ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ৪৪ দিনে আদালতে ১২৩১ নেতা-কর্মীর বিচারের রায়। প্রতিদিন ২৮ বিএনপি নেতার কারাদণ্ড।
রাজধানীতে রাজনৈতিক ইস্যুতে সহিংসতার অভিযোগ এনে ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের পাঁচটি মামলায় বৃহস্পতিবার বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের আরও ১৩৫ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে গত ৪৪ দিনে বিএনপি-জামায়াতের ৬৯ মামলায় এক হাজার ২৩১ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদলত।
২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়ের হওয়া ৬৯ মামলায় চলতি বছরের ৭ নভেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ২৩১ জন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হলো।
বিনা অনুমতিতে রাস্তায় জমায়েত, নাশকতা, সম্পদের ক্ষতি করা, যানবাহনে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তুরাগ থানায় করা একটি নাশকতার মামলায় বিএনপির ৯৩ নেতাকর্মীকে দুই ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শেখ সাদী এ কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে কোনো আসামি উপস্থিত ছিলেন না।
বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের ৮ সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন— বিএনপির তুরাগ শাখার সভাপতি আতিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সালাম, উত্তরা পশ্চিম শাখার সভাপতি কুদরত-ই-এলাহী লিটন ও জামায়াতের তুরাগ শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তুরাগের ধউর এলাকার কাছে বিএনপি-জামায়াতের একদল নেতাকর্মী অবৈধভাবে জড়ো হয়। এর পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়ে, দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় মামলা করেন উপপরিদর্শক মো. বুরজাহান।
একই দিন ঢাকার আরেকটি আদালত ২০১৩ সালের নভেম্বরে বংশাল এলাকায় রাজনৈতিক সহিংসতার দায়ে ১৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।
এ মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন। রায় দেওয়ার সময় দুই আসামি আদালতে ছিলেন।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার চার্জশিটভুক্ত বাকি ৪৭ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। মামলার বিচার চলাকালে মোট ১৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ মোহন ও যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক আলী সরকার রয়েছেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর বংশালের নবাব ইউসুফ সুপার মার্কেটের সামনে একদল বিএনপি নেতাকর্মী জড়ো হন। তারা ককটেল বিস্ফোরণ, একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। এ ঘটনায় বংশাল থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।
এছাড়া ২০১৮ সালের নভেম্বরে সূত্রাপুরে রাজনৈতিক সহিংসতার দায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিম ৮ বিএনপি কর্মীকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেন। মামলার বিচার চলাকালে মোট ৬ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনের রাস্তায় বিনা অনুমতিতে রাস্তায় জড়ো হন বিএনপির একদল নেতাকর্মী। পরে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়। এ ঘটনায় এসআই মো. হাফিজুল্লাহ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন।
রাজপথে বিনা অনুমতিতে একত্রিত হওয়া এবং পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর হাজারীবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার ঢাকার আরেকটি আদালত ছয় বিএনপি নেতাকর্মীকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবির এ রায় দেন। মামলাটিতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিটভুক্ত বাকি ৫১ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
এ ছাড়া একই দিন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার জন্য অক্টোবর ২০১৮ সালে রামপুরা থানায় করা একটি মামলায় ১৩ জামায়াত কর্মীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের চারজন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দেন।