DMCA.com Protection Status
title="৭

বিএনপি-মুক্ত নির্বাচনে ডামি প্রার্থীরা শেখ হাসিনাকে কতটা সাহায্য করবে?

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  প্রতিবেশী বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ০৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ডামি প্রার্থীদের নির্বাচনের অতিরিক্ত অংশ থেকে মূলধারায় পরিণত করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদেশ দিয়েছেন যে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারবেন না; যদি কোনো বিরোধী প্রার্থী না থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে একজন ডামি প্রার্থী আছেন এবং বৈধ বিজয়ী হতে হলে তাকে ভোটে পরাজিত করতে হবে।

   সংক্ষেপে বললে, প্রধান বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেওয়ায় মেঘাচ্ছন্ন এই নির্বাচনের বৈধতা দিতে ডামি প্রার্থীদের মোতায়েন করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বিএনপি চায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। আওয়ামী লীগ বলেছে সেটা হবে অসাংবিধানিক।

কিন্তু, বিএনপির বয়কট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলেছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যখন চীন-বান্ধব এই দেশটিতে নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে তা স্ক্যান করা শুরু করেছে। হ্যাঁ, সহজে বললে এটাই বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ: বেইজিংয়ের সাথে ঢাকার নৈকট্য এবং বাংলাদেশে চীনের বিপুল বিনিয়োগ।

আমেরিকান তীক্ষ্ণদৃষ্টি বদলানোর জন্য ডামিদের মোতায়েন করা আওয়ামী লীগের কৌশল বলে মনে হচ্ছে যাতে নির্বাচনের জোরদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বলে মনে হয়, এমনকি এটি সত্যিই যদি একটি আন্তঃদলীয় বিষয়েও পরিণত হয়।

কিছু পরিসংখ্যান পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ৩০০ আসন রয়েছে। দেশটিতে ৪৪ টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। এই দলগুলোর মধ্যে ১৫টি দল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার (বর্তমানে গৃহবন্দী) বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। এই ফ্রন্ট ২০১৪ সালের মতোই নির্বাচন বর্জন করছে। সুতরাং, নির্বাচনে লড়ছে এমন দলের সংখ্যা প্রায় ৩০।

 

তাদের মধ্যে ১৪টি দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট গঠন করেছে।

দ্য ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া ২,৭৪১টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ২৯৮টি আওয়ামী লীগের, ৭৪৭টি স্বতন্ত্রদের; বাকিগুলো জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, কল্যাণ পার্টি সহ অন্যান্য দলগুলোর।  ০৭ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চূড়ান্ত প্রার্থীদের সংখ্যা ১৭ ডিসেম্বরের পরেই প্রকাশ পাবে। ওইদিন মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ।

আওয়ামী লীগের ২৯৮ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও দলটি থেকে টিকিট প্রত্যাশীদের সংখ্যা ছিল ৩,৩৬৯ জন। মনোনয়নগুলো ৩ হাজারেরও বেশি দলীয় সদস্যকে হতাশ করেছে, যাদের মধ্যে ৭১ জন বর্তমান সংসদ সদস্য রয়েছেন। তাই শেখ হাসিনা ডামি প্রার্থীদের উৎসাহিত করলে সেখানে ছত্রভঙ্গ অবস্থা হয়। ৭৪৭ জন স্বতন্ত্রের মধ্যে ৪৪০ জন আওয়ামী লীগের সদস্য বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য।

যাই হোক, ডামিদের শুধু ডামি বলেই মনে করা হয়, বিদ্রোহী প্রার্থী নয়।

আওয়ামী লীগের সকল সদস্য যারা ডামি হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন তাদের প্রতি অবশ্যই দলের আশীর্বাদ রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে অনেকের যন্ত্রণা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কিছু ডামি প্রার্থীর বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমে  বলা হচ্ছে, তারা হেরে যাওয়ার জন্য নির্বাচনে লড়ছেন না।

যদিও ডামিদের আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ থাকতে হয়, কিছু স্বতন্ত্র রয়েছেন যারা ক্ষমতাসীন দলের সাথে যুক্ত নন। রিপোর্ট বলছে যে, এই ধরনের অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়াতে জোরপূর্বক গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা তাদের মনোনয়ন জমা দিতে প্ররোচিত করা হয়েছিল।

যদি বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র এবং/অথবা ডামি প্রার্থী নির্বাচিত হন, তাহলে? লন্ডন-ভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক কামাল আহমেদ লিখেছেন: "অস্বাভাবিকভাবে বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র নির্বাচিত হলে কৌশলটি 'ব্যাকফায়ার' করতে পারে। এতে অসন্তুষ্ট মিত্র এবং দলীয় বিদ্রোহীরা  এক হতে পারেন এবং শক্তিশালী ব্লক গঠন করতে পারেন, যার ফলে ক্ষমতাসীন জোটে বৃহত্তর বিভক্তি ঘটতে পারে।"

কিন্তু, আওয়ামী লীগ এমন পরিণতি নিয়ে চিন্তিত নয়। দলটির ফোকাস হল এমন একটি নির্বাচন এড়ানো যা কঠিন লড়াই বলে মনে হয়। বাংলাদেশ জানে যে বিশ্ব চোখ রাখছে।

বিশ্ব চোখ রাখছে

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশকে স্ক্যান করা হচ্ছে। তিনি ২০১১ সালে সংবিধান থেকে সেই নিরপেক্ষ সরকারের বিধান সরিয়ে দিয়েছিলেন। যার কারণে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন বিরোধীরা বয়কট করেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল কিন্তু নির্বাচনের আগের রাতে কারচুপির ব্যাপক রিপোর্ট ওই ফলাফলের উপর গভীর ছায়া ফেলেছিল।

২০১৮ সাল থেকে বেইজিং এবং মস্কোর সাথে ঢাকার নৈকট্য বৃদ্ধি পেয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় মস্কোর বিষয়টির স্পষ্ট প্রদর্শন হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রকে অস্বস্তিকর করে তুলেছিল এবং মে মাসে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য দেশটি নতুন ভিসা নীত আরোপ করে। যার ফলে, বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হবে।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন। শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছে চীন এবং রাশিয়া। ভারত এই বিতর্কে নিজেকে 'লো প্রোফাইল' রেখেছিল যতক্ষণ না তাকে একটি অবস্থান নিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নভেম্বর মাসে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত টু প্লাস টু বৈঠকে বাংলাদেশের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল কিন্তু যৌথ বিবৃতিতে সেটি উল্লেখ করা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা যেটিকে মতের পার্থক্য বলছেন।

বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে, পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা অবশ্য ভারতের অবস্থান তুলে ধরেন। "বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বাংলাদেশের জনগণই নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং অংশীদার হিসেবে আমরা সেখানকার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকে সম্মান করি এবং একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল জাতি হিসেবে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করা অব্যাহত রাখব।"

ভারতের কাছে প্রতিবেশী অঞ্চলের স্থিতিশীলতা এবং মার্কিন চাপের মুখে বিদ্রোহ ও মৌলবাদ দমনে কথা রেখেছে এমন সরকারই দিন শেষে জয়ী। ভারত ০৭ জানুয়ারির নির্বাচন এবং নির্বাচনের ফলাফল খুব ভালোভাবেই দেখবে। ডামি হোক বা না-ই হোক।

[মনিদীপা ব্যানার্জির এই নিবন্ধ আজ ১৩ ডিসেম্বর ভারতের ইংরেজি দৈনিক ‘ডেকান ক্রনিকল’ এ ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে]

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!