ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় আহত দলের নেতাকর্মী ও গণমাধ্যম কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। আহতদের চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে দলটি। আহতদের সার্বক্ষণিক শারীরিক খোঁজখবর নিচ্ছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। এ ছাড়া দলটির স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামও হাসপাতালে নিজে উপস্থিত থেকে আহতদের চিকিৎসার দেখভাল করছেন। গত ১৩ই আগস্ট ঝিনাইদহের যুবদল নেতা লিটন মণ্ডলের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে লিটনের দুই হাত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ও পিটিয়ে দুই পা ভেঙে দেয়। ওইদিনই তাকে দ্রুত রাজধানীর আল মানারাত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টাব্যাপী চলে তার অপারেশন।
চিকিৎসকরা ঝুলে থাকা তার হাত কেটে ফেলে দেন। লিটনের পুরো চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তারেক রহমান। একইসঙ্গে সার্বক্ষণিক তার ও পরিবারের খোঁজখবর রাখছেন।
দুই হাতবিহীন পঙ্গু লিটন এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। গ্রামের বাড়িতেই অনেকটা ঘরবন্দি জীবন কাটছে তার। লিটন বলেন, উপরে আল্লাহ আর নিচে তারেক রহমান ছিলেন, যে কারণে আমি এখনো বেঁচে আছি। ৯ ঘণ্টা অপারেশন চলাকালে এক ঘণ্টা পরপরই তারেক রহমান স্যার আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে সান্ত্বনা দিয়েছেন। এক-দু’দিন পরপরই তিনি আমাকে ফোন দেন, আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ডা. রফিক স্যার নিজে হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। গত ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে কেন্দ্র ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে হবিগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওইদিন পুলিশের গুলিতে আহত হন মাইটিভি’র হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি নিরঞ্জন গোস্বামী। পুলিশের ছোড়া শটগানের তিনটি ছররা গুলি নিরঞ্জনের চোখে, মুখে ও গলায় বিদ্ধ হয়। একটি গুলি চোখের রেটিনা পার হয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। আরেকটি গুলি চোখের পাতার নিচে ও গলায় বিদ্ধ হয়। দ্রুত তাকে রাজধানীর দয়াগঞ্জের ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চোখে লেজার অপারেশন করা হয়। তবে গুলি বের করা যায়নি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার চোখের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত চোখের রেটিনাতে জেল দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চোখ দিয়ে দেখতে পারছেন না। নিরঞ্জন গোস্বামী মানবজমিনকে জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমি সেন্সলেস ছিলাম। পরে জানতে পারি- আমাকে যেসব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল সবগুলো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে আমার সার্বিক খোঁজখবর নিয়েছেন বিএনপি’র স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। তিনি আমাকে আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন। এ ছাড়া, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শামী আক্তার, এনামুল হক সেলিম আমাকে সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি খোঁজখবর নিয়েছেন। ২০২১ সালের ২২শে ডিসেম্বর কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের গুলিতে আহত হন হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদল নেতা সাইদুর রহমান। একটি গুলি তার ডান চোখে বিদ্ধ হয়। ওই চোখটি একেবারে ড্যামেজ হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত চোখে এখন আর দেখতে পারেন না তিনি। আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়ে দেড় মাস কারাভোগ করেন তিনি। সাইদুর রহমান মানবজমিনকে জানান, আমার চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠান বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ ছাড়া আমার চিকিৎসার সার্বিক দেখভালের জন্য ডা. রফিক ভাইকে দায়িত্ব দেন।
এদিকে গত ২২শে জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশের মঞ্চ ভেঙে আহত হন বাংলা টিভির প্রতিবেদক শিউলি আক্তার। তার পায়ের পাতার তিনটি হাড় ভেঙে যায়। এরপর তিনি রাজধানীর মেডিনোভা হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এখনো তাকে লাঠিতে ভর করে হাঁটতে হয়। পায়ের ফোলা কমেনি। সাংবাদিক শিউলি বলেন, আমার আহত হওয়ার খবর পেয়ে বিএনপি’র স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিক ভাই বাসায় আসেন। আমার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এম্বুলেন্সে করে বাসা থেকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। এ ছাড়া বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ফোনে লন্ডন থেকে আমার সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে দুর্ঘটনায় এক পা হারানো বাকেরগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা নাহিদ হাসান শাওন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই গত বছরের শেষদিকে বরিশাল বিভাগীয় বিএনপি’র সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশে পা-বিহীন শাওনের ছবি দেখে সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন তারেক রহমান। দ্রুত তাকে ঢাকায় এনে মোহাম্মদপুরের ব্র্যাক সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি করান দলটির স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। চিকিৎসকরা অপারেশন করে তার কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেন। শাওন মানবজমিনকে বলেন, বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বাকেরগঞ্জের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক পা হারিয়ে ফেলি। এক পা দিয়ে খুঁড়িয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলাম। এটা দেখে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। এবং সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেন। কৃত্রিম পা লাগানোর পর এখন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারি।
বিএনপি’র স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের হামলায় আহত বিএনপি নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বিএনপি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখনই দলের কোনো নেতাকর্মী আহত হওয়ার খবর পান সঙ্গে সঙ্গে তার সার্বিক খোঁজখবর নেন। তার আন্তরিক ব্যবহারের কারণেই তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিএনপি’র প্রতি এত নিবেদিতপ্রাণ।