ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে গত শুক্রবার মাইকিং করে স্থানীয় বস্তিবাসীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় ভোটার আইডি, বয়স্ক ভাতা কার্ড। এ সময় অনেকেই তাদের ভোটার আইডি কার্ড, বয়স্ক ভাতা এবং রেশন কার্ড নিয়ে বউবাজার এবং জামাইবাজারের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় ক্লাব ও দোকানে হাজির হন। সেখানে বসে কার্ড সংগ্রহ করার পাশাপাশি তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়। এরপর একটি স্ল্লিপ ধরিয়ে দেয়া হয় যেটা দিয়ে তারা ভোটের দিন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন বলে জানানো হয়। ভোটারদের কেউ কেউ আবার তাদের কার্ড দিতে রাজি হননি এবং আসেননি। এ বিষয়ে বস্তির এক ব্যক্তি বলেন, শুক্রবার কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে মাইকিং করে ভোটারদের তাদের আইডি কার্ড নিয়ে আসতে বলা হয়। পরে তার দোকানে বসে ভোটার আইডি কার্ড ও হাতের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়। পরে আগতদের একটি স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হয়। এভাবে অনেকের আইডি কার্ড নেয়ার পর এক পর্যায়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট এর মেশিন কাজ না করায় তারা চলে যান। কড়াইল বস্তির বউবাজারে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন মো. হামিদ।
তিনি জানান, আমার কাছে ভোটার আইডি কার্ড চেয়েছিল। দেইনি। জাতীয় পরিচয়পত্র আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এটা যে কেউ চাইলেই আমি কেন দিবো। বউবাজারেই রিকশা চালান মো. মনির।
তিনি বলেন, আমি অন্য এলাকায় থাকি। একটি গার্মেন্টস এর সুপারভাইজার ছিলাম। চাকরি চলে যাওয়ার পর রিকশার ব্যবসা শুরু করি। পরে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর নিজেই রিকশা চালানো শুরু করি। তিনি বলেন, শুক্রবার মাগরিবের পর স্থানীয় কাউন্সিলর এলাকায় আসেন। এর আগে এলাকায় মাইকিং করে বলা হয় যারা বয়স্ক ভাতা, রেশন সুবিধা পান তারা যেন এসব কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে হাজির হন। তাদের সঙ্গে কাউন্সিলর কথা বলবেন। সন্ধ্যার পর কাউন্সিলর এলে তিনি এসব সুবিধাপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলেন। এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার কথা বলেন। না হলে পরবর্তীতে তারা এই সুবিধা পাবেন না। বউবাজারে শুঁটকির দোকানি আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, আমার মেয়ের নাম রেখা।
গত নির্বাচনে একইভাবে তার মেয়ের ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে যায়। পরে ভোটের পরদিন ফেরত আসার সময়ে আইডি কার্ডটি চেয়েও ফেরত পাননি। এখন পর্যন্ত তার কার্ডটি আমরা বুঝে পাইনি। তিনি বলেন, শুক্রবার মাইকিং করে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে দোকানে আসতে বলেছিল। আমি আসিনি। আমার আঙ্গুলের ছাপ মেলে না। তাই আসিনি। চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন প্রবীণ। তারা বলেন, আমাদের কাছেও আইডি কার্ড চাওয়া হয়েছিল। ফটোকপি দিয়েছি। মূল কপি দেইনি। ভোটই দেবো না। আইডি কার্ড কেন দেবো। কার্ড দেবো না এটা সরাসরি বলার সাহস আমাদের নেই। তাই নানা অজুহাতে কার্ড দেইনি বলে জানান আড্ডায় থাকা অপরজন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এর ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমানকে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা একটি পরিসংখ্যান তৈরি করছি। টিএন্ডটি এবং কড়াইল বস্তি এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ২৭ হাজার। কিন্তু আমরা যখন ভোট কাস্ট করতে যাই তখন ভোট পড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ। অর্ধেকেরও বেশি ভোটার থাকে না। তাই মাইকিং করার পদ্ধতিটি অবলম্বন করেছি। ভোটার যারা মারা গেছেন, চলে গেছেন এবং যারা নেই এই ভোটার আমরা টানতে রাজি না। এই বদনাম-অপবাদ আমরা আর গায়ে নিতে রাজি না। এদিন মাইকিং করে ভোটারদের তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপিসহ উপস্থিত হতে বলেছিলাম। এমনিতেই আমাদের অনেক দোষ। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কলঙ্ক রটানো হয়। তিনি বলেন, বয়স্ক ভাতা কিংবা রেশন কার্ডের কথা বলা হয়নি। জাতীয় পরিচয়পত্রের কথা বলা হয়েছে। আমার বক্তব্যে সেটা স্পষ্টভাবে বলা আছে। আমরা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়েছি। বয়স্ক ভাতা এবং রেশন কার্ড কেউ প্রতারণা করে নিয়ে থাকতে পারে।