করবো না। মহাসচিব বারবার বলেছেন, ভাই আমাদের ছেড়ে যাবেন না। কতোভাবে আর কি করা যায়? 

মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন গতকাল ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেন বলেও জানান শাহজাহান ওমর।
এদিকে বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই শাহজাহান ওমরকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাহজাহান ওমর দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। সুতরাং বিএনপি’র গঠনতন্ত্র মোতাবেক তাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

গত ৪ঠা নভেম্বর রাজধানীর একটি বাসা থেকে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমরকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন তাকে ৪ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। এরপর গত ৯ই নভেম্বর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবন ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ সদস্য হত্যা ও অগ্নিসংযোগের নির্দেশদাতা হিসেবে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!